কাজাখস্তানের শিক্ষার্থীদের চীনে লেখাপড়ার গল্প এবং রাশিয়া ও তুরস্কে চীনা ভাষার ব্যাপক প্রচলন
  2019-02-25 18:03:47  cri

 


সাম্প্রতিক বছরগুলোতে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে চীনের আদান-প্রদান অনেক বেড়েছে। এতে বিভিন্ন দেশে চীনা ভাষা শেখার আগ্রহও ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। বিদেশি যুব শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় সহায়তা দেওয়ার জন্য চীনের সরকারি বৃত্তির সুযোগও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে কাজাখস্তানের শিক্ষার্থীদের চীনে লেখাপড়ার গল্প এবং রাশিয়া ও তুরস্কে চীনা ভাষার ব্যাপক প্রচলন নিয়ে কিছু তথ্য আপনাদের কাছে তুলে করবো।

চীনের সরকারি বৃত্তির সহায়তায় কাজাখস্তানের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ

২০১৩ সালে কাজাখস্তানের নাজারবায়েভ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার সময় 'রেশমপথ অর্থনৈতিক এলাকা'-র প্রস্তাব উত্থাপন করেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও)-র কাঠামোতে যুবকদের বিনিময় জোরদার করার উদ্দেশ্যে আগামী ১০ বছরের মধ্যে সংস্থার সদস্যদেশগুলোকে ৩০ হাজার বৃত্তির সুযোগ প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তারপর থেকে কাজাখস্তানের ছাত্রছাত্রীদের চীনে পড়াশোনা অনেক বেড়ে যায়। এ সম্পর্কে কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট তহবিলের বৈশ্বিক অর্থনীতি ও রাজনীতি গবেষণাগারের চীন-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ রুসলান ইজিমোভ বলেন,

'সংস্কৃতি ও জনগণের বিনিময় হলো কাজাখস্তান-চীন সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের কারণে দু'দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা অনেক বেড়েছে। ধারাবাহিক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রকল্প চালু হয়েছে। গত ৫ বছরে চীনে যাওয়া কাজাখ শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।'

চীনে নিযুক্ত কাজাখস্তান দূতাবাসের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক কাউন্সিলার খাইরাত আব্দরহমানোভ বলেন, বর্তমানে তাঁর দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা করছেন। তিনি বলেন,

'বর্তমানে চীনে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো বাড়ছে। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫২ জন শিক্ষার্থী চীনে এসেছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই চীনের সরকারি বৃত্তি, মহানগর ও প্রাদেশিক পর্যায়ের বৃত্তি পেয়েছেন।'

ইজিমোভ উল্লেখ করেন, চীনে আসা শিক্ষার্থীদের বাছাই করা প্রধান বিষয় (মেজর) কাজাখস্তানের উন্নয়নের সাথে জড়িত। এ সম্পর্কে কাউন্সিলার আব্দরহমানোভ বলেন,

'নতুন মেজরের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা অনার্স পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থী প্রযুক্তি-সম্পর্কিত মেজর বাছাই করেছেন। এআই, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, মহাকাশ বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানসংক্রান্ত প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন মেজর বাছাই করেন শিক্ষার্থীরা।'

২০১৭ সালে কাজাখস্তান সফরকালে চীনের সরকারি বৃত্তির সুযোগ বাড়ানোর ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। এর সঙ্গে সঙ্গে মধ্য-এশিয়ার বিভিন্ন দেশের জন্য চীনের দরজা খুলে দেওয়া হয়। ফলে চীনে লেখাপড়া করা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। বিমানবন্দরে ছেলেকে বিদায় জানিয়ে পিতামাতা বলেন,

'আমাদের দেশের ৬০ বা ৭০ শতাংশেরও বেশি ছাত্রছাত্রী বিদেশে লেখাপড়া করতে চায়। কেন আমরা চীনকে বাছাই করি? কারণ আমার ছেলে চীনকে পছন্দ করে আর চীনা ভাষার প্রতি সে অনেক আগ্রহী। চীন যাওয়ার ৬ মাস আগে থেকে সে চীনা ভাষা শেখা শুরু করে। আমার মনে হয় তার ভাষা শেখার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে, তাই সে চীনে লেখাপড়া করার আগ্রহ প্রকাশ করলে আমরা তাকে সমর্থন জানাই।'

কিছু কিছু পিতামাতা নিজের ছেলেমেয়েদের বিদেশে লেখাপড়ার পর তাদের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে চীনে সরকারি বৃত্তি নিয়ে লেখাপড়া করার পর স্নাতক হওয়ার পর কি চীনে চাকরি করতে হবে বা চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য সেবা দিতে হবে এমন প্রশ্ন করেন। এ সম্পর্কে কাউন্সিলার আব্দরহমানোভ বলেন,

'চীনের সরকারি বৃত্তি অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বিশেষ শর্ত তৈরি করেনি বেইজিং। চীনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করে স্নাতক হবার পর বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা নিজের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে সক্ষম। যদি শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চান, তাহলে তারা চীনে মাস্টার্স বা ডক্টরেট ডিগ্রির জন্যও আবেদন করতে পারেন। তাদের জন্য চীনের সরকারি বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ আছে। তাছাড়া, সংশ্লিষ্ট মেজরের শিক্ষার্থীরা নিজ দেশে চীনা পুঁজি বিনিয়োগকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতে পারেন।'

আব্দরহমানোভ আরো বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ আর 'শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা'-এ দুই পদ্ধতিতেও সংশ্লিষ্ট দেশের শিক্ষার্থীরা চীনের সরকারি বৃত্তি পেতে সক্ষম। তিনি বলেন,

'কাজাখস্তান 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে অংশগ্রহণকারী গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এ উদ্যোগ এবং শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্যদেশের কারণে কাজাখস্তানের শিক্ষার্থীরা চীনের সরকারি বৃত্তির আবেদন করতে পারেন।'

এ দুই পদ্ধতির মাধ্যমে মধ্য-এশিয়া ও রাশিয়ার অনেক শিক্ষার্থী চীনের সরকারি বৃত্তি পেয়েছেন। একজন শিক্ষার্থী বলেন,

'আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষে চীনা ভাষার ক্লাসে অংশ নেই। তখন থেকে চীনা ভাষার প্রতি আমার অনেক আগ্রহ তৈরি হয়। তাই চীনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। পরে আমি কাগজপত্রসহকারে চীনের সরকারি বৃত্তির আবেদন করি এবং অবশেষে তা পেয়ে যাই, আমি চীন সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।'

আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন,

'স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর আমি কাজাখস্তানে ফিরে যেতে চাই। চীন থেকে শেখা জ্ঞান দিয়ে কাজাখস্তানের পেট্রোল ও গ্যাস শিল্পের উন্নয়নে আমি অবদান রাখতে চাই।'

চীন-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইজিমোভ মনে করেন, শিক্ষার সহযোগিতা দ্বিপাক্ষিক সার্বিক কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়ক। তিনি বলেন,

'আমি বলতে চাই যে, 'এক অঞ্চল, এক পথ' কাঠামোতে কাজাখস্তানকে অনার্স, মাস্টার্স ও ডক্টরেট বৃত্তির সুযোগ দিয়েছে চীন। এসব পদক্ষেপ দু'দেশের বিনিময় ও যুবকদের সমঝোতার জন্য সহায়ক, পাশাপাশি তা দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সহযোগিতার জন্যও উপকারী।'


1  2  3  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040