আমার 'চীনা মা'
এম পান্ডারিনাথান চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)-র চীন আন্তর্জাতিক বেতারের তামিল বিভাগের বিশেষজ্ঞ। মহামারীর সময়ে তিনি বেইজিংয়ে আছেন। তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, "মহামারীর শুরুর পরপরই নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম, 'ভয় লাগে?' মন উত্তর দেয়, 'না কোনো ভয় লাগে না।' কারণ, আমি বিশ্বাস করি সিএমজি আমাদেরকে ভালভাবে রক্ষা করবে। তখন আমার একজন ভারতীয় বন্ধু আমাকে বলেন, 'তুমি কেন চীন থেকে ফিরে যাবে না? কী বিপদ! তুমি কি অর্থ উপার্জনের জন্য তোমার জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করবে?' আসলে সে আমাকে বুঝেনি। এবার এ সংকট একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করি। চ্যালেঞ্জ নানা রকমের এবং তার মোকাবিলার পদ্ধতিও ভিন্ন। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এমন ভেবে আমি চীনে থাকার সিদ্ধান্ত নেই।
আমার চীনে থাকার অন্য একটি কারণ হল চীনা সরকারের ওপর আস্থা আছে আমার। সরকার ও জনগণ এবার মহামারীর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে বিজয় সম্ভব। আমার চীনা সহকর্মী ও বন্ধুও আমাকে সবসময় উত্সাহ দেয়। বিশেষ করে আমরা একজন চীনা 'মা' আছেন। তার গল্প আমি বলতে চাই।
চীনে ৬ বছর থাকার সময়ে আমি অনেক শিখেছি। এর মধ্যে একটি হল মহাচত্বর নাচ। চীনা মানুষ বিশেষ করে প্রবীণ নারীরা পার্কে বা খালি জায়গায় নাচ করতে পছন্দ করেন। এ নাচকে ডাকা হয় মহাচত্বর নাচ। আমিও এ নাচ করতে পছন্দ করি এবং নাচ করার সময় একজন চীনা নারীর সঙ্গে পরিচিত হই। উনি ৭৪ বছর বয়সী এবং আমি তাকে আন্টি ডাকি। তবে ইনি বলেন, তাকে মা বলে ডাকলে খুশি হবেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে মহামারীর কারণে বাইরে কোনো অনুষ্ঠান হতে পারেনি। অফিস যাওয়া আর ঘরে থাকা। একদিন আমার এই মা আমাকে ফোন করেন। উনি আমাকে ঘরে থাকতে ও নিজেকে ভালভাবে রক্ষা করতে বলেন। বিশেষ করে বাইরে গিয়ে নাচ না করার কথা উল্লেখ করেন। পরে প্রতিসপ্তাহে তার সঙ্গে ফোনে কথা বলি আমি। উনি আমার মা'র মতো। তার কথা খুব মর্মস্পর্শী।
এখন চীনে মহামারী নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং আমিও বাইরে গিয়ে আবার নাচ করতে পারি। একদিন আমি 'মা'-এর সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমার কাঁধে চাপর দিয়ে বলেন, 'কেমন আছো?' তাঁকে দেখে আমি খুব খুশি। দেশ, সরকার, ধর্মের সীমান্ত আছে। তবে মানুষের মধ্যে এমন সীমান্ত থাকা উচিত নয় এবং ভালবাসা এ সীমান্ত ভেঙে দিতে পারে।"