গত মাসে সমাপ্ত বোয়াও এশিয় ফোরাম ২০০৮ সালের বার্ষিক সম্মেলনে 'যুক্তরাষ্ট্রের গৌন ঋণ সংকট' অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের অন্যতম উষ্ণ আলোচ্যবিষয় ছিল। চীনের অর্থনৈতিক অঙ্গনের বহু উর্ধ্বতন ব্যক্তি সম্মেলনে বলেছেন, এখন পর্যন্ত গৌন ঋণ সংকট চীনের অর্থ ও রিয়্যাল এস্টেট শিল্পের ওপর সামান্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তারা মনে করেন, অব্যাহতভাবে অর্থ শিল্পের সংস্কার ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি চীনের উচিত গৌন ঋণ সংকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অর্থ শিল্পের তত্ত্বাবধানের কাজ জোরদার করা।
যুক্তরাষ্ট্রের গৌন ঋণ সংকটের মূল কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রিয়্যাল এস্টেট বাজারের অতিরিক্ত সম্প্রসারণ। কিন্তু চীনের রিয়্যাল এস্টেট বাজার একটানা বহু বছরের দ্রুত প্রবৃদ্ধির পরও আজ পর্যন্ত এর উষ্ণতা হ্রাস হয় নি। কিছু পেশাগত বিশেষজ্ঞ মনে করেন, চীনের রিয়্যাল এস্টেট বাজারের ফেনিলতা বেশি। সেই জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গৌন ঋণ সংকটের প্রভাবে এ বছর চীনের রিয়্যাল এস্টেট বাজার 'শীতলতার পর্যায়ে' প্রবেশ করতে পারে। চীনের গৃহ নির্মাণ মন্ত্রণালয়ের নীতি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক চেন হুই মনে করেন, 'আমি মনে করি না যে, চীনের রিয়্যাল এস্টেট শিল্প অবনতির সম্মুখীন হবে। যুক্তরাষ্ট্রের গৌন ঋণ সংকট বা ২০০৮ সালের অলিম্পিক গেমস না থাকলেও চীনের শহরায়নের প্রক্রিয়ায় বিশ থেকে ত্রিশ বছর সময় লাগবে। ফলে কেবল গৌন ঋণ সংকটের কারণে চীনের রিয়্যাল এস্টেট শিল্প শীতলতার পর্যায়ে যাবে না।'
কিন্তু অর্থনীতিবিদ কুও শেং এশিয় লিমিটেড লায়াবিলিটি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার হু জুন লিউ মনে করেন, এখন পর্যন্ত চীনের রিয়্যাল এস্টেট শিল্পের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের গৌন ঋণ সংকটের প্রভাব দেখা যায় নি। তবু চীনের রিয়্যাল এস্টেট শিল্প এ বিষয়ে তার সর্তকতাকে শিথিল করতে পারে না। তিনি বলেন, 'চীন একটি বিশাল দেশ বলে বা গত ত্রিশ বছরে আমাদের অর্থনীতির স্থায়ী প্রবৃদ্ধি দেখে নিজেকে বিশেষ কিছু মনে করা ঠিক হবে না। সবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের রিয়্যাল এস্টেট শিল্পের ফেনিলতা ভেঙ্গে গেছে এবং তা থেকে আর্থিক সংকট সঞ্চারিত হয়েছে। এটা চীনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও আমাদের অতি যত্ন সহকারে তা বিবেচনা করা উচিত।'
১২ এপ্রিল চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক---চীনা গণ ব্যাংকের গভর্ণর চৌ সিয়াও ছুয়েন ওয়াংশিটনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সংস্থার আন্তর্জাতিক মুদ্রা ও অর্থ কমিটির ১৭তম মন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশনে বলেছেন, এবারের গৌন ঋণ সংকটে চীনের কিছু আর্থিক সংস্থা সংশ্লিষ্ট আর্থিক পণ্যের অধিকার থাকায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে এই সীমিত ক্ষতি আমাদের গ্রহণযোগ্য আওতার মধ্যে রয়েছে।
গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক নিয়মিত অধিবেশনে চৌ সিয়াও ছুয়েন বলেছেন, 'চীনের আর্থিক সংস্থাগুলোও গৌন ঋণ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছে। এ বিনিয়োগের ফলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। গৌন ঋণ ক্ষেত্রে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ খুব কম। তা ছাড়া চীনের আর্থিক সংস্থাগুলোর আকার অপেক্ষাকৃত বড়। এগুলোর ব্যবস্থাপনার অবস্থাও খুব ভালো। ফলে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি তারা সহ্য করতে পারে।'
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের গৌন ঋণ সংকট চীনের অর্থ শিল্পের কাছে ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছে। এখন চীন অর্থ প্রাপ্তিসংক্রান্ত পণ্য বাজার উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। প্রাথমিক পর্যায় থেকে কার্যকরভাবে বাজারের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ ও প্রশমনের ওপর মনোযোগ দেয়া উচিত।
1 2
|