সকল চীনার কাছে সাইকেল অতি চেনা একটি জিনিস । দীর্ঘদিন ধরে সাইকেল ছিল চীনাদের একটি প্রধান বাহন । তবে জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং শহরের পরিসরের অবিরাম সম্প্রসারণের সংগে সংগে বাহন হিসেবে সাইকেলের প্রতাপ আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে । সাইকেলের পরিবর্তে বিভিন্ন শহরে দ্রুতগামী ছোট মোটর গাড়ীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে । অথচ বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিগত মোটর গাড়ী শহরগুলোতে যানজট ও পরিবেশ দূষণ বয়ে এনেছে । এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে সবুজ চলাফেরা আবার চীনের কোনো কোনো শহরে কিছু লোকের জীবনের একটি নতুন উপায়ে পরিণত হয়েছে ।
গত শতাব্দির সত্তর ও আশির দশকে চীনের শহরবাসীদের মধ্যে সাইকেলে করে অফিসে যাতায়াত একটি চিরাচরিত ব্যাপার ছিল । তখন বিদেশী পর্যটকরা পেইচিংয়ে এসে ছাং আন রাজপথে চলমান সাইকেলের স্রোত দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হতেন এবং বলতেন , চীনারা অতি বুদ্ধিমান । তারা সবাই সাইকেল চালান । এতে করে তারা একদিকে নিজেদের শরীর সবল করে তুলেছেন , অন্যদিকে পরিবেশও ঠিক থাকছে ।
তবে চীন এখনো সত্যি সত্যিই একটি সাইকেলের রাজ্য । একটি সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , বর্তমানে বিশ্বে বছরে ১৩ কোটি সাইকেল উত্পাদিত হয় । চীনে সাইকেলের উত্পাদন পরিমাণ বিশ্বের উত্পাদনের ৬০ শতাংশেরও বেশি । বিশ্বে সাইকেল বিক্রির দিক থেকেও চীনের স্থান প্রথম ।
সত্তরের দশকে হু মিনের জন্ম । তিনি পেইচিংয়ে চাকরী করেন । সাইকেলের ওপর তার গভীর অনুভূতি রয়েছে । তিনি বলেন , একেবারে ছোটবলা থেকেই আমি সাইকেল চালাতে শুরু করি । যখন আমি প্রাথমিক স্কুলে পড়াশোনা করতাম , তখন আমার স্বপ্ন ছিল বড় হলে আমি একজন পোস্টম্যান হবো । কেন না , পোস্টম্যান হলে আমি রোজ সাইকেল চালাতে পারবো । পরে হু মিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পেইচিংয়ে আসেন । সেসময়ও তিনি সবসময় সাইকেলে করে চলাফেরা করতেন । তিনি বলেন , বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সাইকেলে করে কোথাও গেলে আমার আরাম লাগতো । কেন না , তখন পেইচিংয়ের আবহাওয়া বেশ ভালো ছিল । সেসময় আমি মাঝেমধ্যে সাইকেলে করে সুগন্ধী পাহাড় , লাইব্রেরী বা কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাওয়া আমার কাছে কোনো বোঝা বলে মনে হতো না ।
১৯৯৭ সালে হু মিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে চাকরী পান । তখনও তিনি সাইকেলে করে অফিসে যেতেন । তিনি বলেন , সেসময় প্রধানত আমার নিজের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে সাইকেলে করে অফিসে যেতাম । তখন আমার বেতন বেশি ছিল না । তাছাড়া আমার কাছে সাইকেলে করে কোথাও যাওয়া বেশ সুবিধাজনক ছিল ।
গোটা আশির দশক ও নব্বইয়ের দশকের প্রথম ভাগে হু মিনের মত শহরের অধিকাংশ চীনার প্রধান বাহন ছিল সাইকেল । ২০০০ সালে কাজের প্রয়োজনে হু মিনের কোম্পানি তার জন্যে একটি ছোট মোটর গাড়ির ব্যবস্থা করে । এ সুবিধা পেয়ে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হন । তিনি বলেন , তখন আমার মনে হতো , এটি একটি সম্মানজনক ব্যাপার । কাছাকাছি জায়গায় গেলেও আমি সবসময় গাড়ি চালাতাম । সেসময় যাতায়াতের সুবিধার পাশাপাশি আমি যেন আমার অন্য কিছু চাহিদাও মেটাতে পারতাম । তখনকার কথা স্মরণ করে হু মিন বলেন , গাড়ি চালানো তার কাছে সুখের ব্যাপার ছিল । তিনি বলেন , ৭ বছর আগে আমি মোটর গাড়ি চালাতে শুরু করি । তখন আমার কোম্পানির গাড়ি চালানো আমার কাছে খুবই সুবিধাজনক ছিল । কেন না , সেসময় রাস্তার অবস্থা এখনকার চেয়ে অনেক ভালো ছিলো । তখন আমার কাজ ছিল বিভিন্ন স্থানে যাওয়া । সাইকেলে করে বা ট্যাক্সি করে যাওয়ার চেয়ে নিজে গাড়ি চালানো ভালো ছিল ।
1 2
|