চীনা প্রেসিডেন্ট সি'র রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ, এশিয়ায় উচ্চশিক্ষার বৃহত্তম গন্তব্যদেশ চীন, ফিলিপিন্সে প্রবাসী চীনার সহায়তায় নির্মিত দরিদ্র শিশুকেন্দ্র ও কিউএসের প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিং
  2019-06-24 16:20:09  cri

 


চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ

জুন মাসের শুরুতে রাশিয়া সফরকালে সেন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও শিক্ষাভবন ঘুরে দেখেন। এরপর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয় প্রেসিডেন্ট সিকে।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, সেন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের অন্যতম, যার সুদীর্ঘকালের ইতিহাস রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় রাশিয়া ও বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে চমত্কার অবদান রেখেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি জানার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণও দিয়েছে।

সেন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়ে তিনি অনেক গর্বিত। শিক্ষার সহযোগিতা দু'দেশের জনগণের সমঝোতা ও মৈত্রী উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা করেছে, যা কার্যকরভাবে রাশিয়ায় চীনা সংস্কৃতি সম্প্রচার এবং চীনে রাশিয়া সম্পর্কিত গবেষণার উন্নয়নে সহায়ক।

সি আরো বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বেইজিংয়ে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। সেই অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম। ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও সেন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় উভয়ই দু'দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। আমি ও প্রেসিডেন্ট পুতিন এ দু'টি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছি।এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা থেকে বোঝা যায়, দু'দেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ব্যাপক ঘনিষ্ঠ এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মান অনেক উচ্চ। ভবিষ্যতে শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতির সম্প্রচারে দু'দেশের শিক্ষা বিনিময় আরো জোরদার করা হবে এবং নিজ দেশের উন্নয়নে আরো বেশি দক্ষ ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করেন সি।

সি জোর দিয়ে বলেন, যুবকরা মানবজাতির অগ্রগতির আশাবাদ এবং চীন-রাশিয়া মৈত্রীর ভবিষ্যত। চলতি বছর দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী, দু'দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। দু'দেশের যুবকদের উচিত কাঁধে দায়িত্ব বহন করে হাত হাত রেখে চীন-রাশিয়া মৈত্রী ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালানো এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে অবদান রাখা।

প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, প্রেসিডেন্ট সিকে আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করায় আমি গর্বিত। আমি প্রেসিডেন্ট সিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গভীর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন সি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধারাবাহিক প্রস্তাবও পেশ করেন তিনি। 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এবং এতে অনেক দেশ অংশগ্রহণ করেছে। সেন্ট পিটার্সবুর্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাশিয়ার শ্রেষ্ঠ একাডেমিক প্রতিষ্ঠান চীনের শ্রেষ্ঠ একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের সাথে কার্যকর বিনিময় ও সহযোগিতা করেছে। আমাদের দু'দেশের জনগণের সমঝোতাও ব্যাপকভাবে বেড়েছে।এ সবকিছু অবশ্যই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

এশিয়ায় উচ্চশিক্ষার বৃহত্তম গন্তব্যদেশ চীন

সম্প্রতি চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বর্তমানে এশিয়ায় উচ্চশিক্ষার বৃহত্তম গন্তব্যদেশ চীন। চীনে আসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে ও গুণগতমান ব্যাপকভাবে উন্নীত হয়েছে। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মেজর কাঠামোও উন্নত হয়েছে।

পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সালে বিশ্বের ১৯৬টি দেশ ও অঞ্চলের ৪ লাখ ৯২ হাজার ২০০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী চীনের ৩১টি প্রদেশ, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও মহানগরের ১০০৪টি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা সংস্থা বা অন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ ও লেখাপড়া করেন। এর সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের মেজর কাঠামোও উন্নত হয়েছে। প্রকৌশল, প্রশাসন, বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও কৃষিসহ বিভিন্ন মেজরের শিক্ষার্থী সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে, বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশেরও বেশি, তা থেকে বোঝা যায় চীনের প্রকৃত মেজর আরো আকর্ষণীয়।

চীনের রাষ্ট্রীয় বৃত্তি কাউন্সিল (সিএসসি)-র মহাসচিব শেং চিয়ান স্যুয়ে বলেন, বর্তমানে চীনে উচ্চশিক্ষার বৈদেশিক উন্মুক্ত কাঠামো গঠিত হয়েছে, যার ফলে দেশ বিদেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়, উচ্চ পর্যায়ের দক্ষ ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ও গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষায় বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন,

'চীনে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীর বার্ষিক বৃদ্ধি সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ হাজারের মধ্যে রয়েছে, সাথে সাথে তাদের মানও উন্নীত হয়েছে। মেজরের দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, চীনে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ক শিক্ষার্থী বৃদ্ধির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।'

'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়নে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দিন দিন বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট দেশের শিক্ষার্থীদের চীনে আসার সংখ্যাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত বছর চীনে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ সংলগ্ন ৬০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের শিক্ষার্থী সংখ্যা ২ লাখ ৬০ হাজার, যা মোট সংখ্যার ৫২.৯৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ সম্পর্কে মহাসচিব শেং বলেন,

'গত কয়েক বছরে চীনের উচ্চশিক্ষায় ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিং তালিকা থেকে বোঝা যায়, চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিং অব্যাহতভাবে বাড়ছে'।

জানা গেছে, বর্তমানে চীনে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি, পড়াশোনা, প্রশাসন, সেবা ও কর্মসংস্থানসহ ধারাবাহিক আইন বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। এর সাথে চীনের সরকারি বৃত্তির প্রস্তুতিমূলক শিক্ষার পরীক্ষা-ব্যবস্থাও চালু হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চীন 'স্টাডি ইন চায়না' ব্র্যান্ড অনুষ্ঠানকে ভিত্তি করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করে, সাংস্কৃতিক অনুশীলন ও যাচাই প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের চীনে পড়াশোনায় উত্সাহ দেয়, যাতে চীন সম্পর্কে তাদের ধারণাও গভীরতর হয়।


1  2  3  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040