যদিও আমার বাড়ি স্কুলের ভিতরে এবং ক্লাসরুম থেকে মাত্র শত খানেক মিটার দূরে , তবু প্রত্যেক দিন সকালে যখন আমি কাজে যাই তখন আমার মেয়ে আমাকে অনুরোধ করে বলে , মা কিটু আগে আগে বাড়ি ফিরে এসো। আমি সকাল ৬টায় ছাত্রদের সঙ্গে ব্যায়াম করি , রাত ১০টায় বাড়ি ফিরি, এটা বহু বছর ধরে আমার একটা অভ্যাস । আমাদের স্কুলে থাকার ব্যবস্থা আছে । ছাত্রছাত্রীরা প্রায় সবাই স্কুলে থাকে । সকালে তাদের সঙ্গে আমার ব্যায়াম করা এবং সন্ধ্যার দিকে ক্লাসে যাওয়ার উদ্দেশ্য হল , তাদেরকে আমি জানাতে চাই যে , শিক্ষক ইয়ে সবসময় তাদের পাশে আছেন । তারা নিজের বাড়িতে বসবাস করছে যেন এমন অনুভূতি হয়। আমি তিন বছর উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের স্নাতক-ক্লাসের শিক্ষক ছিলাম । আমার শতভাগ ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হল । এর মধ্যে ৬০ভাগ দেশের বিখ্যাত এবং প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হল । একটানা দু বছর আমাদের শহরে যে দুজন ছাত্র সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে সেই দুই জন আমার ক্লাসের । কিন্তু এই ফলাফল আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয় । আমার কাছে যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল , ভাল ফলের পাশাপাশি সতী ও ভালবাসাপূর্ণ মানুষ ।
আমি বিশ্বাস করি , সব শিক্ষক এবং অভিভাবক ছেলেমেয়েকে মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে চান । কিন্তু অনেক সময় প্রচুর খাটাখাটনির পরও ফল তেমন ভাল হত না । আমিও ভাল ফল চাই । কারণ প্রক্রিয়া যত ভাল হোক না কেন ,ফল ভাল না হলে লাভ কি ?
যেমন কম বয়সে প্রেম করা মাধ্যমিক স্কুলের একটি কঠিন সমস্যা । শুধু বড় বড় কথা বলা বা নিয়মে বেঁধে দিলে ছাত্রদের তেমন লাভ হয় না । আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে , ছাত্রদের শিক্ষকের কথা শোনাতে হলে সবার আগে শিক্ষককে ছাত্রদের বুঝতে হবে । তাদের মনের কথা এবং চাহিদা জানতে হবে । এভাবেই কেবল শিক্ষকরা ছাত্রদের সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারবেন । খুশির ব্যাপার হল , প্রেমের সমস্যায় পড়লেই ছাত্ররা আমার সাহায্য পেতে চায় । তারা মনে করে , শিক্ষক ইয়ে তাদেরকে সাহায্য করতে পারবেন। তাই তারা নিজের মনে কথা আমাকে বলতে আসে ।
আমি কখনো তাদেরকে বলব না যে, কম বয়সে প্রেমালাপ করা ভাল নয় । এ ধরণের কথা কেউই শুনতে চায় না । আমি কোনো এক সুযোগে বা কোনো এক বিশেষ পরিবেশে তাদেরকে আমার কথা জানাতাম । যেমন কিছু দিন আগে আমি ছবি দেখার সুযোগে ছাত্রকে জানালাম, সত্যিকার প্রেমের অর্থ কি , মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস কি । মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এমন একটি পর্যায়ে রয়েছে যে , মূল্যবোধ এবং প্রেম সম্পর্কে তাদের নিজস্ব ধারণা গড়ে উঠছে । আমি আশা করেছি, সেই ছবি তাদের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবে । বলাবাহুল্য, ছবিটি দেখে ছাত্রছাত্রীরা আবেগাক্রান্ত ও মুগ্ধ হল । বিশেষ করে মেয়েটির চোখ দুটো জলে ভরে উঠল । আমি তাদেরকে ছবি সম্পর্কে আমার উপলব্ধি বর্ণনা করেছি । মানুষে-মানুষে শুধু প্রেম আছে তা নয় , প্রতিশ্রুতি এবং প্রতীক্ষাও জীবনের অংশ বিশেষ ।
এ ধরণের শিক্ষার সুযোগ ছাত্রদের যেমন মনোযোগের সঙ্গে আয়ত্ত করতে হবে তেমনি শিক্ষকের দক্ষতাও একটি ব্যাপার। আমি শিক্ষকতার কাজ দিন দিন বেশি করে ভালবেসেছি । ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকেও আমি অনেক শিখতে পারি ।এতে আমি সবসময় গতিশীল থাকতে পারি । 1 2
|