v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
এমেই ও লেশান পাহাড়ের তীর্থ যাত্রা
2008-10-20 15:29:10

প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা আপনারা এখন শুচ্ছেন সিআরআই'র বিশেষ জ্ঞান যাচাই সম্পর্কিত অনুষ্ঠান 'সিছুয়ানের সৌন্দর্য'। পরিবেশন করছি আমি আবাম ছালাউদ্দিন। শ্রোতাবন্ধুরা আজকের তৃতীয় পূর্বে আমি আপনাদেরকে সিছুয়ান প্রদেশের এমেই পাহাড় ও পাহাড়ের বৌদ্ধ ধর্মীয় সংস্কৃতির কিছু কথা জানাবো। প্রথমে আমি দু'টি প্রশ্ন রাখবো। এক নম্বর প্রশ্ন হচ্ছে এমেই পাহাড় চীনের একটি বিখ্যাত্ বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থান কীনা? দুইঃ লেশান বুদ্ধ মুর্তী বিশ্বের বৃহত্তম কীনা এবং তার উচ্চতার কত? এই দু'টি প্রশ্নের উত্তর আজকের অনুষ্ঠান মনোযোগ দিয়ে শুনলে সহজেই আপনারা পেয়ে যাবেন।

এমেই পাহাড় চীনের প্রথম পাহাড় বলে পরিচিত। চতুর্থ শতাব্দীতে ভারতের ভিক্ষু বাও চাং এমেই পাহাড়ে ভ্রমণের পর চেনতানের প্রথম পাহাড়ের কথা বলেন। চেনতান মানে সূর্যো দয়ের এলাকা। প্রাচীন হিন্দী ভাষায় প্রাচীন চীনকে সম্মান করে বলা চেনতান হতো। এরপর এমেই পাহাড় চীনের প্রথম পাহাড় বলে আখায়িত হয় এবং তার খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

চীনের বিখ্যাত্ পাহাড়গুলোর মধ্যে এমেই পাহাড় সমুদ্র সমতল থেকে ৩ হাজার মিটারের বেশি উচু। পাহাড়ের শৃংগ ও সমতনের আবহাওয়ার অনেক ব্যবধান রয়েছে। সেজন্য বিভিন্ন উদ্ভিদের বেঁচে থাকার পরিবেশ সেখানে বিদ্যমান। জানা গেছে, এমেই পাহাড়ে ৫হাজারেরও বেশি ধরণের উদ্ভিদ রয়েছে। এ সংখ্যা হল সারা ইউরোপের উদ্ভিদের মোট ধরণের সংখ্যার প্রায় সমান। এর মধ্যে বিশ্বের মূল্যবান উদ্ভিদও রয়েছে। এমেই পাহাড়ে নানা স্থানে বহুদিনের পুরনো গাছ রয়েছে। ভূমি থেকে আকাশের দিকে তাকালে দু'চোখে জুড়ে হালকা ও গভীর সবুজে ভরে

যায়। ঋতু, পরিবর্তন কালেপাহাড়ে পরিস্থিতি আবহাওয়া জানিত কারণে এমেই পাহাড়ে দৃশ্য পাল্পে যায়। এক এক সময় তা এক এক রঙের রূপ ধারণ করে। আসলে এমেই এই নাম থেকে এই পাহাড়ের বিভিন্ন সুন্দর দৃশ্যের কথা বোঝা যায়। চীনের প্রাচীন বইতে লেখা রয়েছে, এমেই'র অর্থ হল কুমারীর ভ্রূপল্লব।

এমেই পাহাড়ের বৈশিষ্ট বৌদ্ধ সংস্কৃতির একনিষ্ঠ বহিংপ্রকাশ। প্রথম শতাব্দীতে এমেই পাহাড়ে চীনের প্রথম বৌদ্ধ ধর্মীয় মন্দির নির্মিত হয়। কাছাকাছি আরো কয়েকটি মন্দির নির্মাণের কলে এমেই পাহাড় চীনের একটি প্রধান বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থানে পরিনত হয়। এমেই পাহাড়ে তীর্থযাত্রীদের আসা-যাওয়া কখনই বন্ধ থাকে না।

এমেই পাহাড়ের মন্দিরগুলোতে ফুসিয়ান বুদ্ধকে রাখা হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মে বলা হয় ফুসিয়ান বুদ্ধ হল বুদ্ধের রড় ছেলে। যেখানে বুদ্ধ আছেন, সেখানে ফুসিয়ান বুদ্ধও রয়েছেন। বর্তমানে এমেই পাহাড়ে পুরুষ ও নারী ভিক্ষু মিলে প্রায় ৩শো জন রয়েছেন। এখানে ৩০টি মন্দির রয়েছে।

এমেই পাহাড়ে ভ্রমণের সময় সহজেই মন্দির দেখা যায়। এসব মন্দিরের বয়স এমেই পাহাড়ের মতই প্রাচীন। এসব মন্দির পবিত্র তার প্রতিক। সৌভাগ্যবান হলে আপনি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান দেখতে পারেন।

সোনালী শৃংগ হল এমেই পাহাড়ের মূল স্থান। মন্দিরের তিনটি জার্কজমকপূর্ণ হল ছাড়া, ৪৮মিটার উঁচু সোনালী বুদ্ধ মুর্তি সত্যিই চোখ ঠাঠানো চিন্তাকর্ষক। গাইড ইয়াং থাও বলেন, 'ফুসিয়ান নামের এ বুদ্ধ মূর্তির হাতে রুই রয়েছে, মাথায় সোনালী বায়ুস পরা ও চেহাড়ায় গম্ভীর ছাপ দৃশ্যমান। তিনি ৬টি দাঁত হাতের ওপর বসে আছেন। বিভিন্ন দিক থেকে আপনি তাঁর চেহাড়া দেখতে বিশিষ্ট একটি পাবেন। কিন্তু প্রতিটি দিকের এই ফুসিয়ান বুদ্ধ মূর্তির মুখ ও ভাবভংগিমার ধরণ ভিন্নতর। এটি হল চীনের একমাত্র দশ চেহাড়ার ফুসিয়ান বুদ্ধ মূর্তি। ফুসিয়ান বুদ্ধ সবাইকে সুখ ও শান্তি এনে দেন।'

দক্ষিণ কোরিয়ার লি কেন ইউয়ান একজন আন্তরিক ধর্ম বিশ্বাসী। ফুসিয়ান বুদ্ধের প্রতি তীর্থযাত্রা সম্মান জানানোর জন্য তিনি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে করে এমেই পাহাড় এসেছেন। তিনি বলেন, 'আমি এমেই পাহাড়ে এত বড় ফুসিয়ান বুদ্ধের মূর্তি দেখার পর মন থেকে অনুভব করি, চীন সত্যিইএকটি মহান দেশ। আমি ফুসিয়ান বুদ্ধের উদ্দেশ্যে তীর্থযাত্রা করে এখানে এসেছি এবং এ মন্দিরের জন্য আর্থিক সাহায্য করেছি। যদিও আমি বেশি আর্থিক সাহায্য করি নি, তবুও আমি আন্তরিকভাবেই তীর্থযাত্রা শুরু করেছিলাম।'

সোনালী শৃংগ একটি ভাল তীর্থ স্থান ছাড়াও সুর্যো দয় ও মেঘের সাগরে হেটে বেড়াবার শ্রেষ্ঠ স্থান। সোনালী শৃংগে সুর্যো দয়ের সময় সারা এমেই পাহাড় আলোর ঝলমল করে উঠে। সুর্য উঠার পর আকাশের মেঘগুলোকে সাগরের মত সুন্দর দেখায়।

সৌভাগ্যবান হলে আপনি, একটি বিস্ময়কর দৃশ্য দেখতে পারবেন। এটি হল বুদ্ধের কিরণ। আসলে বুদ্ধের আলো একটি বিশেষ প্রাকৃতিক পদার্থাবিদ্যা গত প্রতিফলন। দেখতে ঠিক মানুষের বাইরে একটি সাত রঙের আলো গোল রয়েছে এবং এ আলোর বৃক্ত সঙ্গে স্থান পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু এ সুযোগ বেশি একটা ঘটেনা।

বৌদ্ধ ধর্ম এমেই পাহাড়ে উন্নয়নের পাশাপাশি এমেই পাহাড়ের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। বিশেষ করে মন্দির ও বুদ্ধ মুর্তি এমেই পাহাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে একাকার হয়ে আছে। সেজন্য এমেই পাহাড়ের দৃশ্যা বলি জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার বিশ্বের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকা হয়েছে।

বর্তমানে বৌদ্ধ ধর্মের বিশ্বাসীরা ছাড়াও এমেই পাহাড় সারা বিশ্বের পর্যটকদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এমেই পাহাড় দর্শনীয় স্থানের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা দু হুই বলেন, এমেই পাহাড়ের পর্যটন স্থাপনা ক্রমান্বয়ে পুর্ণাংগ হচ্ছে। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের বৌ ভিক্ষু দ্ধদেরকে এমেই পাহাড়ে ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, 'এমেই পাহাড়ের পর্যটনের অবকাঠামো নির্মাণ এখন পুর্ণাংগ হয়েছে। বৈজুতিক ট্র্যাম (tram), ক্যাবলকার ও পাহাড়ে উঠার নিরাপদ সড়ক রয়েছে। দর্শনীয় স্থানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের করেকটি ৩ থেকে ৫ তারকা বিশিষ্ট হোটেল নির্মিত হয়েছে। আমি বিভিন্ন বন্ধুদেরকে এমেই পাহাড়ে এসে তা উপভোগ করার আমন্ত্রণ জানাই।'


1 2
  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China