১৮ আগস্ট । পাহাড় অঞ্চলে বৃষ্টি । সকাল ৮টায় আমরা নিজেদের লাগেজ নিয়ে সিগাজে থেকে রওয়ানা হয়ে চিয়াংজি যাই । চিয়াংজি হচ্ছে সিগাজে অঞ্চলের কৃষি জেলা । এ অঞ্চলের পানি ও মাটির গুণগত মান ভালো থাকায় চিয়াংজি তিব্বতের প্রধানত কৃষি শস্যের উত্পাদন এলাকা । এখন শরত্কাল রাস্তার দুই পাশে হলুদ রঙয়ের সব শস্য, বাতাসের সঙ্গে হালকা তা দুলছে। চিয়াংজি যাওয়ার পথে আমাদের ড্রাইভার বাসাং বলেন, কাছা-কাছি একটি পুরনো মন্দির আছে, আপনারা কি দেখতে চান ? সবাই জিঁ বলে উঠি ।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমরা সিয়ালু মন্দিরে পৌঁছে যাই । মন্দিরটির ১০০ বছরেরও বেশি ইতিহাস রয়েছে । দীর্ঘকাল ধরে মেরামত না করার কারণে দেখতে একটু পুরনো । মন্দিরের বাইরে ১০টিরও বেশি কুকুর সুর্যালোকে শরীর গরম করে নিচ্ছে শুয়ে থেকে । দেখতে খুব মজার। তাদের পরিবার -পরিজন নেই । মন্দিরের সন্ন্যাসীরা তাদের ভাত খেতে দেয় । আমরা গাড়ি থেকে নেমে আসলে এসব কুকুর মনোযোগ সহকারে আমাদের দেখে এবং আস্তে আস্তে আমাদের কাছে চলে আসে । এতে আমরা পুলকিত হই । আমাদের তিব্বতী বন্ধু লুওসোং বলেন, এসব কুকুর রাস্তায় থাকে, মন্দিরের সন্ন্যাসীরা অনেক উদার । সবসময় তাদের খাবার দেন । ফলে সব কুকুর মন্দিরকে তাদের বাড়ি হিসেবে মনে করে দীর্ঘকাল ধরে এখানে রয়েছে। তাদের মন্দিরে থাকায় কোনো ক্ষতি বা বিপদ হওয়া না বলে স্থানটি কুকুরের স্বর্গে পরিণত হয়েছে ।
এটি পরিদর্শন শেষে আমরা বাইজ্যু মন্দির যাই । তিব্বত আসার পর আমরা অনেক মন্দির পরিদর্শন করেছি । সব মন্দিরেরই নিজেদের বৈশিষ্ট্য রয়েছে । বাইজ্যু মন্দিরের আকার এসব মন্দিরের মধ্যে সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এবং মন্দিরে তিব্বতীয় বৌদ্ধ ধর্মের তিনটি ধর্মীয় দল রয়েছে । সাধারণত এক মন্দিরে শুধু একটি ধর্মীয় দল থাকার কথা । কিন্তু বাইজ্যু মন্দিরের তিনটি ধর্মীয় দল দীর্ঘকাল ধরে শান্তিপূর্ণভাবে একসাথে মিলে মিশে রয়েছে । বাইরের দিকে বাইজ্যু মন্দিরের একটি সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপত্য হল বাইজ্যু প্যাগোডা । ১৪১৪ সালে এ প্যাগোডার নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং এটি নির্মিত হতে ১০ বছর লাগে । প্যাগোডার উচ্চতা প্রায় ৪০মিটার , আয়তন ২২০০ বর্গমিটার । মোট ৪ তলা ও ২০টি ঘর রয়েছে । প্রতি ঘরের দেয়ালে নানা ধরনের ধর্মীয় দেবতার ছবি আঁকা রয়েছে । ছবির মর্মমূলে ভারত ও নেপালের ছবির বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এসব ছবির মাধ্যমে ধর্মীয় শিল্পীর চমত্কারভাবে আঁকা ফলে শিল্পের ভেতরে ধর্ম সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয়েছে । দেয়াল ও ঘরের ধর্মীয় মূর্তির সংখ্যা মোট এক লাখ । এ কারণে এ প্যাগোডার আরেকটি নাম হল এক লাখি প্যাগোডা । যে কেউ প্যাগোডার পাথরের সিঁড়ি বেয়ে উঠে প্যাগোডায় প্রবেশ করতে পারে । প্যাগোডার ভিতরে পাথর ও কাঠ দিয়ে তৈরী সিঁড়ি নির্দিষ্টভাবে প্যাগোডার বিভিন্ন তলাকে সংযুক্ত করে রেখেছে ।
1 2
|