চীনের সিছুয়ান প্রদেশের গ্রামের এক কর্মকর্তা এবং ই জাতির এক ছেলের মুগ্ধকর গল্প
চৌ আও সিয়াং চীনের সিছুয়ান প্রদেশের কুয়াংআন শহরের তালুং জেলার একজন কৃষি প্রযুক্তিবিষয়ক কর্মকর্তা, যিনি লিয়াংশান অঙ্গরাজ্যের চাওচুয়ে জেলার দারিদ্রমুক্ত সহকারী দলের একজন কর্মী। লিয়াংশানে তিনি দু'বছর ধরে দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমে যুক্ত আছেন। স্থানীয় গ্রামের একজন ছেলে আরশিবু'র সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যদিও তাদের মধ্যে খুব কম দেখা-সাক্ষাত্ হয় তবে তাদের এই গভীর সম্পর্কে যেন 'পিতা-পুত্রের মতো'।
২০১৮ সালের জুন মাসে চৌ আও সিয়াং কুয়াংআন এলাকার অন্যান্য ২৮ জন কর্মকর্তার সাথে চাওচুয়ে জেলায় আসেন। তখন তিনি থেবুলুও জেলার হাইলিয়েভাছু গ্রামে কাজ শুরু করেন। স্থানীয় গ্রামের স্কুলে ১৮০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ৪ জন এবং তাদের মধ্যে ৩ জন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। একজন শিক্ষক মাত্র প্রাথমিক স্কুল পাসের সনদ পেয়েছেন। বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করার সময় চৌ খুঁজে পান যে, স্থানীয় গ্রামের মোট লোকসংখ্যা ৯০০ জনেরও বেশি, প্রিস্কুলের বাচ্চা আর প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা তাদের মধ্যে পাঁচ ভাগের এক ভাগ, বাচ্চার সংখ্যা শিক্ষকের সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি, এই অবস্থা শিক্ষাদানের মান নিশ্চিত করতে সক্ষম নয়।
গ্রামের কৃষক আরনেংথু'র সাথে পরিচয় হওয়ার পর চৌ জানতে পারেন, আরনেংথু'র ৪ জন বাচ্চা আছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাচ্চার বয়স ১৬ বছর, সবচেয়ে ছোট বাচ্চার বয়স ৫ বছর। তিনি সারা পরিবারের খরচ বহন করেন এবং বড় চাপের সম্মুখীন হন। বাচ্চাদের শিক্ষাগ্রহণ সম্পর্কে চৌ আরনেংথুকে বলেন, শুধুমাত্র জ্ঞান শেখার মাধ্যমেই বাচ্চারা দরিদ্র গ্রাম থেকে বাইরে বের হতে সক্ষম।
এ সম্পর্কে আরনেংথু বলেন, তাকে জীবনযাপনে বড় চাপ মোকাবিলা করতে হয়, গ্রামের স্কুলের শিক্ষাদানের মানও ভালো না, প্রত্যেক বাচ্চার শিক্ষাগ্রহণ নিশ্চিত করতে সক্ষম নন তিনি।
এ সম্পর্কে চৌ তাঁকে বলেন, 'আমার স্ত্রী একজন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক, আমার সন্তানও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। আপনার তৃতীয় বাচ্চা আরশিবু'কে যদি কুয়াং'আন শহরে পাঠাতে সম্মত হন, তাহলে আমার স্ত্রী তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতে পারবেন'। তখন আরশিবু'র বয়স মাত্র ১০ বছর, সে বাইরের জীবনযাপনের সঙ্গে দ্রুত অভ্যস্ত হয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করেন চৌ।
চৌ'র কথা শুনে আরনেংথু দ্রুত সম্মত হন। ছোটবেলায় তিনি মাত্র তিন বছরের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষাদান গ্রহণ করেছিলেন, জ্ঞানের অভাবের কারণে তিনি সঠিকভাবে জানেন যে লেখাপড়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। জনাব চৌ সরকারি কর্মকর্তা, তাঁর স্ত্রীও শিক্ষিত মানুষ, তাদের বাচ্চা যদি চৌ'র পরিবারে বড় হতে পারে তাহলে তিনি অনেক চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন।
তবে জনাব চৌ হঠাত্ এ দায়িত্ব গ্রহণ করার ব্যাপারে আগে স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করেন নি। পরের দিন তিনি স্ত্রীর সাথে ফোনালাপ করেন, চৌ'র স্ত্রী সন্দেহ ছাড়াই রাজি হন। স্ত্রী তাঁকে বলেন, 'আমরা যদি এ বাচ্চাকে সহায়তা দেই এবং ভবিষ্যতে সে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে তাহলে তার পরিবারও উপকৃত হবে। তুমি ভালো সিদ্ধান্ত নাও, সময় পেলে বাচ্চাকে আমার কাছে পাঠাও'। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষক হিসেবে স্ত্রী চাং স্যুয়ে মেই গ্রামের বাচ্চাদের কষ্ট ভালোভাবে বুঝতে পারেন।
গত বছরের অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে আরশিবু প্রথমবারের মতো তালিয়াং পাহাড়ের বাইরে এসে কুয়াং'আন এলাকার নোংসি জেলার প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হয়।
আরশিবু'র নতুন জীবনযাপনের পরিবর্তন সম্পর্কে শিক্ষক চাং বলেন, এখানে আসার শুরুতে সে চুপচাপ থাকতো, পিতামাতার কথা মনে হলে কান্না করতো, তবে কয়েক দিন পর নতুন জীবনের সঙ্গে সে অভ্যস্ত হয়ে যায়। শিক্ষক চাং,আন্টি চাং থেকে মা ডাকা শুরু করে আরশিবু। গত এক বছরে ছেলে আরশিবু'র ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের পরিবর্তন দেখে অনেক খুশি শিক্ষক চাং। আগে আরশিবু'র স্নান করার অভ্যাস ছিলো না,এখন সে প্রতিদিন স্নান করে।হাসিমুখে এ কথা বলেন শিক্ষক চাং।
আরেকটি আনন্দদায়ক ব্যাপার হলো আরশিবু'র লেখাপড়ার ফলাফল দিন দিন অনেক উন্নত হয়ে ওঠে। শিক্ষক চাং শুরু থেকেই তাকে ভালোভাবে সবকিছু বুঝিয়ে দেন। গত বছরের শেষ সেমিস্টারে আরশিবু চীনা ভাষা ও গণিত পরীক্ষায় 'ক' শ্রেণীর ফলাফল অর্জন করে।
আগামী বছর আরশিবু'র প্রাথমিক স্কুলের লেখাপড়া শেষ হবে। কুয়াং'আনে তার উচ্চবিদ্যালয়ের কোর্স সম্পন্ন করতে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জনাব চৌ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যাপকভাবে শিক্ষাদানের উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র দূর করা যায়। দারিদ্র্যবিমোচনের একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিটি কৃষক পরিবারকে সুন্দর পরামর্শ দিতে হবে, যদিও শক্তি সামান্য তবে তার মাধ্যমেও খুব সম্ভবত একজন মানুষ ও একটি পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব।