v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-05-22 16:21:19    
হনুমানের জন্মস্থানকে দেখা

cri

 

আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদেরকে কুয়াং সি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ছোং চুও শহরের পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে বিলুপ্তপ্রায় অতিবিরল প্রজাতির এক ধরনের হনুমানের গল্প বলবো।

অনুষ্ঠান শুরু করার আগে প্রথমেই আপনাদেরকে দুটি প্রশ্ন জানিয়ে দিচ্ছি। প্রথম প্রশ্নটি হচ্ছে চীনের কুয়াং সি ছাড়া বিশ্বের অন্য কোথাও শ্বেত টোপর হনুমান আছে কী? দ্বিতীয় প্রশ্ন বর্তমানে মোট কটি শ্বেত টোপর হনুমান আছে? আশা করি আপনারা আমাদের অনুষ্ঠান মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। এখনই আপনারা জানতে পারবেন প্রশ্ন দু'টির উত্তর।

ছোং চুও শহরের পাহাড় ও উপত্যকায় বেশ কিছু মিষ্টি প্রাণী আছে। তাদের মাথাভর্তি সোজা সাদা চুল। দেখলে মনে হয় সাদা টোপর পরে আছে। তাদের ঘাড় কাঁধ এমনকি লম্বা লেজেও সাদা চুল। দেখতে কিছুটা বাংলাদেশ বা ভারতের হনুমানের মতো। এ জন্যেই আমরা এর নাম দিয়েছি শ্বেত টোপর হনুমান। প্রজাতিটির আসল নাম 'প্রেসবাইটিস লিউকোসিফেলাস'। ২৫ লাখ বছর আগে পৃথিবীতে জন্ম হয়েছিল শ্বেত টোপর হনুমানের। সে সময়কালের প্রজাতি প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমান টিকে থাকা শ্বেত টোপর হনুমানের সংখ্যা কেবল ৭শ'য়ের মতো এবং শুধু ছোং চুও-এ দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্ববিখ্যাত জায়ান্ট পান্ডার চেয়েও বেশি বিরল এই প্রজাতির হনুমান।

গ্রীষ্মকালের এক সুন্দর সকালে আমরা ছোং চুও শহরের শ্বেত টোপর হনুমান প্রাকৃতিক পার্কে গিয়েছিলাম। ২৪ বর্গকিলোমিটারের পার্কটি বিশ্বের একমাত্র শ্বেত টোপর হনুমান পার্ক। এখানে প্রায় ৪শটির মতো এই বিশেষ হনুমান আছে। আমাদের সংবাদদাতা দেখতে পান, খাড়া উঁচু পাহাড়ে ছয় সাতটি হনুমান পাতা ও বনজ ফল খাচ্ছে এবং খেলাধূলা করছে। পাহাড়ের শীর্ষে তাদের খাওয়া আর খেলাধূলার সাবলীলতা দেখে মনে হয় যেন সমতল মাটিতে ছুটোছুটি করছে। এ সব শ্বেত টোপর হনুমান স্থানীয় গ্রামবাসীদের খুব ভালো বন্ধু। গ্রামবাসী সিয়াও ওয়াং বলেন,

সবাই জানেন যে সারা বিশ্বে হনুমান খুব কম দেখা যায়, আর এ প্রজাতির হনুমান শুধু আমাদের এখানেই আছে। খুবই বিরল। সবাই তাদের খুব যত্ন করেন।

সিয়াও ওয়াং হচ্ছেন মিয়াও জাতির মানুষ। তার বাড়িতে গিয়ে আমরা মিয়াও জাতির বৈশিষ্ট্যময় লান মেন চিউ উপভোগ করেছি। বিয়ে'র সময় অতিথিদেরকে স্বাগত জানানোর জন্য মিয়াও জাতির মানুষের বাড়ির ফটকে রাখা বিশেষ প্রথা হিসেবে এই লান মেন চিউ নাম দেয়া হয়। অতিথিরা মদ খেয়ে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হন। অতিথি এলে গৃহকর্তা এই সুস্বাদু মদ দিয়ে তাদেরকে স্বাগত জানায়। সিয়াও ওয়াং তার বাড়িতে বসিয়ে আমাদেরকে শ্বেত টোপর হনুমান নিয়ে সুন্দর একটি কিংবদন্তী বলেছেন। তিনি বলেন, অনেক আগে এখানকার সবাই খুব দরিদ্র ছিল। গ্রামবাসীরা অনাহারে অর্ধাহারে থাকতো। এক দিন একজন বৃদ্ধ কষ্টে ভুগতে ভুগতে মারা গেলেন। তখন মানুষজন মাথায় সাদা রঙের শণের কাপড় জড়াতো এবং সাদা শণের কোমরবন্ধ পরতো। তারা বৃদ্ধকে পাহাড়ের ওপর সমাহিত করলো। অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার পর শিশুরা পাহাড়ে অনেক প্রাকৃতিক ফল আবিষ্কার করলো। তারা খুব আনন্দে ফল খাওয়ার পর আবারো খেলাধূলা করতে থাকলো। তাদের বাবামা এই অবস্থা দেখে শিশুদেরকে পাহাড়েই রেখে দেন। এরপর গ্রামটির অবস্থা ভালো হয়ে যায়। বাবামা তাদের বাচ্চাদের কথা মনে খুব পড়তো এবং তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে চাইতো। কিন্তু শিশুরা সোজা জানিয়ে দেয় যে, তারা আর ফিরে যেতে চাই না। ফিরে গেলে বাবামায়ের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করে খেতে হবে। তাই তারা পাহাড়ে থেকে যাওয়ার জন্য জিদ ধরে। শেষ পর্যন্ত শিশুদেরকে পাহাড়েই রেখে দিতে হলো। বড়ো হওয়ার পর তারা সন্তান জন্ম দিত। দীর্ঘ দিন পর তাদের বাচ্চাদের চেহারাও বদলে যেতে থাকলো। মাথায় গজালো সাদা শণের মতো চুল এবং সাদা কোমরবন্ধ রূপ নিলোসাদা ও লম্বা লেজে। নিজেদের পূর্বপুরুষের স্মৃতিতে তারা এভাবেই বংশের চিহ্ন ধরে রাখলো শ্বেত টোপর হনুমানে পরিণত হওয়ার পরও।

দশ-বারো বছর আগে ছোং চুওতে শ্বেত টোপর হনুমান নিয়ে গবেষণা ও সংরক্ষণের কাজ করেছেন পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পান ওয়েন শি। তিনি আমাদেরকে জানিয়েছেন, গত শতাব্দীর ৯০'র দশকের প্রথম দিকে ছোং চুওতে কমপক্ষে ২ হাজার শ্বেত টোপর হনুমান ছিল। তবে ১৯৯৬ সাল নাগাদ এই শ্বেত টোপর হনুমানের সংখ্যা কমতে কমতে মাত্র ৯০টিতে নেমে গিয়েছিল। অধ্যাপক পান এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, মানবজাতির বৃক্ষনিধন তত্পরতা, বিরল প্রাণীদের বেঁচে থাকার পরিবেশ বিনষ্ট করা ও অবৈধভাবে বিরল প্রাণী শিকারের কারণে শ্বেত টোপর হনুমানের সংখ্যা দ্রুত কমে গিয়েছিল। অধ্যাপক পান বলেন,

অবৈধভাবে বিরল প্রাণী শিকার বন্ধ এবং বাসস্থান ফিরিয়ে দিতে পারলে এই প্রজাতি পুনরুদ্ধার হবে। অনেক বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী খুব স্বাস্থ্য সংবেদনশীল। তাদেরকে যথেষ্ট সময় ও জায়গা দিলে আবার তারা বংশবিস্তার করবে।


1 2