গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরের মধ্যে বিদেশিদের চোখে চীনের পরিবর্তন
  2019-09-23 11:27:19  cri

ইরানের বিখ্যাত চীনতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ফখরি দানেশপুরের সাক্ষাত্কার

ইরানে একজন চীনতত্ত্ববিদ রয়েছেন, যিনি বহু বছর চীন নিয়ে গবেষণা করেন। ইরানে প্রথম চীনা ভাষার মেজর স্থাপন করার পাশাপাশি অবসর নেওয়ার পর চীনা মাটির গবেষণা কাজ অংশ নেন, তাঁর নাম ফখরি দানেশপুর। নিজের বাড়িতে সাংবাদিকের সাথে তিনি তার চীন-সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

অধ্যাপক ফখরির বসার ঘরটি যেন ক্ষুদ্রাকারের প্রাচীন শিল্পকর্মের দোকান ও গ্রন্থাগারের মতো। ঘরটির বিভিন্ন চীন-সম্পর্কিত উপাদান অনেক আকর্ষণীয়। গ্লাসকেসের মধ্যে সুশৃঙ্খলভাবে ভাস্কর্য, চীনা মাটির পাত্র, চা সেট ও প্রাচীন শিল্পকর্ম সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দেয়ালে শিল্পকর্ম, ছবি ও চীনের পেইন্টিং এবং 'চাইনিজ নোট' প্রদর্শন করা হয়েছে। বিভিন্ন জিনিসপত্র বহু বছর ধরে অধ্যাপক ফখরির চীনতত্ত্ব গবেষণার প্রমাণে পরিণত হয়েছে। চীনের শিল্পকলা গবেষণার গল্প স্মরণ করে অধ্যাপক ফখরি গর্বের সাথে বলেন,

'তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ছাত্রী থাকাকালীন ইরানের বিখ্যাত লেখক ও পণ্ডিত সিমিন দানেশভার আমাকে চীন, জাপান ও ভারতীয় শিল্প বিষয়ক কোর্স পড়ান। তাঁর প্রভাবে আমি চীনা শিল্পকলার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। ছোটবেলায় আমার জন্মস্থানে বাসায় ব্যবহৃত থালাবাসন সবই প্রাচীন চীনা মাটির । আমি এসব চীনা মাটি দারুণ পছন্দ করি এবং প্রতিবার স্কুলে ভালো ফলাফল অর্জন করলে মা আমাকে চীনা মাটির পাত্র ব্যবহারে উত্সাহ দেন। বহু শিল্পকর্মের মধ্যে চীনা মাটির শিল্পকর্ম আমার সবচেয়ে প্রিয়।'

অধ্যাপক ফখরি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে তিনি চীনের তাইওয়ান প্রদেশে গিয়ে চীনা শিল্পকর্ম মেজর হিসেবে বাছাই করে লেখাপড়া করেন এবং পরে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনের শিল্পকলা ও ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। সাথে সাথে ইরানে চীনগবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে প্রচেষ্টা চালান। তবে তাইওয়ান প্রদেশ থেকে ফিরে আসার পর তার শিক্ষক বলেন, সত্যিকারভাবে চীনা শিল্পকলা বুঝতে চাইলে চীনের মূলভূভাগে যেতে হবে। ১৯৭৬ সালে তিনি প্রথমবারের মতো বেইজিংয়ে এসে মহাপ্রাচীর, ফরবিডেন সিটি ও থিয়ানআনমেন মহাচত্বর পরিদর্শন করেন। তার চোখে গত কয়েক বছরে চীনাদের জীবনযাপনের বিরাট পরিবর্তন বর্ণনা করেন তিনি। গত শতাব্দীর ৭০ দশকে চীনাদের কাপড়চোপড়ের সব ডিজাইন ছিলো এক ধরনের, রঙও প্রায় একই ছিলো, অন্যদের সাথে কথা বলতে চাইতো না, তবে বর্তমানে চীনাদের জীবনযাপন অনেক উন্নত হয়েছে আর আত্মবিশ্বাসও অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন,

'আমি দ্বিতীয়বার চীনের মূলভূভাগ সফর করি বেইজিং অলিম্পিক গেমস আয়োজনের সময়। তখন আমি ইরানের জাদুঘরের তিনজন বন্ধুর সাথে ইউয়ান রাজবংশের চীনা মাটির শিল্পকর্ম নিয়ে চীনের প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করি এবং ইউয়ান রাজবংশের চীনা মাটির ডিজাইন গবেষণা সম্পর্কে বক্তৃতা প্রদান করি। প্রথম চীন সফরকালে চীনাদের দরিদ্র জীবনযাপন দেখেছি আর দ্বিতীয়বার বেইজিংয়ে যাওয়ার সময় বিরাট পরিবর্তন অনুভব করেছি। চীনা নাগরিকদের চেহারায় আত্মবিশ্বাস দেখা যায় এবং অন্যদের বিনিময়ের দক্ষতাও উন্নীত হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত আরো ১০ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে, চীনে অবশ্যই আরো ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে।'

চীনের ইতিহাস সম্পর্কে অধ্যাপক ফখরি বলেন, সুং রাজবংশের রাজা হুই জুংয়ের শিল্পস্বরুপহস্তলিপি ও চারুকলার শিল্পকর্ম সবচেয়ে পছন্দ করেন তিনি। কারণ রাজা সুং হুই জুং তার মনে একজন চমত্কার শিল্পী। চীনা শিল্পকলা ছাড়া ইরানে চীনা ভাষা শেখার ভিত্তি স্থাপন করেছেন অধ্যাপক ফখরি। তিনি ১৯৯৬ সালে ইরানের শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষা মেজর চালু করেন এবং এ বিভাগের প্রথম পরিচালক হন। টানা ১১ বছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন, যদিও প্রতি মাসের বেতন ছিলো অনেক সামান্য, তবে তিনি কাঁধে দায়িত্ব বহন করে এ কাজ সম্পন্ন করেন। চীনা ভাষার পরিচালকের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে অধ্যাপক ফখরি বলেন,

'যদিও শুরুর দিকে অনেক ঝামেলার সম্মুখীন হয়েছি, তবে এ কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করেছি। শিক্ষকদের বেতন ছিলো অনেক কম আর পাঠ্যপুস্তকেরও অভাব ছিলো। মাঝে মাঝে চীনা ভাষার দুই একটি বই পেয়ে ছাত্রছাত্রীরা দৌড়াদৌড়ি করে বইটি কপি করতো। আমার মনে পড়ে, একবার কয়েকজন শিক্ষার্থী ইরানে চীনা দূতাবাসের কাছে বই সাহায্য চেয়েছিল। দূতাবাস তখন আমাদের আরো বেশি চীনা বই প্রদানের চেষ্টা করে। তখন চীনা দূতাবাসে ছোট একটি গ্রন্থাগার ছিলো।

সেখানকার বইগুলোও ছিলো একটু পুরনো, তবে আমরা শ্রেষ্ঠ জিনিস হিসেবে গাড়িতে বহন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাই। ধীরে ধীরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা বইয়ের গ্রন্থাগার নির্মিত হয় এবং আমার কার্যমেয়াদে ৭, ৮ জন শিক্ষার্থীকে চীনে লেখাপড়ার জন্য পাঠাতে সক্ষম হই।'

সম্প্রতি ইরানে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ছাং হুয়া অধ্যাপক ফখরির বাসায় যান। রাষ্ট্রদূত ছাং তাকে বলেন, চীনা জাতি অনুভূতির গুরুত্ব দেয়, কখনো পুরনো বন্ধুকে ভুলে যায় না এবং চীন-ইরান মৈত্রীর অবদানকারীকেও ভুলে যাবে না। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে তেহরানে উদযাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে অধ্যাপক ফখরিকে আমন্ত্রণ জানান তিনি।

অধ্যাপক ফখরি বলেন, তিনি চীনকে ভালোবাসেন, তিনি অবশ্যই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তার বয়স বর্তমানে ৮০ বছরের বেশি হলেও তিনি এখনো চীনা সংস্কৃতি গবেষণা আর দ্বিপাক্ষিক সংস্কৃতি বিনিময়ে অনেক আগ্রহী। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে তিনি বলেন,

'চীনারা অনেক কষ্ট অতিক্রম করে সফলতা অর্জন করেছে। চীনা বন্ধুদেরকে আমার শুভেচ্ছা জানাই, তাদের আরো সুন্দর জীবন কামনা করি।'

প্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানও এখানেই শেষ করতে হবে। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা শুনতে মিস করলে আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারবেন। ওয়েবসাইটের ঠিকানা: www.bengali.cri.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, থাকুন সুন্দর ও আনন্দে। আগামী সপ্তাহের একই দিনে একই সময়ে আবারো কথা হবে। যাই চিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল/মুক্তা)


1  2  3  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040