চীন-যুক্তরাষ্ট্র শিক্ষাবিনিময় জোরদারে দু'দেশের বিশেষজ্ঞদের উদ্যোগ
২০১৯ সালে চীন-যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় কার্টার সেন্টারে এক বিশেষ সেমিনার আয়োজিত হয়। তাতে গত শতাব্দীর ৮০ দশকে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়ন করা চীনা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারকে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে দু'দেশের যৌথ উদ্যোগে শিক্ষাবিনিময় জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়।
জনাব পান ই ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক। সেমিনারে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চীনা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে সাবেক প্রেসিডেন্ট কার্টারকে দেওয়া চিঠিটি পড়ে শোনান। চিঠিতে বলা হয়, "চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট তেং সিয়াও পিংয়ের সহায়তা ছাড়া চীনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পাওয়া সম্ভব ছিলো না, আর প্রেসিডেন্ট কার্টার ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা ছিলো অসম্ভব। দু'জনের প্রতি আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।"
জনাব পান ই'র মতো মিস হুয়াং হুইও গত শতাব্দীর ৮০ দশকে যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করেন। আটলান্টায় ক্যানসার জিন সম্পর্কিত গবেষক হিসেবে চাকরি করেন তিনি। মিস হুয়াং হুই বলেন,
'আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা না হলে এখানে আমার লেখাপড়া ও জীবনযাপনের সুযোগ হতো না। এ প্রেক্ষাপটে আমাদের ভবিষ্যত জীবন পরিবর্তন হয়েছে।'
জিমি কার্টার ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ৩৯তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর কার্যমেয়াদে চীন-যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর চীন-যুক্তরাষ্ট্র ইশতাহার স্বাক্ষরিত হয়, ১৯৭৯ সালের পয়লা জানুয়ারি দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকীতে চীনা গণমাধ্যমের কাছে সাক্ষাত্কার দেন জিমি কার্টার। তখন তিনি বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিজ্ঞান উপদেষ্টা ফ্রাঙ্ক প্রেস চীন সফরকালে তাঁকে ফোন করেন। তত্কালীন চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী তেং সিয়াও পিং পাঁচ হাজার চীনা শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়ার প্রস্তাব করেন। তিনি এ প্রস্তাবে রাজি হন। তিন চীন থেকে ১ লাখ ছাত্রছাত্রী আসার অনুমোদন দেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীনা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মার্কিন আন্তর্জাতিক শিক্ষা সমিতি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ২০১৮ সালের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১৮ পর্যন্ত ৩.৬ লাখেরও বেশি চীনা শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন, আর এ সংখ্যা ২০১৬ সালের চেয়ে ৩.৬ শতাংশ বেশি। যা যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীর মোট সংখ্যার ৩৩ শতাংশ।
তবে ২০১৮ সাল থেকে হাইটেকপ্রযুক্তি বিষয়ক চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসার মেয়াদ কমিয়ে দেয় মার্কিন সরকার। এ নীতিমালার বিরুদ্ধে সেমিনারে মার্কিন ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত খুনশান-ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যারি বুলোক বলেন, চীনা শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়া দু'পক্ষের জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেন,
'আমরা জানি মার্কিন শিক্ষা মহলের ব্যক্তিরাও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে যে, চীনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের স্থিতিশীল উন্নয়ন, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতসহ বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আজকের সেমিনারে অংশগ্রহণকারী চীনা প্রতিনিধিরা এর প্রমাণ। পাশাপাশি তাঁরা চীনের উন্নয়নেও অবদান রেখেছেন।'
চীন-মার্কিন শিক্ষা বিনিময় বিষয়ক সাব-ফোরামে অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন, যদিও চীন-যুক্তরাষ্ট্র শিক্ষাবিনিময়ের সহযোগিতার পদ্ধতি ও আওতা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, তবে গত ৪০ বছরে অর্জিত দু'দেশের শিক্ষাবিনিময়ের শ্রেষ্ঠ সাফল্যকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলার মাধ্যমে শিক্ষাবিনিময় দু'দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে বলে আশা করেন ম্যারি বুলোক। তিনি মনে করেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা হবে সমস্যা সমাধানের সঠিক পথ। তিনি বলেন,
'বর্তমানে রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধতা অস্পষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা ব্যাপক সহযোগিতায় মানবজাতির সম্মুখীন সমস্যা সমাধান করেন। গত ৪০ বছরে চীন-মার্কিন শিক্ষাবিনিময় অতি সাফল্যমণ্ডিত, ভবিষ্যতে তা অব্যাহত থাকবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। চীন-যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।'