চল্লিশ বছর আগে চী নের একটি সড়ক নির্মাণ দল পাকিস্তান পৌঁছে। তারা চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে মৈত্রীর সেতুবন্ধন হিসেবে কারাকোরাম সড়ক নির্মাণ করে। চল্লিশ বছর ধরে এই সড়ক চীন ও পাকিস্তানের মৈত্রীকে অক্ষুন্ন রেখেছে। এখন এই সড়কটি পুনর্নিমাণ করা হবে, তা দু'দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আরেকটি মাইলফলক হবে।
১৬ ফেব্রুয়ারী ইসলামাবাদের জিন্নাহ সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড পতাকাগুলো বাতাসে পতপত করে উড়ছে। চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফের বিরাট প্রতিকৃতি সম্মেলন কেন্দ্রের প্রধান গেটের ওপরে লাগানো রয়েছে। সম্মেলন কক্ষের চার দিকে চীন ও পাকিস্তানের মৈত্রী সম্পর্কিত প্রশংসনীয় স্লোগান ও ছবি দিয়ে সাজানো। কারাকোরাম সড়কের পুনর্নিমাণ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এখানেই অনুষ্ঠিত হয়। চীন ও পাকিস্তানের কয়েক শ' প্রতিনিধি এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মুশাররফ কারাকোরাম সড়কের পুনর্নিমাণ প্রকল্পের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, 'আমি মনে করি, এটা সত্যিকারের একটি স্মুতিচিহ্ন। চীন ও পাকিস্তানের মধ্যকার সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ও সর্বকালীন মৈত্রীর আরেকটি মাইলফলক। এখন আমরা ছবিতে দেখছি চীন ও পাকিস্তান দু'দেশের পতাকা উঁচু পাহাড়ের ওপর উড়ছে। এটা আমাদের দু'দেশের নিবিড়তম সুসম্পর্কের প্রতীক।'
২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও পাকিস্তান সফরকালে দু'দেশের সরকার কারাকোরাম সড়কের পুনর্নিমাণ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত চীনের সড়ক সেতু প্রকল্প লিমিটেড লায়াবিলিটি কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজার চাং হোং জানিয়েছেন, 'এবার পুনর্নিমাণের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ভূতাত্ত্বিক দুর্যোগে সৃষ্ট নটি হয়ে যাওয়া অংশ মেরামত ও সড়কটির সম্পূর্ণ সংস্কার। এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৩৫ কিলোমিটার। পুনর্নিমাণের পর আকস্মিক কোন বড় ধরণের ভূতাত্ত্বিক দুর্যোগ না হলে পাকিস্তান যদি সময় মতো সড়কের তুষার পরিষ্কার করে, তাহলে কারাকোরাম সড়কে সারা বছর যাতায়াত করা যাবে।'
কারাকোরাম সড়কের পুরো দৈর্ঘ্য ১২০০ কিলোমিটার। তা পৃথিবীর ছাদ পামির মালভুমি পার হয়ে গেছে। ১৯৬৬ সাল থেকে চীন ও পাকিস্তানের নির্মাতারা একটানা ১২ বছর ধরে পরিশ্রমের মাধ্যমে এ প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করেন। সড়কটি নির্মাণের পর গত ৩০ বছরে ধারাবাহিক অনেক ভূতাত্ত্বিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে। প্রায়শই দুর্যোগের কারণে সড়কটি বন্ধ হয়ে থাকে। বিশেষ করে প্রতি বছরের নভেম্বর মাসের শেষ দিক থেকে মে মাসের প্রথম দিক পর্যন্ত তুষারপাতের কারণে সড়কটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যকার জানমালের যাতায়াত ও সড়ক পরিবহনের চাহিদা মেটানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। সড়কের সংস্কার কাজ এখন খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে।
চাং হোং আরো বলেন, পুনর্নিমাণ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চার বছর সময় লাগবে। প্রকল্পের বিষয়বস্তুর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে ৩২টি নতুন সেতু নির্মাণ, ২৭টি পুরোনো সেতুর মেরামত, ৮ লাখ ১৫ হাজার ঘনমিটার প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ, সড়কের প্রস্থ ৭.৩ মিটার সম্প্রসারন করা। প্রকল্পের কাজে মোট ব্যয় হবে ৪৯ কোটি মার্কিন ডলার।
1 2
|