0121edu
|
২০১৮ সালে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালুর ৪০তম বার্ষিকী পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে সম্প্রতি সিআরআইয়ের সাংবাদিকরা সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে গিয়ে স্থানীয় উইগুর জাতির লোকদের জীবনযাপন নিয়ে সাক্ষাত্কার নিয়েছেন, সবার সামনে তুলে ধরেছেন কয়েকজন উইগুর পেশাজীবীর গল্প। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা বিভিন্ন পেশার কয়েকজন লোকের গল্প শোনাবো।
২০০০ সালে চীন সরকারের উদ্যোগে সিনচিয়াংয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য চীনের উন্নত শহরে লেখাপড়ার সুযোগ প্রদানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর অঞ্চলটির বিভিন্ন জাতির ৯০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছেন, তাদের মধ্যে ৩০ হাজার কর্মসংস্থানে যোগ দিয়েছেন। তারা সিনচিয়াংয়ের সামাজিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
রেখান গুলি তাদের মধ্যে একজন। সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বোল্টা মঙ্গোলিয়ান স্বশাসিত রাজ্যের বোলে শহরের একটি আবাসিক এলাকায় স্থানীয় অঞ্চলের কয়েকজন প্রবীণ গাছের নিচে বসে কথাবার্তা বলছেন। গোল মুখ ও বড় চোখের উইগুর জাতির মেয়ে গুলিকে দেখে তারা তার সাথে কথা বলেন।
ক. 'গুলি আসছে, ব্যস্ত কিনা?'
গুলি: হ্যাঁ, মোটামুটি। এ বছরের শারীরিক পরীক্ষা তাড়াতাড়ি শুরু হবে, তখন আমি আপনাদের জানাবো, অবশ্যই অংশ নিবেন।'
ক. 'আচ্ছা, ঠিক আছে।'
রেখান গুলি বোলে শহরের ছিংতালা রাস্তার থিয়ানশান কমিউনিটির একজন সমাজকর্মী। ২০০৮ সালে ১৫ বছর বয়সে গুলি চীনের চিয়াংসু প্রদেশের ইয়ানছেং শহরের একটি শ্রেষ্ঠমানের উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তারপর সফলভাবে থিয়ানচিন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১৫ সালের অগাস্ট মাসে তিনি জন্মস্থানে ফিরে যান। এ সম্পর্কে গুলি বলেন,
'চিয়াংসুতে আমি বিনা খরচে চার বছরের মতো লেখাপড়া করেছি, পাশাপাশি অতিরিক্ত কিছু ভর্তুকিও পেয়েছি। এমন সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পর আমি ভাবি যে, স্নাতক হওয়ার পর অবশ্যই জন্মস্থানে বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাবো এবং সমাজের জন্য আমি অবদান রাখবো।'
বোলে শহরে ফিরে আসার পর গুলি একটি মালামাল পরিবহন কোম্পানিতে চাকরি নেন। এক বছর পর তিনি মনে করেন, শুধু টাকা উপার্জন তার প্রত্যাশা নয়, বরং আরো তাত্পর্যপূর্ণ কাজ করা উচিত। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি থিয়ানশান কমিউনিটির একজন সমাজকর্মী হিসেবে নতুন চাকরি পান। কমিউনিটির কাজ ছোট হলেও তা স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনযাপনের সাথে জড়িত। তাই স্থানীয় অধিবাসীদের সেবা করা এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করাকে নিজের দায়িত্ব বলে মনে করেন গুলি। কারো বাসার টেলিভিশন নষ্ট, কারো বাইরে কুকুরের কারণে ঘুমে ব্যাঘাত বা কারো আইডি কার্ড বিষয়ে আবেদন ইত্যাদি বিষয়ে তিনি সবাইকে আন্তরিকভাবে সহায়তা দেন। গুলি বলেন,
'আমার ক্লাসের শিক্ষক সবসময় আমাদের বলতেন, তোমার মনোভাব কাজের ফলাফলের সাথে জড়িত। উচ্চবিদ্যালয় থেকে আমি এ কথা মনে রেখে জীবন বা কর্মে মনোযোগ দিয়ে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করি। যখন আমি চেষ্টার মাধ্যমে অন্যের সমস্যা সমাধান করতে পারি তখন অনেক গর্ববোধ করি। আমি যাদেরকে সাহায্য করছি, তারা আমাকে মনে রাখবেন এবং অন্যদেরকে আমার গল্প জানাবেন। এ কথা শুনলে অনেক আনন্দ পাই।'
গুলির তত্ত্বাবধানে হুয়াংহো আবাসিক এলাকায় ৭৮ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধা আছেন, তার নাম চাও আই লিয়ান। এক বছর আগে তিনি মেরুদণ্ডে অপারেশন করেন। এর পর থেকে তিনি ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তার ছেলে-মেয়েও চাকরির কারণে নিয়মিত তাকে দেখাশোনা করতে পারেন না। তাই প্রতি বার এ আবাসিক এলাকায় এসে ওই বৃদ্ধা চাওকে দেখেন গুলি।
বৃদ্ধা চাওয়ের বাসায় ঢুকে আন্তরিকভাবে তার খোঁজখবর নেন গুলি। চাও হাসিমুখে গুলির অনেক প্রশংসা করেন। তিনি বলেন,
'আমরা নিয়মিত কথা বলি। এ মেয়ে খুবই ভালো, আমাদের প্রবীণদের যত্ন নেয়। আমার অপারেশনের পর সবসময় আমাকে দেখতে আসে। যখন আমি হাঁটতে না পারি, তখন মোটর গাড়িতে আমাকে সে সহায়তা দেয়। মাঝে মাঝে আমার জন্য তরমুজসহ বিভিন্ন ফল কিনে আনে, সে খুবই ভালো।'
আন্তরিক সেবা দেওয়ার কারণে আবাসিক এলাকার নাগরিকদের আস্থা ও প্রশংসা পেয়েছেন গুলি। ২০১৭ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ সমাজকর্মী হিসেবে নির্বাচিত হন।
গুলি হোস্টেলে থেকে চাকরি করেন। ছুটির সময় তিনি বাসায় ফিরে যান। বাসায় যাওয়ার পথে তিনি সাংবাদিককে বলেন, তার ছোট ভাই সম্প্রতি আনহুই প্রদেশের পেশাগত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক হয়েছেন। তার লেখাপড়ার প্রধান বিষয় গাড়ি মেরামত। তিনি আশা করেন স্থানীয় অঞ্চলের কারখানায় তার ভাই চাকরি পাবে। ভাই-বোনের নিজ নিজভাবে চাকরি পাওয়া বাবা মায়ের জন্য সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার। সুমু গ্রামে পৌঁছে একটি বড় প্রাঙ্গণের সামনে গাড়ি থেকে নেমে গুলি দৌড়ে বাবা মায়ের কাছে যান।
বাবা মায়ের সামনে গুলি অন্য ছোট মেয়েদের মতোই হাসিখুশি আর আনন্দ করেন। বাবা মায়ের সঙ্গে বিছানায় বসে গল্প শুরু করেন। চিয়াংসু প্রদেশের উচ্চবিদ্যালয়ে গুলির লেখাপড়ার গল্পের কথা স্মরণ করে মা আইনসাগুল বলেন,
'আমি চিন্তা করি যে, সে জামাকাপড় পরিষ্কার করতে পারে না, প্রতিবার তাকে ফোন করি, সে সবসময় কান্নাকাটি করে। তখন আমার মন অনেক খারাপ হয়ে যায়। তার বাবা আমাকে বলে, কেন তুমি কান্না করো? সে এমন লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে, তা খুবই চমত্কার ব্যাপার। পরে গুলিও বিদ্যালয়ের জীবনযাপনের সঙ্গে মিশে গেছে, তখন আমার কোনো চিন্তা নেই।'
গুলির বাবা জনাব রহমত মেয়ের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে অনেক সমর্থন দেন। তিনি মনে করেন, তার মেয়ের বাইরের বিশ্বকে জানা এবং আরো বেশি জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা উচিত। তিনি বলেন,
'আমরা সিনচিয়াংয়ের বাইরে কোথাও যাই নি। তবে আমার মেয়ে শাংহাই, বেইজিং গিয়েছে। যদি সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ না করতো,তাহলে অল্প বয়সে তার বিয়ে হয়ে যেতো। তবে এখন শিক্ষিত হওয়ার পর অনেক বিষয় নিয়ে তার নিজস্ব চিন্তাভাবনা রয়েছে।'
বাবা মায়ের মুখের হাসি দেখে গুলি অনেক খুশি ও আনন্দ পান। গুলি বলেন,
'আমার ছোটবেলায় প্রতিটি কাজ করার উদ্দেশ্য বাবা মাকে খুশি করা। এখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর ভালো চাকরিও পেয়েছি। স্থানীয় লোকদের সেবা করার পাশাপাশি আমার স্বপ্ন সবই পূরণ হয়েছে। তা ভেবে অনেক গর্বিত।'