হাইনান প্রদেশ হল চীনের সবচেয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ এবং হাইনান দ্বীপ হলো চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। ১৯৮৮ সালে হাইনান প্রদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখন চীনের বৃহত্তম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলেপরিণত হয়েছে । এ প্রদেশ প্রতিষ্ঠার শুরুতেই নানা ধরনের অর্থনৈতিক জটিলতার সম্মুখীন হয়। যুক্তিযুক্ত ও বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনার মাধ্যমে বর্তমানে হাইনান প্রদেশের অর্থনীতি দ্রুত তার সঙ্গে সুষ্ঠু উন্নয়নের পথে চলছে ।
লোকসংখ্যা কম এবং মূলভূভাগের সঙ্গে যাতায়াতের অসুবিধার কারণে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর পরেও হাইনান প্রদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন অনেক পিছিয়ে ছিল এবং মূলভূভাগের সঙ্গে তার পার্থক্যটাও ছিল উল্লেখজনক । ১৯৮৭ সালে হাইনানের মোট জিডিপি ছিল মাত্র ৫ বিলিয়ন ইউয়ানের কিছুটা বেশি । ১৯৮৮ সালে চীনের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর গবেষক লিয়াও স্যুন প্রথমবারের মতো হাইনান প্রদেশের রাজধানী হাইখো শহরে আসার সময় সেখানকার পশ্চাত্পদ অবস্থা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন । তিনি বলেন, শহরের দৃশ্য গ্রামাঞ্চলের মত । বিমান থেকে নামার পর হাইনানের বিমান বন্দর দেখতে উত্তর চীনের শহরের দূরপাল্লার একটি বাস টার্মিনালের মতো । অধিবাসীদের বাসার ফ্ল্যাটের বারান্ডায় মুরগীর নাড়িভুড়ি দেখা যেতো। প্রধান দুতিন সড়কছাড়া অন্যান্য রাস্তা মাটি দিয়ে তৈরী এবং সর্বত্র হাঁস, মুরগী, ও কুকুরকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেতো। তখন আমি ভাবতেও পারিনি যে, চীনে এত অনুন্নত রাজধানী শহর রয়েছে ।
নতুন প্রতিষ্ঠিত হাইনান প্রদেশের সরকারকে পরিকল্পনা প্রণয়নে সাহায্য করার জন্যে গবেষক লিয়াও স্যুনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে । তখন হাইনান যদিও অনুন্নত ছিল, তারপরও চীনের বৃহত্তম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে তার উন্নয়নের সুউজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে লিয়াও স্যুন পেইচিংয়ে তাঁর চাকরি ছেড়ে দেন । বর্তমানে তিনি হাইনান প্রশাসনিক ইনস্টিটিউটের সহকারী অধাক্ষ । এ সম্পর্কে তিনি বলেন, তখন লোকজন মনে করতো, সরকারের সুবিধাজনক নীতির কল্যাণ হাইনানের অর্থনীতির অবশ্যই বিরাট উন্নয়ন হবে । তিনি বলেন, চীন সরকারের সুবিধাজনক নীতির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের দ্রুত উন্নয়ন হবে । বিস্তারিত গবেষণার মাধ্যমে বুঝতে পারা যায় যে, সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো রপ্তানী নীতি । প্রথম ৬ বছরেই বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুবাদে হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং পর্যটন শিল্পের সমৃদ্ধি হয়েছে । তারপর হাইনানের অর্থনীতি ধাপে ধাপে উন্নত হতে থাকে ।
তখন চীনের মূলভূভাগের অনেক লোক হাইনান প্রদেশের হাইখো এবং সান ইয়া শহরে এসে বসবাস শুরু করে । গত শতাব্দীর ৯০ এর দশকে চীন সরকার বাসভবনের সংস্কারের মাধ্যমে গৃহায়ন বাজারের উন্নয়ন করে । লোকসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিশেষ প্রভাবে হাইনান প্রদেশে ব্যাপকভাবে গৃহায়ন শিল্পের উন্নয়ন শুরু হয় । এক সময় প্রায় ১৬ লাখ লোকসংখ্যা অধ্যুষিত হাইনান দ্বীপে মোট ২০ হাজারেরও বেশি গৃহায়ন কোম্পানি গড়ে ওঠেছিল ।
তখন গড়পড়তা ৮০জনের জন্য একটি গৃহায়ন কোম্পানি ছিল । ৩ বছরের মধ্যে হাইনান প্রদেশের বাড়ির দাম আগের চেয়ে ৪ গুণেরও বেশি বেড়ে গেছে । ১৯৯৩ সালে এ অঞ্চলের গৃহায়ন বাজারের এ বিশৃঙ্খল অবস্থার বিরুদ্ধে চীন সরকার ধারাবাহিক সংস্কারের ব্যবস্থা নেয় । সরকারের নিয়ন্ত্রণে হাইনানে গৃহায়ন শিল্প উন্নয়নের গতি হ্রাস পেতে থাকে । ১৯৯০ সালে হাইনানে আসা গৃহায়ন শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগকারী ম্যাডাম চাং স্যুন বলেন, গৃহায়ন বিশৃঙ্খল উন্নয়নের ফলে গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তিনি বলেন, গৃহায়ন শিল্পের কর্মী হিসেবে আমার অনুভব গভীর । চীন সরকার হাইনানের অর্থনীতির সামষ্টিক নিয়ন্ত্রণের পর ৪০ বিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশি পুঁজি মূলভূভাগে ফিরে আসে, অনেক কোম্পানি হাইনান থেকে পুঁজি সরিয়ে নেয় এবং অনেক প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায় ।ফলে অবিবেচক উন্নয়নের পর অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান অচলাবস্থায় পড়েছে ।
1 2
|