ফিলিস্তিনে চীনা ভাষার শিক্ষকের কর্ম-জীবন, ফিলিস্তিনি সুরকার রামজি'র গল্প ও চিকত্সা বীমার মাধ্যমে চীনের দরিদ্র পরিবারের জীবন উন্নত করা
  2019-02-18 15:52:10  cri

ফিলিস্তিনি সুরকার রামজি'র গল্প

জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে রামাল্লাহ'র আরাফাত জাদুঘরে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের সংঘর্ষ নিয়ে অনেক ছবি আছে। ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৮৭ সালে ফিলিস্তিনের প্রথম আন্দোলনে ইসরাইলি সেনাদের লক্ষ্য করে ফিলিস্তিনের একজন ছেলের পাথর নিক্ষেপ করার দৃশ্য অতি স্মরণীয়। এখন এ ছেলেটি বড় হয়ে উঠেছেন। তিনি এখন ফিলিস্তিনের অনেক জনপ্রিয় ও বিখ্যাত একজন সুরকারে পরিণত হয়েছেন। তাঁর নাম রামজি আবুরেদওয়ান।

প্রিয় শ্রোতা, এখন আমরা তাঁর গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।

১৯৭৯ সালে পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন রামজি। ছোটবেলা শরণার্থীর শিবিরে কাটান তিনি। ইসরাইলি সেনাদের লক্ষ্য করে তিনি যখন পাথর নিক্ষেপ করেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ৮ বছর। তখন তিনি অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে ফিলিস্তিনের প্রথম আন্দোলনে অংশ নেন। পাথর নিক্ষেপ করার মাধ্যমে প্রতিবাদ ও ঘৃণা প্রকাশ করেন তারা। একজন সাংবাদিক তাঁর ছবি তুলে পত্রিকায় প্রকাশ করার পর ছবিটি ব্যাপক সাড়া তৈরি করে। তিনি বলেন,

'আমরা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী প্রথমদলের বাচ্চা। ইসরাইলি সেনাদের বহিষ্কার করার জন্য তাদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করি। এদিন পাথর নিক্ষেপের সময় একজন সাংবাদিক গোপনে আমার এ ছবি তোলেন। কয়েক মাস পর আমি পত্রিকায় নিজের ছবি দেখতে পাই। পরে জাদুঘরে এ পত্রিকা প্রদর্শন করা হয়, যা দেশের প্রথম আন্দোলনের প্রতীক। এটি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি বাচ্চাদের প্রতিবাদের বড় আন্দোলন।'

রামজি আরো বলেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি সংগীত বেশ পছন্দ করেন। তবে শরণার্থী শিবিরে একজন বাচ্চার বেঁচে থাকাটাই বড় সমস্যা, এমন প্রেক্ষাপটে সংগীত শেখা অসম্ভব। তিনি এ স্বপ্ন মনের গভীরে রেখে প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবারের কাছে পত্রিকা পাঠিয়ে টাকা অর্জন করেন।

একবার পত্রিকা পাঠানোর সময় সোরাইদা হুসেইন নামের এক ম্যাডাম তাকে চিনতে পারেন। তিনি ফিলিস্তিনের একজন বিখ্যাত সামাজিক ব্যক্তি। তখন থেকে তিনি রামজিকে অর্থ সহায়তা দিতে থাকেন আর নিজের বাসার বাগান পরিষ্কারের কাজে তাঁকে নিযুক্ত করেন। ১৯৯৬ সালে সোরাইদার একজন সুরকার বন্ধু জর্ডান থেকে রামাল্লাহ্ সফর করতে আসেন। তখন থেকে রামজির সংগীতের স্বপ্ন পূরণ হতে থাকে। রামজি বলেন,

'আমার জীবনের একটি বড় স্বপ্ন সংগীত বাজানো। তবে আমার ছোটবেলা শরণার্থী শিবিরে কেটেছে, তখন আমি অনেক দরিদ্র, ওই অবস্থায় সঙ্গীত শেখা অসম্ভব। ১৯৯৬ সালে আমি একটি শ্রেষ্ঠ সুযোগ পাই। অসলো চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর তিউনিস ও জর্ডানে অভিবাসী ফিলিস্তিনিরা নিজের দেশে ফিরে আসতে পারে। তাদের মধ্যে একজন জর্ডান থেকে ফিরে আসেন। তিনি দেশের বাচ্চাদের জন্য একটি সংগীত স্টুডিও স্থাপন করতে চান। তিনি ম্যাডাম সোরাইদা হুসেইনের পরিবারের আত্মীয়। তার মাধ্যমে আমি স্টুডিওতে সংগীত শেখার সুযোগ লাভ করি। আমি ভায়োলা শিখেছি, তখন আমার জীবনে পরিবর্তনও চলে আসে।'

কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত করেন রামজি। তিনি ফিলিস্তিনের জাতীয় সংগীত স্কুলে লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি বৃত্তি নিয়ে ফ্রান্সে যান এবং সেখানে দক্ষ ভায়োলা শিল্পী হয়ে ওঠেন।

পরে ফিলিস্তিনে সংগীত দল গঠন করে দেশের ঐতিহ্যিক সংগীত সম্প্রসারণ করেন। তখন ফ্রান্সে বসবাস করলেও দেশের বাচ্চাদের সংগীত শেখার প্রতি তিনি ব্যাপক মনোযোগ দেন। তাঁর মতো ফিলিস্তিনি বাচ্চাদের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তিনি তহবিল সংগ্রহ করে ২০০৫ সালে আলকামান্দজাতি সংগীত স্কুল স্থাপন করেন। তিনি বলেন,

'ফ্রান্সে লেখাপড়ার সময় আমি ভেবেছি, কিভাবে দরিদ্র বাচ্চাদের সংগীত স্বপ্ন পূরণ করতে পারি। পরে আমি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আলকামান্দজাতি গঠন করি এবং ফিলিস্তিনে আলকামান্দজাতি সংগীত স্কুল প্রতিষ্ঠা করি, যাতে স্থানীয় বাচ্চাদের সংগীত স্বপ্ন পূরণ করা যায়। ২০০৫ সালে আমার এ সিদ্ধান্তকে অনেক বন্ধু সমর্থন করে। আমার সুরকার বন্ধুরা ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমাকে সাহায্য করেন। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রামাল্লাহ'র ৪০ জন শিক্ষার্থী এই স্কুল ভর্তি হয়। তখন শুধুমাত্র আমি একা সেখানে শিক্ষক হিসেবে কাজ করি। পরে আমাদের শিক্ষক সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ জনে। এসব শিক্ষকরা ফিলিস্তিন ও লেবাননের শরণার্থী শিবিরের ১০টি শাখা স্কুলে গান শেখান।'

কয়েক দশক বছর পর রামজি একজন সুরকারে পরিণত হন, তবে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের সংঘর্ষ এখনো চলছে। ইসরাইলি সেনাদের ওপর পাথর নিক্ষেপের ছবি দেখে তাঁর কি মনে হয়, এমন প্রশ্নের উত্তরে রামজি বলেন, বাচ্চাদের হুমকি দূর করা হলো বড়দের দায়িত্ব। তবে প্রত্যেকেরই বেঁচে থাকা ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অধিকার রয়েছে। যদিও তিনি আর পাথর নিক্ষেপ করবেন না, তবে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদী চিন্তাভাবনার কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুধু প্রতিবাদ প্রকাশের পদ্ধতির পরিবর্তন হয়েছে। রামজি বলেন,

'বাচ্চারা যদি সেনাদের সাথে লড়াই করে, তবে দখলকারী সেনারা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালাবে। বাচ্চারা এমন হুমকির কথা বুঝতে পারে না। তাই আমরা আশা করি সংগীত স্কুল তাদের জন্য একটি সুষম পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবে এবং বাচ্চাদের সুন্দর স্বপ্ন পূরণ হবে। সবাইকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রকাশ করতে হবে, তবে সংগীত, ছবি আঁকা বা খেলাধুলাসহ প্রতিবাদের অনেক পদ্ধতি রয়েছে। এমন পদ্ধতি বাচ্চাদের জন্য আরো নিরাপদ।'


1  2  3  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040