v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীনের কূটনীতির ৩০ বছর
2008-12-15 18:41:29

উ চিয়ান মিন

    চীনের প্রবীন কূটনীতিবিদ উ চিয়ান মিন একদিন তাঁর বক্তৃতায় চীনের শীর্ষ নেতা হু চিন থাওয়ের উত্থাপিত 'সুষম বিশ্ব' ব্যাখ্যা করার সময় বলেছেন, 'একজন সংবাদদাতা একদিন আমাকে প্রশ্ন করেছেন যে, আপনি সহজ ভাষায় সুষম বিশ্বের অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারেন কিনা? এর উত্তরে আমি বলেছি, সুষম বিশ্ব মানে চীনারা আশা করেন, চীন ভালো থাকবে এবং সারা বিশ্বও ভালো থাকবে।' এ কথায় এক বিশাল মহান দেশের মহত্ আদর্শ ফুটে উঠেছে।

    ১৯৭৮ সাল থেকে শুরু হওয়া সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সঙ্গে সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক ক্ষেত্রও বৈপ্লবিক সংস্কার ঘটেছে। মতাদর্শগত কূটনীতি বাস্তব কূটনীতিতে, একক কূটনীতি বহুমুখী কূটনীতিতে এবং 'তৃতীয় বিশ্ব' বিষয়ক তত্ত্ব 'সুষম বিশ্ব' বিষয়ক তত্ত্বে পরিবর্তিত হয়েছে। ৩০ বছরে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে চীনের কূটনীতি সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।

    চীনের কূটনীতির ইতিহাস পড়লে জানা যায়, গত শতাব্দীর ৭০'র দশকে চীন জাতিসংঘে ফিরে যাওয়ার প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক ব্যাপারে চীনের যথেষ্ঠ মন্তব্য করার অধিকার ছিলো না। কেউ কেই মজা করে বলেছিলো, তখন চীন জাতিসংঘে 'পঞ্চম ধরণের ভোটদান পদ্ধতি' আবিষ্কার করেছে। সাধারণতঃ জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা ভোট দেন কেবল তিনটি পদ্ধতিতে। তা হচ্ছে স্বপক্ষে, বিপক্ষে ও ভোটদানে বিরত থাকা। সান ফ্রান্সিস্কো সংবিধান প্রণয়ন সম্মেলনে 'জাতিসংঘ সনদে' লিপিবদ্ধ ভেটো প্রয়োগের বিরুদ্ধে যে চতুর্থ পদ্ধতি বের হয়েছে, তা হলো ভোট না দেয়ার মাধ্যমে অসন্তোষ প্রকাশ করা। চীনের 'পঞ্চম পদ্ধতি' হলো ভোটদানে অংশ নেয়, কিন্তু কোন পক্ষে ভোট দেয় না, কারো বিরোধিতা করে না এবং ভোটদানে বিরতও করে না।

    এ থেকে বুঝা যায়, তত্কালীন চীনের আন্তর্জাতিক অবস্থান কি রকম ছিলো। সেই সময় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দেশগুলো স্নায়ু যুদ্ধে লিপ্ত ছিলো। চীনের পররাষ্ট্র নীতিও এ পটভূমি থেকে পৃথক হতে পারে না। ফলে চীন কেবল সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো এবং এশিয়া, আফ্রিকা ও লাটিন আমেরিকান দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার ওপর গুরুত্ব দিতো, আন্তর্জাতিক ব্যাপারে তেমন অংশগ্রহণ করতো না।

    ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১১তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নতুন যুগ উন্মোচন করেছে। চীনের ইতিহাসে এ মহান সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ অভূতপূর্ব। এর কারণে আধুনিক চীন ও বিশ্বের সম্পর্কের ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটেছে। বিশ্ব ছাড়া চীনের উন্নয়ন সম্ভব নয়। চীনকে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় এবং বিশ্বের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হয়।

    চীনের প্রয়াত নেতা তেং সিয়াও পিং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও সমসাময়িক যুগের গতিধারা নতুন করে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করার ভিত্তিতে যে এক বিখ্যাত অভিমত প্রকাশ করেছেন, তা হলো শান্তি ও উন্নয়ন হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের দুটি বৃহত্ বিষয়। বিশ্ব যুদ্ধ যে এড়ানো যায় না তা সত্য নয়। এ অভিমত চীনের কূটনৈতিক নীতির ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ বিন্যাসের ভিত্তি স্থাপন করেছে। এ সম্পর্কে চীনের কূটনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ওয়াং ফান বলেছেন, 'সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চীনকে নতুন যুগের চরিত্র উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে। এখন চীন মনে করে, শান্তি ও উন্নয়ন যুদ্ধ ও বিপ্লবের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে। চীনের কূটনীতির দায়িত্বও এর সঙ্গে বদলে গেছে। নতুন যুগে চীনের কূটনীতির দায়িত্ব হলো চীনের উন্নয়নের জন্য এক সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলা। এর ফলে চীন আন্তর্জাতিক পরিবারের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যে পরিণত হয়েছে এবং চীন ও বিশ্বের অধিকাংশ দেশের নিয়তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত হয়েছে।' চীনের কূটনীতি তখন থেকে এক সম্পূর্ণ নতুন যুগে প্রবেশ করেছে।

1 2
  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China