শিক্ষার উন্নয়নের মাধ্যমে চীনের দারিদ্র্যমুক্তকরণের সাফল্য, চীন-যুক্তরাষ্ট্র শিক্ষাবিনিময় জোরদারের উদ্যোগ এবং সিনচিয়াংয়ের মালামাল পরিবহন কোম্পানির কর্মীর গল্প
  2019-01-28 16:01:03  cri

সিনচিয়াংয়ের মালামাল পরিবহন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাহারের গল্প

৩০ বছর বয়সী উইগুর জাতির পুরুষ খাহার বেশ সুদর্শন, উঁচু ও পাতলা গড়নের। তিনি সিনচিয়াংয়ের একটি গ্রামের মালামাল পরিবহন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি চমত্কারভাবে চীনা ভাষা বলতে জানেন। তার আরেক নাম মা জুন। অঞ্চলটির মালামাল পরিবহন সেক্টরের সবাই তাকে প্রধান মা (মা জুন) বলে ডাকেন। সুং সিন লিয়াং আরেকটি মালামাল পরিবহন কোম্পানির প্রধান এবং তিনি খাহারের ব্যবসায়ীক অংশীদার। সুং বলেন,

'বিভিন্ন কাজ নিয়ে খাহারের ব্যাপক চিন্তাভাবনা আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাইরে হাঁটাহাঁটি করে ফিরে এসে তিনি আমার সাথে মালামাল সরঞ্জাম ও পরিবহন সেক্টরের ধারণা বিনিময় করেন। স্থানীয় অঞ্চলের লোক যারা এই ধরনের কোম্পানিতে চাকরি করেন, তাদের দূরের জায়গায় যাওয়ার সুযোগ তেমন নেই, তাই চিন্তাভাবনাও খুব প্রসারিত নয়। কেবল মালামাল পরিবহন সম্পর্কে খোঁজ রাখা আর বিশ্রাম নেওয়া, এই হলো তাদের কাজ। তবে খাহার সবসময় ব্যস্ত। মালামাল না থাকলে তিনি বাজারে নতুন মালামাল সন্ধান করেন। তিনি কখনো অলসভাবে বসে থাকেন না বা সময় নষ্ট করেন না।'

গ্রামে মালামাল পরিবহন করার আগে অনলাইনে ব্যবসায়বিষয়ক প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করেন খাহার। আগে চীনের বৃহত্তম জেলা ও গ্রামের ইলেকট্রনিক ব্যবসা সেবা প্ল্যাটফর্ম 'লেসুনথাও' সিনচিয়াং শাখা অফিসে চাকরি করতেন তিনি। তখন আবিষ্কার করেন যে, গ্রামে ছোট আকারের মালামাল পরিবহন কেউ করছে না। তখন তিনি মাসিক ১০ হাজারেরও বেশি ইউয়ানের চাকরি আর উরুমুচি শহরের উন্নত জীবন ছেড়ে গ্রামে জন্মস্থানে ফিরে যান। শূন্য থেকে গ্রামাঞ্চলে ছোট আকারের মালামাল পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এ সম্পর্ক খাহার বলেন,

'সিনচিয়াংয়ের ভৌগোলিক আয়তন বিশাল। বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে দূরত্ব কয়েক শো কিলোমিটার। তবে এ কারণে হামি থেকে তরমুজ কিনে অন্য শহরে নেওয়ার পর ক্রেতাদের হাতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তা সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমি ভাবি গ্রামে মালামাল পরিবহনের ব্যবসা করা উচিত। বড় কোম্পানি না করে এ ছোট আকারের মালামাল পরিবহন করে নিজের কোম্পানি ও ব্র্যান্ড তৈরি করেছি।'

খাহার মনে করেন, গ্রামে ভালোভাবে মালামাল পরিবহন নিজের ব্যবসা সৃষ্টি আর স্বপ্ন পূরণের সবচেয়ে চমত্কার পদ্ধতি। ব্যবসা সৃষ্টির এ দৃঢ়বিশ্বাস চীনের উন্নত শহরে লেখাপড়ার শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতার সাথে জড়িত। খাহার বলেন,

'উন্নত শহরে লেখাপড়ার কারণে আমার চিন্তাভাবনার পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। আমি মনে করি নিজের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে আমার জন্মস্থান ও মাতৃভূমির উন্নয়ন করবো। চীন সরকার ও কমিউনিস্ট পার্টির যত্নে আমি বড় হয়েছি। এ যত্ন না পেলে আমি জীবনে সুখ পেতাম না। আমার ক্লাসের মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি সহপাঠী সিনচিয়াংয়ে জন্মস্থানে ফিরে গেছেন। আমরা নিজেদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জন্মস্থানের উন্নয়নে অবদান রাখছি।'

উছিয়া জেলার খুছে এলাকার উপকণ্ঠ অঞ্চলে খাহারের জন্ম। দুই শতাধিক পরিবারের এ গ্রামে খাহার ছোটবেলা থেকে হান জাতির বন্ধুদের সাথে বড় হন। বিভিন্ন উত্সবে তারা পরস্পরের বাসায় খেলাধুলা করেন। ছোটবেলায় খাহার হান জাতির প্রবীণদের বাসায় গিয়ে তাদের দেওয়া সহায়তা গ্রহণ করেন। কারণ বাবা মা অসুস্থতার কারণে মারা যাওয়ার পর প্রতিবেশী পরিবারের সাহায্যে খাহার ও তার ভাই বোন বড় হয়ে ওঠেন। খাহারের প্রতিবেশী ছাং তে সাং বলেন,

'আমাদের যত্নে এ বাচ্চা বড় হয়েছে। তাঁর বাবা মা অনেক আগে মারা যান, দরিদ্রতার মধ্য দিয়ে কষ্ট করে বড় হওয়া তাঁর জন্য অতি কঠিন ব্যাপার।'

আঞ্চলিক সরকার ও প্রতিবেশীদের সাহায্যে, খাহার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় শেষ করে ২০০১ সালে চিয়াংসু প্রদেশের সুচৌ সিনছু এক নম্বর উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি তার এলাকা থেকে চিয়াংসুতে যাওয়া ১৬ জন শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন। ছোটবেলার জীবনযাপনের কথা স্মরণ করে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন খাহার। তিনি বলেন,

'আমার পরিবারে যখন অর্থ ছিলো না, তখন আমার প্রতিবেশী আমাকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন। বিদ্যালয় আমার থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন খরচ প্রদান করে। সিনচিয়াংয়ে উন্নত শহরের শিক্ষকরা আসার পর আমাকে কিছু ভর্তুকি দেন। এভাবে তিন বছরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া সম্পন্ন করি। উচ্চবিদ্যালয়ে অন্য সহপাঠীদের প্রতি বছর ৯০০ ইউয়ান দিতে হয়, তবে বিদ্যালয় আমার সব খরচ বাতিল করে, এবং প্রতিমাসে আমাকে কিছু নগদ অর্থ সহায়তা দেয়।'

খাহারের স্মৃতিতে সুচৌতে বৃষ্টি ও মশা অনেক বেশি, তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহপাঠীদের যত্ন খুবই স্মরণীয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ও বিভিন্ন উত্সবে শিক্ষক ও সহপাঠীর বাসায় তিনি আনন্দময় সময় কাটিয়েছেন। বিদ্যালয় মাঝে মাঝে সিনচিয়াং থেকে উইগুর জাতির পাচককে আমন্ত্রণ জানায় আর উইগুর বাচ্চাদের জন্য বিরানি ও নুডুলসসহ বিভিন্ন মজার খাবার আয়োজন করে। তিনি বলেন,

'সুচৌতে আমি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করি। এখানে লেখাপড়ার মাধ্যমে আমার মূল্যবোধ ও জীবনের পরিবর্তন ঘটে। আমার চিন্তাভাবনা প্রসারিত হয়। ছোটবেলায় সিনচিয়াংয়ের গ্রামে বড় হয়েছি, কখনো ভাবিনি আমি এত উন্নত শহর, এত উঁচু ভবন ও আধুনিক কম্পিউটার দেখতে পাবো।'

খাহার বলেন, জন্মস্থানে তিনি কখনো ইন্টারনেট সম্পর্কে জানতেন না, তবে তিনি সুচৌতে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছেন। এভাবে লেখাপড়ার বিষয় সহজভাবে বোঝা যায়, পাশাপাশি লেখাপড়ার দক্ষতা ও আগ্রহও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। উচ্চবিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে তিনি হুয়াচোং নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স চলাকালে তিনি একটি কোম্পানি চালু করেন এবং স্নাতক হওয়ার পর স্বপ্ন নিয়ে সিনচিয়াংয়ে ফিরে যান। তিনি বলেন,

'চীনের অন্যান্য শহরে চাকরি করা অবশ্যই ভালো, তবে আমার মনে হয় জন্মস্থানের আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী আমার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সিনচিয়াং ফিরে এসে জন্মস্থানের উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই।'

২০১৭ সালের জুলাই মাসে খাহারের গ্রামে মালামাল পরিবহন কোম্পানি চালু হয়। তখন শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত মালামাল পরিবহনের ব্যবসা অনেক ব্যস্ত হয়ে ওঠে। দেড় বছরের উন্নয়নে কোম্পানির কর্মীর সংখ্যা ২ জন থেকে ১০ জনে পৌঁছায়। প্রতিদিন ১০ ঘন্টারেরও বেশি সময় কাজ করেন খাহার, নিজেই মালামাল পরিবহন ও গাড়ি চালান তিনি। নতুন বছরে খাহারের নতুন উদ্দেশ্য হল দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের প্রতিটি জেলায় শাখা কোম্পানি চালু করা, ছোট আকারের মালামাল পরিবহনের পরিবর্তন ব্যাপকভাবে উন্নত করা এবং বিভিন্ন কৃষিজাত দ্রব্যের পরিবহনের সময় অর্ধেকে হ্রাস করা, এবং সবশেষে গ্রামাঞ্চলে মালামাল পরিবহন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।

সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়, আমাদের আজকের অনুষ্ঠানও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে এলো। আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে চিঠি লিখতে ভুলবেন না।

আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn, caoyanhua@cri.com.cn, আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা bengali.cri.cn, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট cribangla

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই দিনে একই সময়ে আবারো কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল)


1  2  3  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040