বিদ্যুত্ সরবরাহ স্টেশনের পরিচালক আবুদলিমিত মেমেতের গল্প
আবুদলিমিত মেমেতের জন্মস্থান সিনচিয়াংয়ের হামি জেলায়। ২০১৪ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর শাংহাইয়ের বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে দিয়ে জন্মস্থানে ফিরে যান। ২০১৬ সালে হামি বিদ্যুত্ সরবরাহ কোম্পানিতে দু'বছরের মতো কাজ করার পর তিনি আরো দূরবর্তী বিদ্যুত্ সরবরাহ স্টেশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং তখন থেকে তিনি এ দূরবর্তী এলাকায় থাকেন। তিনি বলেন,
'বিদ্যুত্ কোম্পানি তখন একটি দাবি করে যে, প্রতিটি দূরবর্তী এলাকার বিদ্যুত্ স্টেশনে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক দরকার, তবে এই স্টেশনে যাওয়ার মতো কেউ নেই। এ স্টেশন খুবই দূরবর্তী, তখন আমি ভাবি যে যত বেশি পরিশ্রম হবে, তত বেশি দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হবো, তাই আমি উবাও বিদ্যুত্ সরবরাহ স্টেশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।'
উবাও বিদ্যুত্ স্টেশনের আওতাভুক্ত এলাকার আয়তন ১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। স্টেশন থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রামের দূরত্ব ২১০ কিলোমিটার। একবার বিদ্যুত্ লাইন চেক এবং মেরামতে টানা ১০ ঘন্টা সময় লাগে।
এ স্টেশনে পৌঁছার এক বছরের মধ্যে আবুদলিমিত পরিচালকের দায়িত্ব পান। তখন তার বয়স মাত্র ২৭ বছর, কেউ কেউ তাকে 'বাচ্চা পরিচালক' বলে ডাকে। তবে তিনি ১১জন কর্মী নিয়ে গুণগতমানের বিদ্যুতের নিরাপদ সরবরাহ সম্পন্ন করেন এবং ব্যবহারকারীদের চাহিদা ও সমস্যা সমাধান করেন। হামি বিদ্যুত্ সরবরাহ কোম্পানির একজন উপ-পরিচালক চাং ইয়ান ফু বলেন,
'একবার স্থানীয় গ্রামবাসীর ফোন পেয়ে আবুদলিমিত ও তার কর্মীরা কম সময়ের মধ্যে সেখানে পৌঁছে যান। সবকিছু চেক করার পর জানা যায় যে, ব্যবহারকারীর দোষের কারণেই বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ হয়েছে, তাই এ মেরামত কাজ সেই ভদ্রলোকটিকে করা উচিত। তবে ব্যবহারকারী একজন প্রবীণ মানুষ, বাসায় কেউ নেই, এ অবস্থা দেখে আবুদলিমিত তাকে সাহায্য করেন এবং বিদ্যুত্ লাইনও মেরামত করেন।'
আবুদলিমিতের কাজ স্থানীয় গ্রামবাসী ও স্টেশনের কর্মীদের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। তার নতুন লক্ষ্যমাত্রা হল স্থানীয় বিদ্যুত্ স্টেশনের কর্মীদের সাথে সেবার মান আরো উন্নত করা এবং বিদ্যুত্ স্টেশনের 'ফাইভ স্টার' পুরস্কার অর্জনে চেষ্টা চালানো। হামি বিদ্যুত্ সরবরাহ কোম্পানি'র মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক হু আন পিং বলেন, আবুদলিমিতের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের কারণে তাকে এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হু বলেন,
'আবুদলিমিত চীনা ভাষা ভালোভাবে পড়তে পারেন এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণের কারণে তার চিন্তাভাবনাও বেশি। নতুন বিষয় শেখার দক্ষতাও চমত্কার। তাই তাকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।'
২০০০ সালে চীন সরকারের উদ্যোগে সিনচিয়াংয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য চীনের উন্নত শহরে লেখাপড়ার সুযোগ প্রদানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা উন্নত উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে সক্ষম। তখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে প্রথমবারের মতো বাবার সাথে বেইজিংয়ে বেড়াতে যান আবুদলিমিত। তিনি বলেন,
'১০ বছর বয়সে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে আমি বাবার সাথে বেইজিংয়ে যাই। তখন উঁচু উঁচু ভবন আমার মনে গভীর প্রভাব ফেলে। তখন আমার জন্মস্থানে খুবই কম গাড়ি দেখা যায়। বেইজিংয়ের মতো বড় শহরে লেখাপড়া করা কত আনন্দের ব্যাপার।'
২০০৬ সালে ১৬ বছর বয়সে আবুদলিমিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় শেষ করে বেইজিং শুন'ই এলাকার ইয়াংচেন উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তার বাবা জনাব মেমেতও সিনচিয়াং হামি এলাকার একজন শিক্ষক। বাবার কাছে ছেলের বেইজিংয়ে শ্রেষ্ঠ উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া অতি চমত্কার ব্যাপার। তিনি বলেন,
'হামিতে আমি শুধু বই ও বোর্ডে চক দিয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করাই। তবে বেইজিংয়ে বাচ্চারা বহুমুখী মিডিয়া ক্লাসরুমে লেখাপড়া করে, তা খুবই উন্নত ও ভালো। সিনচিয়াং কবে এমন উন্নত মানে দাঁড়াতে পারবে?'
বেইজিংয়ে তিন বছরে উচ্চবিদ্যালয়ে চমত্কারভাবে লেখাপড়া সম্পন্ন করেন আবুদলিমিত। পরে শাংহাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। স্নাতক হওয়ার সময় জার্মান বিদ্যুত্ ও গ্যাস শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পান এবং চাকরির সুযোগও দেওয়া হয়। তবে তিনি জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন,
'আমার কাঁধে বড় দায়িত্ব আছে, তা হল সিনচিয়াংয়ে ফিরে জন্মস্থান নির্মাণ করা। আমার জন্মস্থানে দক্ষ ব্যক্তির অভাব, তাই বিভিন্ন উন্নয়নের সুযোগের মাধ্যমে আমার দক্ষতা সেখানে ছড়িয়ে দিতে এবং কাজে লাগাতে চাই।'