সান ইয়া হচ্ছে চীনের সবচেয়ে দক্ষিণের শহর। পাশাপাশি এটি চীনের একমাত্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় উপকূলীয় পর্যটন শহর। উত্তর গোলার্ধ যখন তুষারে সাদা ও কনকনে ঠাণ্ডা তখন সান ইয়া রোদ ঝলমলে, এখানকার বালুতট ও নীল আকাশ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষকে তখন পতঙ্গের মতো আকর্ষণ করে। শীতকালের সান ইয়া আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপপুঞ্চ এবং থাইল্যান্ডের ফুকেট দ্বীপের মতোই সরগরম।
প্রতি বছর এখানে প্রচুর পর্যটক আসেন। সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় তারা আমাদের সংবাদদাতাকে আনন্দের সাথে নিজের অনুভুতি ব্যক্ত করেছেন।
"আমরা তৃতীয় বারের মতো এখানে এসেছি। এখানে আসার লক্ষ্য হচ্ছে এখানকার আবহাওয়ায় স্বস্তির সঙ্গে নিঃশ্বাস নেওয়া এবং সকাল, সন্ধ্যায় মজা করে বেড়ানো।"
"এখানকার আবহাওয়া খুব তরতাজা। আমি খেলাধূলা বা বিনোদন ইভেন্ট পছন্দ করি এবং নান শান মন্দিরটি আমার দারুন লেগেছে। এটা খুব সুন্দর।"
"আমি হাই নানে দুই মাস আছি। এখানকার সবকিছু আমি খুব পছন্দ করি। এখানে আবহাওয়া ভালো, মানুষও খুব অতিথিপরায়ন।"
আপনি যদি চীনের সবচেয়ে দক্ষিণ মন্দির সান ইয়া নান শান মন্দিরে যান তাহলে গুরুগম্ভীর ঘন্টাধ্বনি শুনতে পাবেন। 'থিয়ান ইয়া হাই চিয়াও' বড় পাথরের পাশে গেলে শুনতে পাবেন প্রাচীন গল্প। সময় পেলে দক্ষিণ চীনে ডুবুরি দর্শনীয় স্থানে গিয়ে আপনিও ডুবুরি বনে যেতে পারেন। এর পাশাপাশি হাই নানের আদিবাসী লি জাতির ঐতিহ্যবাহী রকমারি হস্তশিল্প কিনে প্রিয়জনকে উপহার দিতে পারেন। রাত নামলেই আপনাকে টানতে থাকবে হৈ হুল্লোড়ে ভরা সমুদ্রের বার।
রাশিয়ার মেয়ে আইভচ শিকোভা নদেগদা ভেলজেভাহের কাছে চীন একটি পরিচিত দেশ। তিনি চীনের বেশ কয়েকটি শহরে ঘুরেছেন। গত দুই বছরে দু'বার সান ইয়ায় এসেছেন। তিনি বলেন, "টাটকা কাঁকড়া ধরা, বিয়ার খাওয়া, সমুদ্রের হিমেল বাতাসে শরীর জুড়িয়ে নেওয়া এবং বন্ধু বা স্বজনের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দেওয়া সমুদ্র বারের নিত্যদিনের দৃশ্য। তবে মূল-ভূভাগের অন্য উপকূলীয় শহরের তুলনায় সানইয়াকে আপনাদের মনে হবে বিদেশের কোনো শহর। বারে হর হামেশাই চোখে পড়বে বিভিন্ন দেশ বা ভাষার পর্যটক। ওয়েটার-ওয়েট্রেসরা গড়গড় করে রুশ বা ইংরেজী বলে আপনাকে তাক লাগিয়ে দেবেন।"
তিনি বলেছেন, অন্য দেশের গ্রীষ্মমন্ডলীয় পর্যটন শহরের চেয়ে সান ইয়া অনেক নিরাপদ। রাতেও নিরাপদে বাইরে ঘুরে বেড়ানো যায়। তিনি বলেন, সন্ধ্যায়ও কেনাকাটা, বারে খেলাধূলা বা উপকূলে বেড়ানো যায়। সাধারণত আমি রাত ১২টা, মাঝেমাঝে ভোর ৩টার দিকে ফিরে আসি। যাতায়াতের কোনো সমস্যা নেই। রাশিয়ার চেয়ে অনেক ভালো এবং খুব নিরাপদ।
এখন সান ইয়ায় বেড়ানো বা স্বাস্থ্য রক্ষা এক ধরনের প্রবণতায় রূপ নিয়েছে। বিশ্ব পরিবেশ রক্ষা সংস্থা বিশ্বের ৪৫টি দেশের ১৫৮টি প্রধান শহরে জরিপ চালিয়ে আবহাওয়ার মানের দিক দিয়ে সান ইয়াকে দ্বিতীয় স্থানে রেখেছে। কিউবার হাভানার চেয়ে সান ইয়ার আবহাওয়ার মান অনেক ভালো। এটা স্বাস্থ্য অনুরাগীদেরকে আকর্ষণের প্রধান কারণ। চীনের সাংহাই থেকে বৃদ্ধ চৌ তার স্ত্রীর সঙ্গে সান ইয়ায় এক মাসেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন। চীনের ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উত্সবেও তারা সান ইয়ায় ছিলেন। তিনি বলেন, এখানে প্রায় ৪০ দিন ছিলাম। আমার স্ত্রীর হাঁপানী আর উচ্চ রক্ত চাপ আছে। এখানে আসলে রক্ত চাপ কমে যায়। এখানকার আবহাওয়া খুব ভালো। গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু। শরত্কাল বলে কিছু নেই। বিশেষ করে প্রবীনদের জন্য স্বাস্থ্যকর।
1 2
|