পেশাগত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চরমপন্থাবাদ নির্মূলের কার্যকর পদক্ষেপ
সম্প্রতি জেনিভায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় দফার রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার-বিষয়ক পর্যালোচনায় অংশ নেন চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কাশি এলাকার প্রশাসনিক কর্মকর্তা পারহাদি রোজ। সাংবাদিকদের সাক্ষাত্কার দেওয়ার সময় তিনি বলেন, সিনচিয়াংয়ের পেশাগত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চরমপন্থাবাদ নির্মূল করার কার্যকর পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম।
সিনচিয়াংয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কাশি এলাকায় উইগুর জাতির লোকসংখ্যা ৯০ শতাংশেরও বেশি, তাদের মধ্যে অনেকে গ্রামে বসবাস করেন। গত শতাব্দীর ৯০'র দশকে চরম ধর্মীয় চিন্তাভাবনার প্রভাবে কাশির রীতিনীতি ও সংস্কৃতি উভয়ই অগ্রাহ্য করা হয় এবং নিয়মিতভাবে বিভিন্ন হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে থাকে।
কাশি আঞ্চলিক সরকারের একজন উইগুর জাতির কর্মকর্তা হিসেবে পারহাদি বলেন, চরমপন্থা চিন্তাভাবনা সবচেয়ে আগে রীতিনীতি ও সাধারণ জীবনযাপনের দিক থেকে শুরু হয়। যেমন- বিবাহ অনুষ্ঠানে বিনোদন না করা ও শেষকৃত্যানুষ্ঠানে কান্নাকাটি না করা। পরে ধূমপান নিষেধ, স্কুলে যাওয়া, বই পড়া ও টেলিভিশন দেখাও নিষেধ করা। হালাল খাবার ছাড়া অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবহারেও বাধা দেওয়া হয়। চরমপন্থাবাদ অতি ভয়াবহ। তিনি বলেন,
'মা-বাবা মারা গেলে কান্নাকাটি করা যাবে না, চোখে অশ্রু থাকতে পারবে না। তা কেন? এ ছাড়া, ছেলে মেয়েরা বিবাহ অনুষ্ঠানে বিনোদন করতে পারবে না, তা উইগুর জাতির রীতিনীতির সাথে পুরোপুরি উল্টো।'
এ অবস্থার বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে হিংসাত্মক অপরাধে আঘাত হানার সাথে সাথে চরমপন্থাবাদ নির্মূলে প্রচেষ্টা চালায়। এর মধ্যে একটি পদক্ষেপ হলো পেশাগত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা। তার মাধ্যমে চরমপন্থা চিন্তাভাবনার প্রভাবে হাল্কা অপরাধীদের সহায়তা দেওয়া, যাতে তারা চরমপন্থাবাদ চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন। এ সম্পর্কে পারহাদি বলেন, পেশাগত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পশ্চিমা গণমাধ্যমের তথাকথিত ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলমানদের গ্রেফতার করার জায়গা নয়। তিনি বলেন,
'বস্তুত পেশাগত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থাবাদের প্রভাবে হাল্কা অপরাধী।'
তিনি আরো বলেন, কেন্দ্রের মূল উদ্দেশ্য হল আইন-বিধি, ম্যান্ডারিন ভাষা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা শেখার মাধ্যমে চরমপন্থাবাদ নির্মূল করা। শিক্ষার্থীরা ভাষা ও আইনগত সচেতনতা অর্জন করার সাথে সাথে শ্রমের দক্ষতাও অর্জন করেছেন। তাদের ভবিষ্যতে চাকরি করার জন্য ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে পেশাগত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে স্নাতক হওয়ার পর কারখানায় কাজ করছেন, আবার কেউ কেউ নিজেই ব্যবসা চালু করেছেন। তাঁরা আবারো সুশৃঙ্খলভাবে আইন মেনে চলার নাগরিকে পরিণত হয়েছেন।
পারহাদি বলেন, চরমপন্থাবাদের প্রচার সিনচিয়াংয়ে সন্ত্রাসবাদের মূল কারণ। চরমপন্থাবাদ নির্মূল-ব্যবস্থা কার্যকরের সাথে সাথে গত ২৭ মাসে সিনচিয়াংয়ে কোনো হিংসাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে নি। ২০১৮ সালে কাশি পর্যটন শিল্প ব্যাপক উন্নত হয়ে ওঠে, দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটকসংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়, পর্যটকে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে সবগুলো হোটেল। এতে স্থানীয় অঞ্চলের রীতিনীতিও পুনরুদ্ধার হয়। নিজস্বভাবে পেশাগত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাজে অংশ নেওয়ার জন্য গর্বিত পারহাদি। তিনি বলেন,
'এ কেন্দ্র স্থাপনে আমি অংশ নেই। তাই অনেক গর্বিত ও আনন্দিত। এ কাজের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থাবাদের প্রভাব থেকে লোকজনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বলা যায়, এটি একটি নতুন পদ্ধতি ও অনেক তাত্পর্যপূর্ণ।'
প্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানও এখানেই শেষ করতে হবে। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn
সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা শুনতে মিস করলে আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারবেন। ওয়েবসাইটের ঠিকানা: www.bengali.cri.cn
(সুবর্ণা/টুটুল/স্বর্ণা)