সাম্প্রতিক দশ বারো বছরে চীনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চীন সরকার প্রাচীন প্রন্থ সংরক্ষণের ওপর বেশি বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে এবং সাধারণ মানুষও ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির ওপর আগের চেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। দু'হাজার বছর আগেকার 'লুন ইয়ু' ও 'তাও দে চিং'সহ নানা প্রাচীন গ্রন্থ বর্তমান বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 'রাষ্ট্রীয় গবেষণা' অর্থাত্ চীনের ঐতিহ্যিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা দিনে দিনে পন্ডিতদের আরো বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
২০০২ সালে চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে মূল্যবান প্রাচীন গ্রন্থ পুনঃপ্রকাশ প্রকল্প শুরু করেছে। বিখ্যাত প্রাচীন গ্রন্থ সংরক্ষণ ও গবেষণা বিশেষজ্ঞ লি চি চুং হচ্ছেন চীনের প্রাচীন গ্রন্থ পুন প্রকাশনা কমিটির পরিচালক সদস্য। এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, চীনের প্রাচীন গ্রন্থ বিপুল। এ প্রাচীন গ্রন্থগুলোর সংরক্ষণের অবস্থা, পুরাকীর্তি মূল্যের পার্থক্যও ব্যাপক। ফলে বর্তমানে সম্পদ ও জনশক্তির ভিত্তিতে প্রথমে সেরা গ্রন্থগুলো পুনঃপ্রকাশ করা দরকার। তিনি আরো বলেন, 'পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রাচীনকাল থেকে ছিং রাজবংশের শেষ দিক পর্যন্ত ৫০ হাজার মূল্যবান প্রাচীন গ্রন্থ সংরক্ষিত রয়েছে। এগুলোর মধ্য থেকে আমরা ১৪০০টি গ্রন্থ বেছে নিয়েছি। এর মধ্যে থাং, ইউয়ান, মিং ও ছিংসহ নানা শাসনামলের গ্রন্থ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।'
প্রাচীন গ্রন্থ সংস্কার ক্ষেত্রে নামকরা বিশেষজ্ঞ চাং চি ছিং মনে করেন, প্রাচীন গ্রন্থ সংরক্ষণের জন্য ডিজিটাল প্রক্রিয়া অপরিহার্য। তথ্যায়ন ও ডিজিটাল প্রক্রিয়া গ্রন্থাগার, জাদুঘর ও প্রকাশনালয়গুলোর দ্রুত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাচীন গ্রন্থ সংরক্ষণ সংস্থা ডিজিটাল মাধ্যমে আরো বেশি বেশি দুর্লভ প্রাচীন গ্রন্থ পাঠক ও গবেষকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। প্রাচীন গ্রন্থের ব্যবহার যোগ্যতা বেড়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার। চাং চি ছিং বলেন, 'প্রাচীন গ্রন্থ হচ্ছে মূল্যবান পুরাকীর্তি, তাই একে ভালোভাবে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংরক্ষণের পাশাপাশি ভালোভাবে সেগুলোকে কাজে লাগানোও দরকার। ডিজিটাইজ করা, প্রকাশ করা বা মাইক্রো ফিল্মে কপি তৈরিসহ নানা পদ্ধতি প্রাচীন গ্রন্থ সংরক্ষণ ও কাজে লাগানোর জন্য উপযুক্ত ।
এখন অনেক গ্রন্থাগার উন্নত তথ্য প্রযুক্তি দিয়ে সংরক্ষিত প্রাচীন গ্রন্থের পরিচয় তুলে ধরে। চীনের জাতীয় গ্রন্থাগারের ৪০ হাজার প্রাচীন দলিলের ছাপচিত্রগুলো ডিজিটাল করা হয়েছে। পাঠকরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ প্রাচীন দলিলগুলো দেখতে পারেন। চীনের ডিজিটাল আর্কাইর্ভের নির্মাণকাজও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
তবে চীনের প্রাচীন গ্রন্থ সংরক্ষণ কাজে এখনো একটি বড় বাধা রয়ে গেছে। এটি হচ্ছে গ্রাচীন গ্রন্থ সংস্কারে দক্ষ পেশাজীবীর অভাব। এখন চীনের প্রাচীন গ্রন্থের সংখ্যা হাজার হাজার। কিন্তু পেশাজীবী সংস্কার কর্মীর সংখ্যা মাত্র এক থেকে দুই শ'র মতো। কারণ প্রাচীন গ্রন্থের মেরামত কেবল ঐতিহ্যিক কৌশল অনুসারে হাতে করতে হয়। এটি একটি ওস্তাদী বিদ্যা। ওস্তাদরাই কেবল ছাত্রকে এই কৌশল শেখাতে পারে। ফলে প্রাচীন গ্রন্থ সংস্কারের প্রশিক্ষণের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ২০০৭ সালে চীনের জাতীয় প্রাচীন গ্রন্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র আয়োজিত চার দফা প্রশিক্ষণ কোর্সে মোট ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ সংখ্যা চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রন্থাগারের চাহিদা মেটাতে পারে না।
'মূল্যবান জাতীয় প্রাচীন গ্রন্থ সংরক্ষণের তালিকা' প্রকাশ করা কেবল চীনের প্রাচীন গ্রন্থ তদন্ত কাজের প্রাথমিক সাফল্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী, চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তিন থেকে পাঁচ বছর সময়ে দেশ জুড়ে প্রাচীন গ্রন্থের সাধারণ তদন্ত ও তালিকাভুক্তির কাজ করবে। যাতে সার্বিকভাবে চীনের বিভিন্ন স্তরের গ্রন্থাগার ও জাদুঘরগুলোতে সংরক্ষিত প্রাচীন গ্রন্থ সংরক্ষণের অবস্থা জানা যায়। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) 1 2
|