চেংচৌ শহরের তথ্য জানার পর এখন আমরা শ্রোতাবন্ধুদেরকে চেংচৌ ওয়েন মিয়াও মন্দিরে নিয়ে যাবো । এ মন্দিরটি চেংচৌর পুরনো শহরে রয়েছে এবং এর ১৯০০ বছরেরও বেশি ইতিহাস আছে । ২০০৫ সালে চেংচৌ সরকার ৩ কোটি ইউয়ান ব্যয়ে তার সংস্কার করেছে । এখন ওয়েন মিয়াও মন্দিরটি মহান ঐতিহ্যের ধারক ও সুন্দর । মন্দিরে প্রবেশ করার পর প্রথমেই দেখা যাবে বৃহত্তম হল , তাছেং হল । এ হলের কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে । প্রাচীনকালে মন্দিরটিতে বারবার অগ্নিকাণ্ডের কারণে এ হলটিকে অনেকবার মেরামত করতে হয়েছে । হলের বাইরের একটি পুরনো তালগাছ মন্দিরের ইতিহাসকে ধরে রেখেছে । চীনের ওয়েন মিয়াও মন্দির সংস্কার পরিষদের সাধারণ সদস্য, চেংচৌ শাংছেং পুরাকীর্তি সংরক্ষণ প্রশাসনিক বিভাগের পরিচালক সোং সিউ লান বলেছেন, চেংচৌ ওয়েন মিয়াও মন্দির পূর্ব হান জাতির ইয়োংপিং আমলে নির্মিত । এ পর্যন্ত এর ১৯০০ বছরেরও বেশি ইতিহাস রয়েছে । তখন স্থাপত্য কর্ম ছিল বৃহত্তম আকারের । এর অবস্থান প্রায় ২.৫ হেক্টরের ওপর । প্রাচীনকালে এটি ছিল চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ওয়েন মিয়াও মন্দির । মিং রাজবংশে র সময় এ মন্দিরটি বিরাট এক অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হয়ে যায় । পরে আগের ডিজাইন অনুযায়ী পুনরায় তা নির্মাণ করা হয়েছে । কাঠ দিয়ে নির্মাণ করার জন্য মিং ও ছিং রাজবংশের সময় এ মন্দির বারবার অগ্নিকাণ্ডে বিধ্বস্ত হয় । নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর ওয়েন মিয়াও মন্দিরের আয়তন প্রাচীনকালের চেয়ে কিছুটা ছোট হয়ে যায়।
তাছেং হল মন্দিরটির উত্তর দিকে অবস্থিত। তার দরজা দক্ষিণ মুখী । হলের সবচেয়ে উচুঁ ছাদের দুই পাশে দুটি ২ মিটার উঁচু ড্রাগনের মাথা লাগানো রয়েছে । প্রাচীনকালে চীনের জনগণ মনে করতো, ড্রাগন হল বৃষ্টির দেবতা, স্থাপত্যের ছাদে দুটি ড্রাগনের মাথা সাজানো থাকলে, হলের অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ হবে । ছাদের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে একটি দু' তলার ছোট প্যাভেলিয়ন রয়েছে, এর ওপর হাতিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণীপশুপাখি ও ফুল খোদাই করা রয়েছে ।গোটা হলের ছাদে সবুজ রংয়ের গ্লাস রয়েছে ছাদের নানা ধরনের পশুপাখির সঙ্গে ভালভাবে তা মিশে গেছে । দেখতে খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয় । হলে প্রবেশ করার পর পর্যটকরা ঘরের চার দিকে কাঠের ওপর নানা রঙয়ের বিভিন্ন আকারের খোদাই শিল্পকর্ম ও চিত্রকর্ম দেখতে পাবেন এবং হলের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে চীনের প্রাচীন ইউ সম্রাট, রুলাই বুদ্ধের শাস্ত্র পড়া এবং ৮ দেবতার সমুদ্র অতিক্রম করা'র ভাষ্কর্যও খোদাই রয়েছে । এ সম্পর্কে সোং সিউ লান বলেন, ২০০৪ সালে ওয়েনমিয়াও মন্দিরের তাছেং হলটি একবার মেরামত করা হয়, মাটির নিচে রাখা ২.২ মিটার হলকে আগের চেয়ে ১.৭ মিটার উচুঁ করা হয়েছে। বর্তমানে তাছেং হলকে উঁচু করার পর ওয়েন মিয়াও মন্দিরের কেন্দ্র স্থলে কয়েকটি শ্রেষ্ঠ আজুরে পাথর দিয়ে সাজানো রয়েছে ।
তাছেং হল হলো চেংচৌ ওয়েন মিয়াও মন্দিরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ । তা মিং ও ছিং রাজবংশের স্থাপত্য । তাছেং হল থাকার কারণে এবার ওয়েনমিয়াও মন্দিরটি পুনরায় নির্মাণ করা হয় । তাছেং হলে একটি স্থাপত্য খুবই শ্রেষ্ঠ, তার নাম লিউলিবোফেং । এ স্থাপত্য হলো আজুর পাথর দিয়ে তৈরী ফুটন্ত তিনটি পিওনি ফুল। চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে এ পদ্ধতিতে তৈরী এ বস্তুটি খুব কম দেখা যায় । অনেক স্থাপত্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কয়েক বছর পর আজুরে পাথর দিয়ে তৈরী এ বোফেং ভালভাবে সংরক্ষণ করায় তা খুব শ্রেষ্ঠত্ব বহন করছে এবং এখন ওয়েন মিয়াও মন্দিরের সবচেয়ে দামী স্থাপত্যে পরিণত হয়েছে ।
1 2
|