সুর ও বানী: চীনের বিখ্যাত গীতিকার ইয়ান সু
  2016-02-18 19:43:27  cri

১৯৮৬ সালে ইয়ান সু শেনইয়াং বিমান বাহিনীর শিবিরে যান। তিনি ওখানে বেশ কিছুদিন সৈনিকদের সঙ্গে থাকেন। সৈনিকরা মনের কথা, দুঃখ-বেদনার কথা তাকে বলতেন। তিনি তা শুনে ভেবেছেন, সৈনিকদের উত্সাহ দেয়ার জন্য একটি গান লিখবেন।

তিনি বলতেন, 'আমি এ বিশ্বে আসার সময় যুদ্ধের মাঠে যেতে চাই নি। কেবল যুগের প্রয়োজনে আমি বন্দুক হাতে নিয়েছি। ধনী হওয়ার কত সুযোগ এসেছে জীবনে। কিন্তু তা গ্রহণ করিনি। সুন্দর পোশাক ফেলে সবসময় সামরিক পোশাক পড়েছি। আমিও তারকা হতে পারতাম। সব জায়গায় গেলে ফুল ও হাততালি পেতে পারতাম। আমিও ব্যবস্থাপক হতে পারতাম। কিন্তু আমি এ জন্য পরিতাপ করি না। আমি স্পষ্ট জানি, এ দেশের আমাদের দরকার। আমরা না থাকলে সুন্দর দেশ কল্পনা করা যায় না।

ইয়ান সু বিমান বাহিনীর একজন অফিসার ছিলেন। তিনি ৬০ বছর ধরে দেশ, পাটি ও জনগণের জন্য গান লিখেছেন। তার গান রচনার মূল উদ্দেশ্য হলো শ্রোতাদের কানে তার গান ছড়িয়ে দেওয়া। পরিষ্কার ঝরণার পানির মতো জনতার মনে তা বয়ে বেড়াবে।

চীনের জনপ্রিয় শিল্পী না ইয়াং 'ধোয়ার মধ্যে ফুল দেখা' নামের গানটি গেয়েছেন। আমি আগে এ গানটিকে প্রেমের গান বলে মনে করতাম। পরে জেনেছি, চীনের ট্রেডমার্ক আইন প্রকাশের দশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এক সান্ধ্য পার্টির জন্য ইয়ান সু এ গানটি রচনা করেন।

এ গানে বলা হয়েছে, 'এ পরিবর্তনশীল বিশ্বে ফুল ফোটে এবং বিলীন হয়ে যায়। মিষ্টি কথা সবার শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু কোনো কথা সত্যি, কোনো কথা মিথ্যা। আমাকে সূক্ষ্ম দৃষ্টি দাও। আমি এ সব ব্যাপার পরিষ্কারভাবে দেখতে চাই।'

ইয়ান সু চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের জন্যও গান লিখেছেন। যেমন, জনপ্রিয় টিভি নাটক 'পশ্চিমাঞ্চলে ভ্রমণ'-এর প্রধান গান 'সাহস করে জিজ্ঞেস করি রাস্তা কোথায়' ইয়ান সু'র সৃষ্টি। এ গানটি তত্কালীন সময়ের একটি জনপ্রিয় গান। ইয়ান সু'র নাম এ গানের সাথে সাথে চীনের হাজার হাজার পরিবারে ঢুকে পড়েছে।

এক সাক্ষাত্কারে ইয়ান সু বলেছেন, টিভি নাটক 'পশ্চিমাঞ্চলে ভ্রমণ' তৈরির সময় বেশ কয়েকজন সুরকার ও লেখক এ নাটকের প্রধান গান লেখার জন্য অনুরোধ পেয়েছেন। কিন্তু পরিচালক ইয়াং চিয়ে  গানগুলো দেখে সন্তোষ্ট হননি। ফলে আমাকে ডেকেছেন। আমি বাসায় বসে দু'সপ্তাহ ধরে চিন্তা করেছি। কিন্তু কোনো ফল হয়নি।

একদিন আমার ছেলে আমাকে বললো, 'তুমি রুমে হাঁটতে হাঁটতে একটি পথ সুগম হয়েছে। আরো হাঁটো না'। ওর এই একটি কথা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। লেখক লু শুন বলেছিলেন, 'মাঠে পথ ছিলো না, হাঁটার লোক বেশি হলে আস্তে আস্তে পথ হয় যায়।' এটা হলো এ গানের মূল বিষয়।

শ্রোতাবন্ধুরা, এবার শুনুন চিয়াং দা ওয়েই'র গাওয়া 'সাহস করে জিজ্ঞেস করি পথ কোথায়' নামের গানটি।

ইয়ান সু'র অনেক কাজই চীনের জাতীয় পর্যায় বা সামরিক মহলের নানা পুরস্কার পেয়েছে। তার রচিত গান 'সুদীর্ঘ মহাপ্রাচীর' গত শতাব্দীর ৯০'র দশকে সৈনিকদের সবচেয়ে প্রিয় সামরিক গানের বিশেষ পুরস্কার লাভ করে। এ গানে বলা হয়েছে, সবাই বলে, মহাপ্রাচীরের দু'পাশ হলো জন্মস্থান। তুমি কী জানো, মহাপ্রাচীরের দৈর্ঘ্য কত? তুমি যদি জিজ্ঞেস করো, মহাপ্রাচীর কোথায়? তাকিয়ে দেখো, সামরিক পোশাক পড়া এক একজন সৈন্য ঘুরছেন তোমার চারপাশে। তারা হলেন চীনের আসল মহাপ্রাচীর। তারা চীনা জনগণের মনের মাঝে বসবাস করেন।

সুপ্রিয় শ্রোতা, এবার শুনুন কণ্ঠশিল্পী তোং ওয়েন হুয়ার গাওয়া 'সুদীর্ঘ মহাপ্রাচীর' নামের গানটি।

1 2 3
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040