সাম্প্রতিক দু'বছরে চীনে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদেরকে সাহায্য করার জন্য কুকুর প্রশিক্ষণের কাজ চলছে। অন্ধদের জন্য এই কুকুর হয়ে উঠতে পারে অন্যতম সহায়।
চীন হচ্ছে ১৩০ কোটিরও বেশি জন অধ্যূষিত একটি বড় দেশ। এর মধ্যে অন্ধের সংখ্যাও প্রচুর। তাদের দৈনন্দিন জীবন যেসব সমস্যার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে হয় তা কল্পনারও অতীত। তবে অন্ধদের স্বাভাবিক শ্রেষ্ঠ বন্ধু হচ্ছে কুকুর। নিত্ত্য দিনের সমস্যা মোকাবিলার জন্য একটি প্রশিক্ষিত কুকুর দারুণ সহায়ক।
চীনের উত্তরাঞ্চলের লিয়াও নিং প্রদেশের তা লিয়ান শহরের শুন খৌ থানার বাণিজ্য এলাকার একটি রাস্তায় প্রতিদিন দেখা যায় , একজন অন্ধ নারী একটি কুকুর নিয়ে আনন্দের সঙ্গে রাস্তায় চলাচল করছেন। তার নাম চাং সু জুন । তিনি আর তার স্বামী দু'জনেই অন্ধ। অন্ধ অবস্থায় তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে ৪০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন। মাস ছয়েক আগে , একটি আদুরে কুকুর তার পরিবারে আসে। তখন থেকে তার জীবনটাই যেন বদলে গেছে। প্রতিটা দিন হয়ে উঠেছে আরো বেশি বৈচিত্র্যময় । আদর করে তিনি কুকুরটির নাম রেখেছেন মাও মাও।" মাও মাও আমার জুতা নিয়ে আসো । আচ্ছা, আমার কাছে দাও । হ্যাঁ , মাও মাও খুব ভাল ! এখন আমি মাও মাওকে সন্তানের মতো দেখি। এমন কি, সন্তানের চেয়েও অনেক বেশি ভালবাসি ।"
একই সঙ্গে চাং সু চুন সংবাদদাতাকে বলেছেন, প্রতিদিন তিনি মাও মাওকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে সবজি কেনেন এবং বেড়াতে যান। উল্লেখ্য, সম্প্রতি মাও মাও-এর সঙ্গে তিনি ট্রেনে করে কয়েক শো কিলোমিটার দূরে তার জন্মস্থানে গিয়েছিলেন । অনেকদিন পর তার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তিনি খোশ মেজাজে বলেন:" আমি মনে করি , এখন আমার জীবন স্বাভাবিক একজন মানুষের মতোই । কোনো পার্যক্য নেই। এখন আমি কোনো কিছু করতে চাইলে মাও মাও-এর সাহায্যে ঠিকমতো করতে পারি । মাও মাও আমার জীবনে অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে। আমার অনেক লাভ হয়েছে।"
আসলে , চীনের তা লিয়ান চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্ধবান্ধব কুকুর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে মাও মাও সোজা চলে এসেছে চাং সু জুনের কাছে । এই কেন্দ্র হচ্ছে চীনের প্রথম এবং একমাত্র কুকুর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এ কেন্দ্রের পরিচালক ওয়াং চিং ইয়ু সংবাদদাতাকে বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে ২৭টি দেশে মোট ৮০টিরও বেশি কুকুর প্রশিক্ষণ স্কুল রয়েছে। ২০ হাজারেরও বেশি কুকুর এখন অন্ধবন্ধু হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। চীনের অন্ধদের সংখ্যা মোট ১কোটি ২০ লাখেরও বেশি। এজন্য দরকার প্রচুর কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া।
তিনি বলেন, ২০০৫ সালের মে মাসে তা লিয়ান চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্ধবান্ধব কুকুর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রপ্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রশিক্ষিত কুকুর অন্ধদেরকে দৈনন্দিন জীবনে বন্ধুর মতো আগলে রাখে। তারা ঘরে-বাইরে যে কোনো সমস্যায় পড়লে কুকুর সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। কুকুরের সাহায্য পেয়ে অন্ধ বন্ধুদের জীবন অনেক গতিশীল হয়ে উঠেছে। কুকুরের প্রজাতি বাছাই এবং তার প্রশিক্ষণ কাজ সম্পর্কে ওয়াং চিং ইয়ু সংবাদদাতাকে বলেন:" অন্ধবান্ধব হিসেবে ল্যাব্রেডোর রিট্রিয়েভারস এবং গোল্ডেন রিট্রিয়েভারস প্রজাতির কুকুর বেশি ভাল। কারণ এ দু'টি প্রজাতির কুকুর সারা বিশ্বে সবচেয়ে সমাদৃত। স্বাভাবিক মানুষের মতোই প্রায় এদের চলা ফেরা। এমন কি, কোনো বাধা এলে বা সমস্যায় পড়লে তা দ্রুত বোঝা সমাধান করার ক্ষমতাও বেশি।"
1 2
|