তিনি বলেন , এর আগে আমার জীবনের প্রধান লক্ষ্যই ছিল দেশবিদেশের সব নৃত্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার পাওয়া । যাতে সবাই আমার নাম জানতে পারেন। এক দিন হঠাত্ আমার আর এটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না । পুরস্কার পাওয়া আমার প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয় ,সব ধরনের পুরস্কার পাওয়ার পর আমি কি করবো ? আমাকে অন্য কিছু তাত্পর্যপূর্ণ কাজ করতে হবে । তখন থেকে আমি জীবনের অন্য এক পর্যায়ে প্রবেশ করি । আমি নৃত্য রচনার মাধ্যমে আমার চিন্তাধারা ও জীবন সম্পর্কে আমার উপলব্ধি প্রকাশ করতে চাই ।
তখন থেকে হুয়ান তৌ তৌয়ের জীবনে বিরাট পরিবতর্ন আসে । তিনি নানা সুযোগে বিদেশে চীনের নৃত্যশিল্পের প্রচার কাজ করেন এবং নতুন নৃত্য সৃষ্টির চেষ্টা করেন । প্রতি বছরই তিনি কয়েকটি নতুন নৃত্য রচনা করেন । ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণে হুয়ান তৌ তৌ প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে তার আরেক প্রতিনিধিত্বকারী নৃত্য ' চুই কু ' পরিবেশন করেন । অনুষ্ঠান শেষে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড মঞ্চে উঠে এসে তার সঙ্গে করমর্দনকরেন এবং তাকে আরেকবার যুক্তরাষ্ট্রে আসার আমন্ত্রণ জানান । এই সুযোগে হুয়ান তৌ তৌ ফোর্ডকে বলেন ,তিনি আরো বেশি চীনা শিল্পী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নৃত্য পরিবেশন করতে চান । তিনি বলেন , কয়েক বছর ধরে আমি যখন বিদেশে নাচ পরিবেশন করি ,গোটা মঞ্চে আমি ছাড়া সব বিদেশী শিল্পী । সাবেক প্রেসিডেন্ট ফোর্ড অনুষ্ঠান দেখে মঞ্চ উঠে এসে আমাকে অভিনন্দন জানান । তিনি বলেন , আপনি প্রতি বছরই যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকলা উত্সবে অংশ নিতে আসবেন । সেইবার আমি তাকে আমার দলের শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যাওয়ার ব্যাপারেঅনুরোধ জানাই । আমি বিদেশে অনুষ্ঠান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে চীনের সংস্কৃতি প্রচার করতে চাই । সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাহায্যে তিন বছর পর হুয়ান তৌ তৌ ও তার দলের শিল্পীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের নৃত্য পরিবেশন করেছেন । সাবেক প্রেসিডেন্ট ফোর্ড আরেকবার তাদের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আসেন । এ থেকে হুয়ান তৌ তৌ উপলব্ধি করতে পারেন যে নৃত্যশিল্প ভাষা ও চিন্তার দূরত্ব অতিক্রম করে ভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মবিশ্বাসের মানুষকে মুগ্ধ করতে পারে ।
তখন থেকে হুয়ান তৌ তৌ ও বিদেশী নৃত্যশিল্পীদের সহযোগিতা বাড়তে থাকে । ২০০১ সালে তিনি নৃত্যনাট্য ' স্বর্ণ রৌপ্য ' পরিচালনা করেন । ২০১০ সালের চীনে অনুষ্ঠেয় বিশ্বমেলার প্রচারের জন্য ২০০২ সালের জুলাই মাসে ফ্রান্সের দ্য সাম্পস এলিসিস থিয়েটারে এ নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হয় । ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে তার সৃষ্ট নৃত্যনাট্য ' হলুদ মাটি ' জাপানে পরিবেশিত হয় । ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য মেট্রপোলিটান অপেরার আমন্ত্রণে হুয়ান তৌ তৌ চীনের বিখ্যাত সংগীতবিদ থা তুন ও চলচ্চিত্র পরিচালক চান ই মৌর সহযোগিতায় গীতিনাট্য ' ছিন সি হুয়ান ' রচনা করেন । তিনি এ গীতিনাট্যে সব নৃত্য রচনা করেন এবং প্রধান নৃত্যশিল্পী হিসেবে অভিনয়ে অংশ নেন । বিদেশে এ গীতিনাট্যের প্রায় বিশটি অনুষ্ঠান হয়েছে । এ গীতিনাট্যের দুই শতাধিক শিল্পী ও কর্মীর মধ্যে পরিচালক , সুরকার ও প্রধান নৃত্যশিল্পী ছাড়া বাকি সবাই পশ্চিমাদেশের মানুষ । হুয়ান তৌ তৌ বলেন , এটা তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ । সহযোগিতার সময় নানা ধরনের সমস্যা নিরসনের প্রক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশের শিল্পী ও কর্মী ও চীনা শিল্পীদের মধ্যে সমঝোতা বেড়েছে । এ বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে হুয়ান তৌ তৌ চীনের অন্যান্য শিল্পীর সঙ্গে স্পেনের বার্সিলোনায় ' অলিম্পিক গেমসের জয়গান ' নামে একটি বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন । তিনি বলেন ,অন্যান্য চীনার মতো তিনিও পেইচিং অলিম্পিক গেমসের জন্য কিছু করতে চান । পেইচিং অলিম্পিক গেমসের জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজ করতে তিনি আগ্রহী।
সম্প্রতি হুয়ান তৌ তৌ তার নৃত্যশিল্পী জীবন নিয়ে একটি বই লিখেছেন । তিনি একটি সিল্কের রুমালের প্রদশর্নী আয়োজন করেছেন এবং টি ভি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে চীনের নৃত্যশিল্প সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন । এখন তিনি একটি চিত্র প্রদশর্নীর জন্য প্রস্ততির কাজ করছেন। তার ধারণা , তার মনের মঞ্চ আর বিশ-বাইশ বছর বয়সের পুরস্কার পাওয়ার মঞ্চ এক নয় । তিনি বলেন , আমি মনে করি একজন শিল্পীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো শিল্পচর্চার মাধ্যমে নিজের চিন্তাধারা ও উপলব্ধি প্রকাশ করা এবং দশর্কদের সঙ্গে মনোজাগতিক বিনিময় করা । কাজেই আমার জন্য থিয়েটারের মঞ্চ শুধু নাচের মঞ্চ নয় ,এটা চীনের সংস্কৃতি প্রচার ও বিনিময়ের মঞ্চ । বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি আরো বেশি চীনা সংস্কৃতি প্রচারের কাজ করবো । (ফাং সিউ ছিয়ান) 1 2
|