২০০১ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান জুয়ান আন্টোনিও সামারাঞ্চ ২০০৮ সালের ২৯তম অলিম্পিক গেমসের উদ্যোক্তা শহর হিসেবে পেইচিং এর কথা ঘোষণা করেন। তখন সারা চীন এ সুখবর শুনে আনন্দ আর উত্তেজনায় উল্লাস মূখর হয়ে উঠে। সারা দেশের মানুষের পাশাপাশি প্রবাসীরাও ঘর ছেড়ে রাস্তায় বের হয়ে প্রাণ খোলা হৈচৈ এর মধ্য দিয়ে পরস্পর পরস্পরকে অভিনন্দন জানাতে ব্যস্ত হয়ে উঠে। পেইচিংয়ের থিয়েন-আন-মেন মহাচত্বরে আনন্দচিত্ত মানুষের ভিড়ে সরব হয়ে ওঠে জীবনের স্পন্দন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতির মানুষের মতো চীনাদেরও অলিম্পিকের প্রতি বিশেষ অনুভতি আছে। চীনা জনগণ যুগ যুগ ধরে এ দিনের অপেক্ষায় প্রতিক্ষারত ছিল।
অলিম্পিকের মহা সম্মিলনীর প্রতি ভালোবাসা ও প্রশংসা প্রকাশের জন্য চীনের বিশিষ্ট সুরকাররা একটি একটি করে অলিম্পিক সম্পর্কিত গান সৃষ্টি করে যান। এ গানগুলোর মধ্য দিয়ে অলিম্পিক গেমসের প্রতি সারা বিশ্বের চীনা মানুষদের প্রত্যাশা, শুভ কামনা ও ঐকান্তিক সমর্থনের অনুভুতি প্রতিফলিত হয় আলোর বন্যার মত। বন্ধুরা, আজ থেকে আমি ধারাবাহিকভাবে এই সব গান আপনাদের শোনাতে ভুল করবো না।
এখন আপনারা 'চিরকালের বন্ধু' নামের গানটি শুনছেন। গানের কথা এমনঃ 'পবিত্র মশাল এসেছে। আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা এক পরিবারের অঙ্গনে মিলিত হয়েছি। আমাদের মাথার ওপর একই নীল আকাশ। আমরা চিরকালের বন্ধু।' এ গানের কথা লিখেছেন হুয়াং সিয়াও মাও। তিনি সংবাদদাতাকে বলেন, 'অলিম্পিক গেমস আয়োজনের অধিকার পাওয়ার দিনটিতে আমি মস্কোয় ছিলাম। আকাঙ্খিত খবরটি শুনে সে সময় আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনকে ফোন করে এই সুখবর জানানোর ইচ্ছা ছিলো খুব প্রবল। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফোনের লাইন পাওয়ার পর আমি একটি কথাও উচ্চারণ করতে পারলাম না। তখন থেকেই আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমাকে অলিম্পিকের জন্য কিছু কাজ করতেই হবে।'
'চিরকালের বন্ধু' গানের সুরকার হচ্ছেন ইতালীর বিখ্যাত সুরকার জর্জিও মোরোদের এবং চীনের পিয়ানোবাদক খোং সিয়াং তুং। জার্মানীর নামকরা লেখক মিশের খুনচ এ গান ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ করেছেন। খোং সিয়াং তুং মিশের খুনচের জন্য চীনের প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ইংরেজী পাঠ্য পুস্তক পাঠিয়েছেন। মিশের এই পুস্তকগুলোর সাহায্যে সহজ ইংরেজী শব্দ সংগৃহ ব্যবহার করে গানের কথা রচনা করেছেন। ফলে চীনের শিশু, এমন কি বৃদ্ধবৃদ্ধারাও সহজে ইংরেকী ভাষার এ গান শিখতে পারছে। আসুন তাহলে আমরা এক সাথে এই গানটি শুনি।
বন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা চীনের মূলভূভাগের কন্ঠ শিল্পী সুন নান আর তাইওয়ানের কন্ঠ শিল্পী চাং হুই মেইয়ের কন্ঠে 'চিরকালের বন্ধু' নামের গানের চীনা ভাষার রেকর্ডিং শুনলেন। গানের সুর হৃদয়স্পর্শী বলে অনেকের অনুমান যে, এই গানটির অলিম্পিক গেমসের প্রধান গান হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই গানের প্রযোজক খোং সিয়াং তুং বলেন, 'এই গানটি অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বা সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান গান হতে পারবে কিনা, সেই বিষয়ে আমি তেমন বেশি একটা ভাবি নি। যদি এই গান শ্রোতাদের জনপ্রিয়তা পায় এবং ব্যাপক জনসাধারণের মধ্যে সম্প্রচারিত হয়, তাহলে আমার মনে সান্ত্বনা পাবো।'
খোং সিয়াং তুং
অলিম্পিক গেমস হচ্ছে সারা বিশ্বের এক বিরাট মহা সম্মিলনী। অপর দিকে তা হচ্ছে বিশ্ব দরবারে চীনকে প্রদর্শনও তুলে ধরার মঞ্চ। অলিম্পিক চলাকালে বিশ্বের সবার দৃষ্টি অলিম্পিকের ওপর নিবদ্ধ থাকবে। চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি ও বিষয়গত উত্তরাধিকারসহ চীনের নানা বৈশিষ্ট্যময় জিনিস এই সুযোগে প্রদর্শিত হবে।
1 2
|