রোদ বা সৌরশক্তি হচ্ছে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অতিপ্রয়োজনীয় জ্বালানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্স। এ সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, রোদ থেকে সৃষ্ট হাইড্রোজেন আইসোটোপ্ ডিউটেরিয়াম ও ট্রাইটিয়াম এর দ্বারা অ্যাটোমিক নিউক্লিয়াসে ফিউসন প্রক্রিয়ায় তৈরী হয় জ্বালানীসম্পদ। সুতরাং, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা প্রচুর জ্বালানীসম্পদের উত্স হিসেবে কৃত্রিম সৌরশক্তি তৈরীর চেষ্টা করছেন , যা মানুষের জীবনযাত্রা ও উত্পাদনসহ নানা ক্ষেত্রে জ্বালানীসম্পদ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এ জন্য বিজ্ঞানীরা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে গবেষণা ও পরিক্ষার নিরীক্ষার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন । তাঁরা এ গবেষণাকে " কৃত্রিম রোদ বা সৌরসম্পদ" সৃষ্টির পরীক্ষা বলে মনে করেন । সম্প্রতি চীন নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরী একটি নতুন পর্যায়ের ফিউসন্ শক্তির পারমাণবিক পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে । এ পরীক্ষা বিশ্বে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়া বিভিন্ন দেশের বেসরকারী পারমাণবিক শক্তি প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং " কৃত্রিম রোদ সৌরসম্পদ" এর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য অনেক সহায়ক হবে ।
গত ১০০ বছরের মধ্যে, মানুষ জ্বালানীসম্পদের গবেষণা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে শুধু-মাত্র তেল ও রসায়নিক জ্বালানী সম্পদের এক পেশে পরীক্ষা থেকে উন্নত তেল ও রসায়নিক জ্বালানী তৈরী করে তা প্রধান জ্বালানি হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে।এর পাশাপাশি অবশ্য পারমাণবিক জলবিদ্যুত্ শক্তির যৌথ উন্নয়নের বহুবিধ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পারমাণবিক শক্তি জ্বালানী সম্পদ পরিবারের একটি অন্যতম মাধ্যম। এর মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক ফিসন্ ও ফিউসন্ শক্তি। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্থাপিত সব পরমাণু বিদ্যুত্ কেন্দ্রেই ফিউসনের মাধ্যমে পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগানো হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফ্রান্স এবং রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলো ফিউসন্ শক্তির পারমাণবিক পরীক্ষার উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চীনে এ নতুন পর্যায়ের ফিউসন্ শক্তি গবেষণার কাজ ১৯৯৮ সালে শুরু হয় । এতে মোট ২০ কোটি ইউয়ান রেন মিন পি'র পুঁজি বিনিয়োগ করা হয়েছে। চীনের বৈজ্ঞানিক বিভাগের অধ্যাপক ওয়ান ইউয়ান সি এ প্রকল্পটির প্রধান হিসেবে ফিশন্ ও ফিউসন্ এ দু'টি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণিবক শক্তি পদ্ধতির কথা আমাদের সংবাদদাতাকে অবহিত করেছেন। ফিশন্ প্রযুক্তির চেয়ে ফিউসন্ প্রযুক্তির পারমাণবিক শক্তি বেশি কার্যকর। জ্বালানীসম্পদের মানের দিক বিবেচনা করলে ফিশন্ পারমাণবিক শক্তির মধ্যে ইউরেনিয়াম মজুদের পরিমাণ ফিউসন্ শক্তির চেয়ে অনেক কম। তিনি বলেন:" এখন ফিশন্ শক্তির পরমাণু বিদ্যুত্ কেন্দ্রগুলোর জন্য একটি জটিল সমস্যা হচ্ছে পৃথিবীতে ইউরেনিয়ামের যে মোট মজুদের তা বড়জোর ব্যবহার করা করে আগামী ৬০ বছর পর্যন্ত। তবে ফিউসন্ পারমাণবিক শক্তির সম্ভাবনা বিশাল। এ পদ্ধতিতে জ্বালানীসম্পদ সরাসরি সমুদ্র থেকে নেওয়া সম্ভব। তাই মজুদের পরিমাণ অনেক বেশী থাকে।"
পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এক কিলোগ্রাম সামুদ্রিক পানির মধ্যে ড্যিউটিরিউম্ পারমাণবিক শক্তির পরিমাণ , ফিউসন্ পারমাণবিক প্রক্রিয়ায় মোট ৩০০ লিটার পেট্রোলিয়ামের সমান। এ থেকে বোঝা যায় যে, ফিউসন্ পারমাণবিক শক্তিকে ১০ বিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত ব্যবহার করা সম্ভব । কারণ, পৃথিবীতে শুধু সামুদ্রিক পানির মধ্যে ড্যিউটিরিউমের পরিমাণ ৪৫ ট্রিলিয়ন টন ।
1 2
|