চীনের সংখ্যালঘু জাতির সিপিপিসিসি'র সদস্যদের শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের প্রস্তাব, উচ্চশিক্ষার সংস্কারে সিপিপিসিসি'র সদস্যদের প্রস্তাব এবং সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের চরমপন্থাবাদ বিরোধী-ব্যবস্থা
  2019-04-22 14:06:37  cri


আজকের অনুষ্ঠানে চীনের সংখ্যালঘু জাতির সিপিপিসিসি'র সদস্যদের শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের প্রস্তাব ও উচ্চশিক্ষার সংস্কারে সিপিপিসিসি'র সদস্যদের প্রস্তাব এবং সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের চরমপন্থাবাদ বিরোধী-ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরবো।

শুরুতেই শুনবেন চীনের সংখ্যালঘু জাতির সিপিপিসিসি'র সদস্যদের শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের প্রস্তাব সম্পর্কে কিছু তথ্য।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বহুবার জোর দিয়ে বলেন, 'সার্বিক সচ্ছল সমাজ গঠনে বিভিন্ন জাতির যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।' ২০২০ সালে এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে দারিদ্র্যবিমোচন বিশেষ করে সংখ্যালঘু জাতির অধ্যুষিত এলাকার দারিদ্র্যবিমোচন অতি গুরুত্বপূর্ণ। চলতি বছর চীনের গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন (সিপিপিসিসি)-র অধিবেশনে এ বিষয় নিয়ে সংখ্যালঘু জাতির সদস্যরা ব্যাপক আলোচনা ও পরামর্শ দেন।

'কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনায় সংশ্লিষ্ট এলাকার দারিদ্র্যবিমোচন বাস্তবায়ন করা সম্ভব, তবে পরে কি করবো?'

'পেশাগত প্রশিক্ষণে দক্ষতার চর্চা দারিদ্র্যবিমোচনে অনেক কার্যকর বলে মনে করি।'

'প্রতিটি গ্রামে ভালো কিন্ডারগার্টেন স্থাপন করা সম্ভব, তবে শিক্ষক নেই।'

সবার আলোচনা শুনতে শুনতে চুয়াং জাতির সিপিপিসিসি'র সদস্য লুও লি মিং অনেক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। সিপিপিসিসি'র জাতীয় ও ধর্মীয় কমিটির উপ-পরিচালক হিসেবে তিনি সাংবাদিকে জানান,

'সংখ্যালঘু জাতির অধ্যুষিত এলাকায় সবচেয়ে দুর্বল বিষয় কি? অবশ্যই শিক্ষা গ্রহণ। সবচেয়ে দরিদ্র বিষয় কি? দক্ষ ব্যক্তিদের অভাব। আমাদের জরিপ থেকে জানা গেছে, চীনের কিছু কিছু সংখ্যালঘু জাতির অধ্যুষিত এলাকায় বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহণের পরিমাণ মাত্র ৮৬ শতাংশ, মাধ্যমিক স্কুল ত্যাগ করার পরিমাণ ৩০ শতাংশ।'

এখানে একটি বিষয় ব্যাখ্যা করতে হবে। চীনে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা পরিবারকে ভিত্তি করে হিসাব করা হয়। সাধারণত যদি পরিবারের সদস্যদের বাসস্থান, খাওয়া, বাধ্যতামূলক শিক্ষাগ্রহণ, মৌলিক চিকিত্সা ও নিরাপদ বাড়িঘর অনিশ্চিত হয় এবং মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৫০০ মার্কিন ডলারের চেয়ে কম হয়, তাহলে তাদেরকে দরিদ্র লোক বলা যায়। ২০১৮ সালে চীনে এমন দরিদ্র লোকের পরিমাণ ১ কোটি ৬৬ লাখ, তাদের মধ্যে অনেকে খারাপ প্রাকৃতিক পরিবেশে সংখ্যালঘু জাতির অধ্যুষিত এলাকায় বসবাস করেন।

সদস্য লুও'র দৃষ্টিতে সংখ্যালঘু জাতির অধ্যুষিত এলাকার দারিদ্র্যবিমোচন সবচেয়ে জটিল ব্যাপার। তিনি বলেন,

'চীনে ১৪টি চরম দরিদ্র এলাকা রয়েছে, এর মধ্যে সংখ্যালঘু জাতির অধ্যুষিত এলাকা ১১টি। ৩৩৪টি চরম দরিদ্র জেলার মধ্যে সংখ্যালঘু জাতির জেলা ১৬২টি।'

সিপিপিসিসি'র সদস্য তিং সিউ হুয়া চীনের ইউয়ুননান প্রদেশের নুচিয়াং লিসু জাতির স্বশাসন রাজ্যের প্রতিনিধি, স্থানীয় অঙ্গরাজ্যের উপ-প্রধান তিনি। নুচিয়াং অঙ্গরাজ্যের লোকসংখ্যা ৫.৪ লাখ, যা চীনের চরম দরিদ্র এলাকার অন্যতম এবং সংখ্যালঘু জাতির লোকসংখ্যা ৯০ শতাংশেরও বেশি। গত কয়েক বছরে চরম দরিদ্র লোকের সংখ্যা ৭০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নেমে গেছে। কিছু কিছু জাতির লোক পুরোপুরিভাবে দারিদ্রমুক্ত হয়েছেন, তুলুং জাতি এর মধ্যে একটি। সদস্য তিং বলেন,

'তুলুং জাতির লোকসংখ্যা খুবই কম। এখানে রাস্তাঘাট খুব খারাপ, চলাচল করা যায় না, এক বছরের মধ্যে শুধু অর্ধেক সময় বাইরে যাওয়া যায়, তুষার পড়লে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। চীন সরকার এ ব্যাপারে অনেক গুরুত্ব দেয়। এ জন্য ২০১০ সাল থেকে সরকার তুলুং নদীর আশেপাশে অবকাঠামো নির্মাণ কাজে বরাদ্দ দেয়।'

২০১৪ সালে স্থানীয় সুড়ঙ্গ চালু করার পর তুলুং জাতির জীবনযাপন ব্যাপক উন্নত হয়ে ওঠে, লোকজন দারিদ্রমুক্ত হন। তবে নুচিয়াং অঙ্গরাজ্যের সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব অনেক কঠিন, কারণ স্থানীয় অঞ্চলের দরিদ্র লোকসংখ্যা ১.৬ লাখেরও বেশি। সদস্য তিংয়ের দৃষ্টিতে পুরোপুরি দারিদ্র্যবিমোচন বাস্তবায়ন করতে চাইলে মানুষের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন,

'দরিদ্রতার মূল উত্স নির্মূল করতে চাইলে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা জ্ঞান অর্জন করলে বাইরে চাকরি করতে পারবেন, এটি হবে মূল পদ্ধতি।'

২০১৮ সালে নুচিয়াং অঙ্গরাজ্যে ৯০টিরও বেশি পেশাগত প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয়। এ ছাড়া, গ্রামের লেখাপড়ার ক্লাসের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে পেশাগত জ্ঞান ও দারিদ্র্যবিমোচনের নীতিমালা তুলে ধরা হয়। এ সম্পর্কে তিং বলেন,

'জন্মস্থান থেকে অন্যান্য এলাকায় স্থানান্তর করার ব্যাপারটি উদাহরণ দিয়ে বলি, কেন স্থানান্তর করতে হবে? এতে কি সুবিধা থাকে? সংশ্লিষ্ট লেখাপড়ার ক্লাসের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। আর সুগন্ধি মশলা চাষে কি কি প্রযুক্তি দরকার? বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ পেয়ে কৃষকরা এ বিষয়টি বুঝতে সক্ষম।'

দরিদ্র পরিবারের বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করার জন্য ৯ বছর মেয়াদি বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি, প্রিস্কুলের ২ বছর আর উচ্চবিদ্যালয়ের ৩ বছরের অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়েছে নুচিয়াং অঙ্গরাজ্যে।

এ সম্পর্কে ইউয়ুননান প্রদেশের সিশুয়াংবাননা তাই জাতির স্বশাসিত অঙ্গরাজ্যের সদস্য চাং মিন তাঁর মতামত প্রকাশ করেন। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতার কাজ করেন তিনি। বুলাং জাতির প্রতিনিধি হিসেবে তিনি মনে করেন, সংখ্যালঘু জাতির শিক্ষার ভিত্তি একটু দুর্বল। তিনি বলেন,

'আগামী বছর তিনটি মাধ্যমিক স্কুল নির্মিত হবে। তবে নির্মাণের পর শিক্ষক পাওয়া যাবে না, অর্থাত্ বাচ্চাদের পড়ানোর লোক পাওয়া যাবে না, এটি আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমাদের অঙ্গরাজ্যে বুলাং জাতির লোকসংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি, সরকারি কর্মকর্তা মাত্র ৯৫ জন। আমদের দক্ষ ব্যক্তি নেই। আমাদের জাতির মধ্যে অনেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে নি। উন্নত শহরের ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় আমাদের পরীক্ষার ফলাফল এত ভালো না, তাই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা খুবই কম।'

চীনের চলতি বছরের সরকারি কর্ম-বিবরণীতে শিক্ষার মাধ্যমে দরিদ্রতা দূর করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এ সম্পর্কে সদস্য লুও তাঁর প্রস্তাব পেশ করেন। তিনি বলেন,

'প্রথমে যথাযথভাবে শিক্ষার সম্পদ ভাগাভাগি করতে হবে, বোর্ডিং স্কুল-ব্যবস্থা চালু করে শিক্ষার সমতা বাস্তবায়ন করতে হবে। বাচ্চাদের সমান ও গুণগতমানের শিক্ষা গ্রহণে চেষ্টা করতে হবে। তাছাড়া,ব্যাপকভাবে জাতিগত শিক্ষা ও পেশাগত প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ জোরদার করতে হবে, ধাপে ধাপে মাধ্যমিক পেশাগত স্কুলের অবৈতনিক শিক্ষাদান বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে সংখ্যালঘু জাতির অধ্যুষিত এলাকা ও দরিদ্র এলাকার বাচ্চাদের পড়াশোনার সুযোগ বেড়ে যায়। বিভিন্ন উত্সাহজনক নীতিমালা চালু করে সংখ্যালঘু জাতির অধ্যুষিত এলাকা, দরিদ্র এলাকা ও সীমান্ত এলাকায় শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে, যাতের এতদাঞ্চলে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক বা ব্যক্তিদের আকর্ষণ করা যায়।'


1  2  3  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040