ছিংহাই হ্রদ উত্তর পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশে অবস্থিত । এখানকার তিব্বতী পশুপালকরা হ্রদের ধারে বসবাস এবং পশু পালন করতো । বর্তমানে ছিংহাই হ্রদ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য স্থানীয় সরকার পশু পালনের পরিবর্তে হ্রদের সুষ্ঠু পরিবেশ আবার গড়ে তোলার একটি কর্মসূচী হাতে নিয়েছে । ফলে তিব্বতীদের জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে ।
তিব্বতী পশুপালক তেনচেনছু প্রৌঢ় অথচ স্বাস্থ্যবান এবং চেহারা ব্রোঞ্জের বর্ণ । তার বাড়ি ছিংহাই হ্রদের ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বের হাইইয়ান জেলায় । এ জেলা তিব্বতী জাতি অধ্যুষিত । তার বাড়িটি পশমী বস্ত্র দিয়ে বোনা নিছক তিব্বতী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বাড়ি । বাড়ির চার দিক পর্বতে ঘেরা । বাড়ির সামনে দিয়ে একটি মহাসড়ক চলে গেছে । তার জীবনধারার পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন .
তৃণভূমিতে যুগ যুগ ধরে পশু পালন করা হতো । ছিংহাই হ্রদ ও এ অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষার জন্য পশু পালনের পরিবর্তে হ্রদের পরিবেশ সংস্কার করা হয়েছে । সে জন্য সব পশু বিক্রি করে দেয়া হয়েছে । এর মধ্যে বেশ কিছু গরু ও ছাগল ছানার বয়স মাত্র আধা বছরের কাছাকাছি । এতে তিনি খুব মর্মাহত । তিনি স্বপ্নেও এদের দেখতেন ।
ছিংহাই হ্রদ অববাহিকা নানা উদ্ভিদ ও প্রাণীতে সমৃদ্ধ । এটা ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির উত্তর পূর্বাংশের পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং তা মরুকরণের বিস্তৃতিও রোধ করছে । ১৯৯২ সালে ছিংহাই হ্রদকে বিশ্বের প্রধান জলাভূমি সংক্রান্ত একটি তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । কিন্তু গত দশ বারো বছরে বিশ্বের জলবায়ু উষ্ণ হয়ে উঠার কারণে ছিংহাই হ্রদের আশাপাশের তৃণভূমির মরুকরণের প্রবণতা প্রখর হয়ে উঠতো ও ভূগর্ভস্থ পানির গভীরতা ক্রমাগত কমে যেতো । একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , ছিংহাই হ্রদের পানির গভীরতা বছরে ১২.১ সেন্টিমিটার করে কমে যেতো । ২০০০ সালে পানির গভীরতা ২১ সেন্টিমিটার কমেছে । ফলে চীন তথা সারা বিশ্বের জলবায়ু গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । ছিংহাই হ্রদের পরিবেশ রক্ষার জন্য ২০০১ সাল থেকে ছিংহাই প্রাদেশিক সরকার পশু পালনের পরিবর্তে হ্রদের পরিবেশ পুনরুদ্ধারের কর্মসূচী চালু করেছে । কৃষি জমির পরিবর্তে তৃণভূমি এবং পশুপালনের পরিবর্তে বনাঞ্চল আবার গড়ে তোলার মাধ্যমে ছিংহাই হ্রদের আশাপাশের তৃণভূমি সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং পানি ও ভূমির ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা হয়েছে ।
পশু পালনের পরিবর্তে হ্রদের পরিবেশ সংস্কার সম্বলিত কার্যক্রম চালু হওয়ায় তেনচেনছু ও তার পরিবার পরিজনরা বাধ্য হয়ে গবাদি পশু বিক্রি করে দেন । তার ফলে তারা খুব মর্মাহত ।
পশু পালনের পরিবর্তে তৃণভূমি আবার গড়ে তোলার কার্যক্রম চালু হওয়ার আগে তেনচেনছু ও তার পরিবার পরিজনরা ৪ শোরও বেশি গরু ও ৪ শোরও বেশি ছাগল পালন করতেন । তখন তাদের বার্ষিক আয় ১০ হাজার ইউয়ানেরও বেশি ছিল ।
এ কার্যক্রম চালু হওয়ার প্রথম দিকে তার স্ত্রীর মতো বহু পশুপালকরাও পশু পালন ছেড়ে দিতে চাইতেন না । কারণ , পশুপালকরা যুগ যুগ ধরে পশুপালনের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতেন । কিন্তু তারা জানতে পেরেছেন , সরকারের এই কার্যক্রমের তাত্পর্য সুদূরপ্রসারী এবং পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক । তা পশুপালকদের ভবিষ্যতের জন্য এটা অনুকূল । পরিবেশের অবনতি হলে তাদের সুখী জীবন শেষ হয়ে যাবে । তেনচেনছু বলেন , ছিংহাই হ্রদের অববাহিকায় নীল আকাশ , সাদা মেঘ ও তৃণভূমি দেখা যেতো । কিন্তু কয়েক বছর আগে এখানকার তৃণভূমিতে মরুকরণের বিস্তৃতি ঘটে । পশুদের খাবারও পাওয়া যাচ্ছিল না । পাহাড় থেকে গাছপালা অদৃশ্য হচ্ছিল । সুতরাং বংধরদের ভবিষ্যতের জন্য এই কার্যক্রম চালুর দরকার আছে ।
1 2
|