সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ৩০ বছরে চীনের অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে আকাশ পাতাল পরিবর্তন ঘটেছে। অর্থ ক্ষেত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। গত ৩০ বছর ধরে চীনের শেয়ার বাজারও দিন দিন সমৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো নানা নতুন সেবা প্রদান করে। বীমাও সাধারণ নাগরিকের কাছে চলে এসেছে। এমনকি সুদূর পাহাড়ী গ্রামের কৃষকরাও বীমার সুবিধা ভোগ করছেন।

চীনের শেয়ার বাজার
৫১ বছর বয়সী বেইজিং এর শহরবাসী ছেন ফান নয় বছর আগে সহকর্মীর উত্সাহে শেয়ার বাজারে প্রবেশ করে শেয়ার কেনা শুরু করেন।এখন তাকে একজন পুরোনো বিনিয়োজক বলা যায়। শেয়ার বাজারের ওপর নজর রাখা হচ্ছে তাঁর প্রতিদিনের কাজ। তিনি বলেন, 'প্রতি দিন আমি পার্কে ব্যায়াম করার পর ফিরে এসে সঙ্গে সঙ্গে আমার কম্পিউটার খুলে সেই দিনের শেয়ার বাজারের উঠা-নামা পর্যবেক্ষণ করি। কোন শেয়ারকে পছন্দ করে টেলিফোনের মাধ্যমে লেনদেন করা যায়। খুব সুবিধা। আমি ইন্টারনেটে শেয়ার লেনদেনের ব্যবস্থা খোলার পরিকল্পনা করেছি। তাহলে আমি সরাসরি ইন্টারনেটে শেয়ার কিনতে ও বিক্রি করতে পারবো। তখন আরো সুবিধা হবে।'
ম্যাডাম ছেন হচ্ছেন চীনের কোটি কোটি শেয়ার বিনিয়োজকদের মধ্যে একজন। এখন শেয়ার বাজারের অবস্থা হচ্ছে চীনের জনসাধারণের উত্তপ্ত আলোচ্য বিষয়ের অন্যতম। ২০০৫ সালের জুন মাস থেকে ২০০৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত শাংহাই শেয়ার বাজারের সার্বিক সূচক ১০০০ থেকে দ্রুতই বেড়ে ৬০০০ পয়েন্টে উঠেছে। কেবল এক বছর পর আবার ৬০০০ থেকে দৌঁড়ে ২০০০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। শেয়ার বাজারের উঠানামা চীনে অভুতপূর্ব আকর্ষণ সঞ্চার করেছে। ম্যাদাম ছেন বলেন, এখন সুপার মার্কেটে, পার্কে, পাবলিক বাসে ও রেঁস্তরায়সহ সব জায়গায় শেয়ার বাজার নিয়ে আলোচনা করা মানুষকে দেখা যায়।
কিন্তু সময় ৩০ বছর পিছিয়ে গেলে তত্কালীন চীনে 'শেয়ার' কী জিনিস তা জানা মানুষ খুব কম ছিল। শেয়ার বাজারকে ভালো জানা মানুষ আরো বিরল। এমন সময় সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ প্রবর্তনের পটভূমিতে নয়া চীনের শেয়ার বাজার শুরু হয়।

তেং সিয়াও পিং জন ফেলানকে 'ফেইলো স্পীকারের' শেয়ার দিচ্ছিলেন
১৯৮৪ সালে চীন সরকার 'শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বিনিয়োগ করে শেয়ার কিনে বছরের শেষ দিকে বোনাস পাওয়ার' অনুমোদন দেয়। বেইজিং, শাংহাই, কুয়াংতুং, সিছুয়ান ও লিয়াও নিংসহ নানা অঞ্চলের কিছু কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান শেয়ার ব্যবস্থা চালু করতে পরীক্ষা শুরু করে। এ বছরের নভেম্বর মাসে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর প্রকাশিত প্রথম শেয়ারপত্র 'ফেইলো স্পীকারের' জন্ম হয়। তখন শেয়ার বিনিয়োজকরা আদর করে তাকে 'ক্ষুদ্র ফেইলো' বলে ডাকতো। ৫০ ইউয়ান মূল্যের একটি 'ক্ষুদ্র ফেইলো' শেয়ারপত্র উপহার হিসেবে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সাধারণ স্থাপতি তেং সিয়াও পিং তত্কালীন নিউইয়র্ক শেয়ার বিনিময় কেন্দ্রের চেয়ারম্যান জন ফেলানকে দিয়েছেন।

ফেইলো শেয়ার
এরপর থেকে চীনের শেয়ার বাজার দ্রুত বিকশিত হয়। গত শতাব্দীর ৯০'র দশকে শেয়ার বিনিয়োজকরা কেবল ভিড় ভরা বিনিময় কেন্দ্রে শেয়ার লেনদেন করতে পারতেন। তখন মাত্রা দশ বারোটি শেয়ার ছিল। বর্তমানে শাংহাই ও শেনচেনে প্রতিষ্ঠিত দুটি শেয়ার বিনিময় কেন্দ্রে তালিকাভুক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৮০০টিরও বেশি। শেয়ার বিনিময় কেন্দ্রের শাখা অফিস সারা দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে আছে। টেলিফোন ও ইন্টারনেটে শেয়ার লেনদেনের পদ্ধতি বিনিয়োজকদের জনপ্রিয় পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে।
চীনের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বাজার মূল্য দিন দিন বাড়ছে। শাংহাই ও শেনচেন এ দুটি শেয়ার বাজারের সর্বোচ্চ বাজার মূল্য ৩০ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে। চীনের কেন্দ্রীয় অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টক ও ফিউচার্স গবেষণাগারের অধ্যাপক হো ছিয়াং মনে করেন, 'আসলে শেয়ার বাজার খোলার প্রথম দিকে আমাদের অনেক তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে নানা সমস্যা বিরাজ করছিল। কিন্তু আমরা শেয়ারপত্র বাজারে ছাড়ার ব্যবস্থা সংস্কার করেছি এবং শেয়ার বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির প্রবেশের শর্ত উন্নত করেছি। ফলে বর্তমানে আমাদের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গুণগত মান আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানি হচ্ছে শেয়ার বাজারের ভিত্তি-প্রস্তর। তার গুণগত মান ও স্থিতিশীল বিকাশ আমাদের শেয়ার বাজারের স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেছে।'
1 2 |