ফিলিস্তিনে চীনা ভাষার শিক্ষকের কর্ম-জীবন, ফিলিস্তিনি সুরকার রামজি'র গল্প ও চিকত্সা বীমার মাধ্যমে চীনের দরিদ্র পরিবারের জীবন উন্নত করা
  2019-02-18 15:52:10  cri

চিকিত্সা বীমার মাধ্যমে চীনের দরিদ্র পরিবারের জীবন উন্নত করা

চীনের দরিদ্র গ্রামগুলো দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার পর অনেকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে আবার দারিদ্রসীমার নিচে ফিরে যান। এই সমস্যা দরিদ্র পরিবারের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানী বেইজিংয়ের নিকটবর্তী হোপেই প্রদেশের ছিছেং জেলায় সাক্ষাত্কার নেওয়ার সময় সংবাদদাতা স্থানীয় চিকিত্সা বীমা ব্যবস্থার সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপের খোঁজখবর নেন এবং দরিদ্র পরিবারের দারিদ্র্যমুক্তির অভিজ্ঞতাও সংগ্রহ করেন।

ছিছেং জেলার লুংকুয়ান উপজেলার তুউয়ানমুকৌ গ্রামটি পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত। বর্তমানে গ্রামটিতে ২৩৫টি পরিবার বাস করে। গ্রামটির মোট লোকসংখ্যা ৬৪০ জন। প্রাচীনকাল থেকেই এ গ্রামটি দরিদ্র। এখানে পানির অভাব ছিলো গুরুতর। গ্রামবাসীদের প্রতিদিন অনেক দূরে হেঁটে গিয়ে পানি আনতে হতো। গ্রামটির ৭৫ বছর বয়সী প্রবীণ ব্যক্তি ফান ওয়েন বাও অতীতকালের কথা স্মরণ করে বলেন,

'প্রাচীনকালে গ্রামে পানি ছিলো না, পাহাড়ের অন্য পাশে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার দূরে হেঁটে গিয়ে পানি আনতে হতো। প্রতিদিন ভোরে জেগে উঠে পানি আনা হতো। ১৯৭৮ সালে আমরা নতুন বাসায় উঠি। এখানে রাস্তা থাকায় যাতায়াত একটু সুবিধাজনক। বর্তমানে পানির সমস্যা সমাধান হয়েছে। এছাড়া, পরিবারের যুবকরা শহরে চাকরি করে। বর্তমানে আমাদের জীবন অনেক উন্নত হয়েছে।'

কঠোর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও দুর্বল অবকাঠামো ব্যবস্থাপনার কারণে স্থানীয় গ্রামবাসীরা দারিদ্র্যমুক্ত বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালান। স্থানীয় সরকার দারিদ্র্যমুক্তকরণের পদ্ধতিতে গ্রামবাসীদের সহায়তা দেয়। এ সম্পর্কে হোপেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দারিদ্র্যমুক্তকরণের সহকারী কর্ম-দলের সম্পাদক ওয়াং চুং হুয়া বলেন,

'বর্তমানে এ গ্রামে দারিদ্র্যমুক্তকরণের তিনটি কমিউনিটি রয়েছে। ছিংশান কমিউনিটি প্রধানত চীনা ভেষজ ওষুধ উত্পাদন ও বিভিন্ন পরিবারের কাছ থেকে ভেষজ ওষুধ সংগ্রহ করে।এ কমিউনিটির মাধ্যমে গ্রামের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৬৪০০ ইউয়ান, যা দারিদ্র্যমুক্তকরণের সীমা ৩২০০ ইউয়ানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে এ গ্রামে আর কোনো দরিদ্র পরিবার নেই, তবে তারা সহায়ক নীতিও গ্রহণ করতে পারেন।'

তুউয়ানমুকৌ গ্রামে বাসস্থান ও খাবারের সমস্যা প্রায় সমাধান হয়েছে। বাধ্যতামূলক শিক্ষা, মৌলিক চিকিত্সা ও নিরাপদ বাড়িঘরও নিশ্চিত হয়েছে এবং অবকাঠামো নির্মাণও ধীরে ধীরে উন্নত হয়েছে। এ সম্পর্কে জনাব ফান ওয়েন বাও বলেন,

'দারিদ্র্যমুক্তকরণের সহকারী কর্ম-দল আমাদের জন্য কুয়া নির্মাণ করেছেন, বাতি স্থাপন করেছেন। তারা চত্বর ও রাস্তা মেরামত করেছেন, এখন আমাদের গ্রাম শান্ত ও সুষম।'

নিজের পরিবারের জীবনযাপন সম্পর্কে জনাব ফান বলেন,কয়েক মাস আগে তাঁর স্ত্রী মেরুদণ্ডের সমস্যার কারণে চাংচিয়াখৌ শহরের হাসপাতালে অপারেশন করেন। এতে ৮০ হাজারেরও বেশি ইউয়ান খরচ হয়, তবে তাঁর পরিবার এতো অর্থ দিতে সক্ষম নয়। স্থানীয় অঞ্চলের চিকিত্সা বীমা ব্যবস্থার সহায়ক নীতিমালায় তিনি হাসপাতালটিকে প্রায় ১০ হাজার ইউয়ান প্রদান করেন। জনাব ফান বলেন,  

'আমার স্ত্রীর অপারেশনে মোট ৯০ হাজার ইউয়ান দরকার হয়। মৌলিক চিকিত্সা বীমা থেকে প্রায় ৭৫ হাজার ইউয়ান দেওয়া হয়। আর আমাদের নিজের খরচ প্রায় ১০ হাজার ইউয়ান। এখন তার শারীরিক অবস্থা বেশ ভালো। তিন মাস পর আমার জন্য রান্না করতে পারেন, বীমা না থাকলে তার চিকিত্সা করানো আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিলো না।'

ছিছেং জেলার উপ-প্রধান ওয়াং ইউ হুই বলেন, স্থানীয় দরিদ্র মানুষের মধ্যে রোগে আক্রান্ত হওয়া বা শারীরিক অক্ষমতার কারণে দরিদ্র হয়ে পড়ার পরিমাণ অর্ধেকেরও বেশি। এ অবস্থায় গ্রামে নতুন চিকিত্সা সহায়তা বীমা, গুরুতর রোগের বীমা ও চিকিত্সা সহায়তাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এর পাশাপাশি ব্যবসা বীমাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। জনাব ওয়াং ইউ হুই বলেন,

'২০১৫ সালে দরিদ্র লোকদের জন্য রেকর্ড তৈরি করার সময় দেখা যায়, রোগের কারণে দরিদ্রতার পরিমাণ ৩৪ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীর পরিমাণ প্রায় ১৬ শতাংশেরও বেশি। এ সমস্যা জানার পর সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করে স্থানীয় সরকার। গ্রামবাসীদের কল্যাণকর চিকিত্সা বীমার মাধ্যমে পুনরায় দারিদ্রসীমার নিচে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি সমাধান করা হয়েছে।'

বর্তমানে নানা পদ্ধতিতে দারিদ্র্যমুক্তকরণের সাফল্য নিশ্চিত করে থাকে চীন সরকার। যেমন- যারা চাকরি করতে পারেন, তাদের চাকরি বা কৃষি শিল্পের সাথে জড়িত কাজে উত্সাহ দেওয়া, যাদের শ্রম শক্তি দুর্বল, তাদের বন রক্ষাসহ বিভিন্ন কাজ করতে সহায়তা দেওয়া। এছাড়া, প্রবীণ বা অসুস্থ লোকদের জন্য সামাজিক বীমায় জীবনযাপন নিশ্চিত করা।

গ্রামের ৭২ বছর বয়সী প্রবীণ ব্যক্তি ইয়াং বিংয়ের কোনো সন্তান নেই, শ্রমশক্তিও নেই তাঁর। তবে তাঁর জীবনযাপনে কোনো সমস্যা নেই। তিনি বলেন,

'এখন আমার খাবারের কোনো সমস্যা নেই। কারণ চীন সরকার আমার মতো দরিদ্র মানুষকে বিশেষ অর্থ সহায়তা দেয়। প্রতি মাসে আমাকে ৫০০ ইউয়ান দেওয়া হয়। এছাড়া, চিকিত্সা বীমায় হাসপাতালে বিভিন্ন রোগের চিকিত্সা করাই। আমার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সব ওষুধ সরকার প্রদান করে থাকে। এ নীতিমালা খুবই ভালো।'

সম্প্রতি চীনের গ্রাম উন্নয়ন-বিষয়ক সম্মেলন আয়োজন করে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ। এতে গ্রামাঞ্চলের অবকাঠামোর দুর্বলতা ও জনসেবার দুর্বলতা পূরণের তাগিদ দেওয়া হয়।

চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছেন ছিয়ান হেং মনে করেন, চিকিত্সা সেবা হবে এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন,

'বর্তমানে খাবার ও বাসস্থানের সমস্যা মোটামুটি সমাধান করা হয়েছে। তবে দেখা যায়, অসুস্থতার কারণে গ্রামবাসীরা পুনরায় দরিদ্র হচ্ছেন। তাই চিকিত্সাসেবা ও গুরুতর রোগের চিকিত্সার ক্ষেত্রে সরকারের সহায়তার পরিমাণ আরো বাড়ানো অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের ব্যবসা বীমাও অতি প্রয়োজন।'

২০১৮ সালে চীনের আরো ১ কোটি লোক দারিদ্রমুক্ত হয়েছেন। ছিছেং জেলার মতো বিভিন্ন দরিদ্র গ্রামে বিভিন্ন সহায়ক নীতিমালার মাধ্যমে মানুষের সুন্দর জীবন বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০২০ সালে চীনের গ্রামের সব দরিদ্র মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হবেন বলে পরিকল্পনা করেছে চীন সরকার।

প্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানও এখানেই শেষ করতে হবে। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা শুনতে মিস করলে আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারবেন। ওয়েবসাইটের ঠিকানা: www.bengali.cri.cn

(সুবর্ণা/টুটুল)


1  2  3  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040