শেয়ার বাজারের পরিপক্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনের শেয়ার বাজারের বৈদেশিক উন্মুক্তকরণের পদক্ষেপও ধাপে ধাপে দ্রুততর হয়েছে। ২০০৬ সালের শেষ দিক পর্যন্ত চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অন্তর্ভুক্তির সময় দেয়া শেয়ার বাজার বৈদেশিক উন্মুক্তকরণের প্রতিশ্রুতি সব কার্যকরী করেছে। যেমন বিদেশী স্টক সংস্থা সরাসরি বি-শেয়ারের লেনদেন করতে পারে। যৌথ-মালিকানার কোম্পানি চীনে স্টক বিনিয়োগ তবহিল সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা ব্যবসা করতে পারে। বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ চীনের শেয়ার বাজারের বাজারায়ন ও আন্তর্জাতিকায়ন প্রক্রিয়া এবং শেয়ার বাজারের বিকাশ ত্বরান্বিত করেছে।
শেয়ার বাজারের মতো চীনের অর্থ শিল্পের অন্যান্য ক্ষেত্রও সংস্কার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। যেমন ব্যাংকিং খাত। গত ৩০ বছরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আর্থিক চাহিদার পরিবর্তনের ফলে ব্যাংকগুলো আরো সুবিধাজনক, রকমারি এবং ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আর্থিক পণ্য সরবরাহ করার চেষ্টা চালায়। গত বছরের শেষ দিক পর্যন্ত চীনে মোট ৭৮টি ব্যাংক ব্যক্তিগত ফিন্যান্সিং সার্ভিস চালু করেছে। এর মোট মূল্য ৮১৯ বিলিয়ন ইউয়ান। এ বছরের প্রথম তিন মাসের বিক্রয় মূল্য ২০০৭ সালের পুরো বছরের চেয়ে বেশি।
চীনের ব্যাংকিং শিল্পও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগদানের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ধাপে ধাপে বৈদেশিক উন্মুক্তকরণের দ্বার খুলেছে। ২০০৭ সালে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে বিদেশী পুঁজি ব্যাংক চীনা ও বিদেশী মুদ্রার ব্যাংকিং সার্ভিস করার আবেদন গ্রহণ করেছে। এ বছরের এপ্রিল মাসে স্ট্যান্টারড চারট্যারড, হংকং ও শাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন, পূর্ব এশিয়া আর নিউইয়র্কের ন্যাশনাল সিটি এ চারটি বিদেশী পুঁজি ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে চীনে সার্বিকভাবে আর্থিক সার্ভিস করার অধিকার পেয়েছে। বৃটেনের স্ট্যান্টারড চারট্যারড ব্যাংকের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট পিটার সান্দস বলেন, 'আমরা কোন গোবরাট স্থাপন করবো না। আমরা চীনের বিভিন্ন ক্রেতা গোষ্ঠীর জন্য নানা রকম সেবামূলক পণ্য দিবো। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও তাই করছি।'

গত বছরের শেষ পর্যন্ত চীন চীনে ২১টি বিদেশী ব্যাংকের শাখা অফিসের পরিবর্তে বিদেশী আইনসম্মত ব্যক্তির মালিকানাধীন ব্যাংক খোলার ব্যাপারে অনুমোদন দিয়েছে।
চীনের বাণিজ্য ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক উন্নয়নের পদক্ষেপ নিরন্তরভাবে দ্রুত হয়ে যাচ্ছে। চীনা ব্যাংক বিশ্বের ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে ৬০০টিরও বেশি শাখা সংস্থা খুলেছে। চীনের শিল্প ও বাণিজ্য ব্যাংক অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এক শাখা সংস্থা খুলেছে এবং কাতারের দোহায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে শাখা সংস্থা খোলার আবেদনও অনুমোদন পেয়েছে।
গত ৩০ বছরে বীমা অর্থ শিল্পের তিনটি অংশের অন্যতম হিসেবে যথাক্রমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি চীনের জনসাধারণের কাছেও চলে এসেছে। এখন বীমা চীনের আর্থ-সামাজিক জীবন ও গণ জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে পরিণত হয়েছে।
সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের প্রথম দিকে চীনের বীমা বাজারে কেবল একটি কোম্পানি ছিল। তখনকাল বার্ষিক বীমা যাবদ আয় মাত্র ৪৬ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি ছিল। ২০০৭ সালে চীনের বীমা কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১০। বীমা যাবদ আয় দাঁড়িয়েছে ৭০০ বিলিয়ন ইউয়ান। চীন বীমা ক্ষেত্রে এক নতুন বৃহত্ দেশে পরিণত হয়েছে।
শহরবাসীদের মধ্যে বীমা নেয়ার সচেতনতা গড়ে উঠেছে। এমনকি বীমা ব্যবসা গ্রামাঞ্চলেও ঢুকেছে। এর মধ্যে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বর্তমানে সরকারের ভর্তুকি দেয়া নিম্ন ফি দিয়ে কেনা বীমা ব্যবস্থা নানা কৃষি প্রধান প্রদেশে সম্প্রসারিত হয়ে ব্যাপক কৃষক এর সুবিধা উপভোগ করছেন।

উ তিং ফু
চীনের বীমা তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান উ তিং ফু জানিয়েছেন, 'আন্তর্জাতিক নিয়ম আর আমাদের নিজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমর্থনে আমরা কৃষি বীমা করি। আমরা সামান্য মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি বীমা কোম্পানিগুলোর কৃষি বীমার আওতা সম্প্রসারণের কাজ তত্ত্বাবধান করি।'
চীনের অর্থ শিল্পের প্রায় ৩০ বছরের বিকাশ পর্যালোচনা করে বলা যায়, চীন বিশ্বকে তাক লাগানো সাফল্য অর্জন করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, অর্থ শিল্পের বিশ্বায়নের নতুন প্রবণতা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীনের অর্থ শিল্পের আরো অনেক দুর্বলতা রয়েছে। ফলে চীনের অর্থ শিল্পের সংস্কার আরো অনেক দূরে যেতে হবে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) 1 2 |