একজন তিব্বতী শিল্পী হিসেবে হান হোং-এর কথা হচ্ছে, তাঁর রক্তের মধ্যে তিব্বতের প্রতি এক প্রগাঢ় ভালোবাসার আবেগ কাজ করে। আর তা তাকে অবিরাম তাড়িত করে তিব্বত ও তিব্বতি মানুষের জন্য গান গাইতে। তাঁর চোখে তিব্বত হচ্ছে একটি প্রীতিকর বাসভূমি। যখন তিব্বতের কথা ভাবেন, তখন ঘি চা, মালভূমির যব দিয়ে তৈরি মদ, উঁচু পাহাড় ও নিজের বাড়ির কথা তার খুব বেশি মনে পড়ে। তার আকাঙ্খা চিরকাল স্বদেশের জন্য তিনি গান গাইবেন।
এখন শুনুন হান হোংয়ের রচিত গান 'স্বদেশ'। এ গানে হান হোং একটি উষ্ণ ও আন্তরিকতায় ভরা তিব্বতের কথা বর্ণনা করেছেন। নীল আকাশ, সাদা মেঘ, পাহাড় জুড়ে গরু ও ছাগলের পাল। আকাশে উড়ছে স্বপ্নের বাজপাখি।আরও কত কী। তিব্বতী সংগীতের অনুকরণে এই গানের সুর রচিত হয়েছে। শুনলে মনে হয় যেন শিশুর মতোই নিষ্কলুষ মিষ্টি ও মধুর।
গায়িকা হলেও হান হোং বেটে-খাটো ও মোটা। চেহারাও বলতে গেলে তেমন সুন্দর নয়। এর ফলে অনেক সংগীত প্রতিযোগিতায় তিনি সফল হতে পারেন নি। কিন্তু হান হোং সংগীতের ওপর তার অদম্য আগ্রহ, সুরের অন্বেষণ ও অক্লান্ত প্রচেষ্টা তাকে কখনোই সংগীত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেয় নি। রচনার দক্ষতা ও হৃদয় স্পর্শী কণ্ঠকে নির্ভর করে অবশেষে তিনি পেশাগত ক্ষেত্রে দারুণ এক সফলতা ও অসংখ্য শ্রোতার স্বীকৃতি পেয়েছেন। নিজের জীবন সংগ্রামের প্রক্রিয়াকে স্মরণ করে হান হোং বলেছেন, "আমি আমার জীবনযাত্রার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল অনুভবকে সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি এবং কৃতজ্ঞতা সবার প্রতি। আমি সেই কষ্টকর দিনগুলোর মূল্য দিই। কারণ, তার জন্য আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছি।"
এখন শুনুন হান হোংয়ের গাওয়া আরেকটি গান। গানের নাম "ঝড়ঝঞ্ঝার সৌন্দর্য"। বন্ধুরা, আসুন আমরা এ গানের মধ্য দিয়ে তাঁর সুন্দরতম সুখ ও অপর বেদনাকে অনুভব করি।
গেসানচোমা হচ্ছে হান হোংয়ের তিব্বতী ভাষার নাম । তিব্বতী ভাষায় 'গেসান' মানে সুন্দর ফুল। 'চোমা' মানে মেয়ে। অর্থাত্ ফুলের মত সুন্দর মেয়ে। ছোট বেলায় হান হোং তিব্বতে ছিলেন। বহু বছর পর এখন তিনি তিব্বত থেকে চলে এসেছেন। তবে তাঁর হৃদয় জুড়ে সবসময় জেগে থাকে নিজের তিব্বতী কাপড় পড়া ও তিব্বতী পিঠা খাওয়া একজন তিব্বতীর মতোই। তাঁর গানের মধ্যে তাইতো সবসময় তিব্বতের অপরূপ ছায়া ফুটে ওঠে। এখন শুনুন "ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি" নামে একটি গান। এটা হচ্ছে হান হোংয়ের গাওয়া গানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
দশ বারো বছর ধরে হান হোং চীনের পপ সংগীত ক্ষেত্রে অক্লান্ত চেষ্টার পর বছরের সবচেয়ে "জনপ্রিয় গায়িকা পুরস্কার" এবং "শ্রেষ্ঠ গায়িকা পুরস্কার"সহ অনেক সম্মানজনক পুরস্কার পেয়েছেন। দরাজ কণ্ঠ ও হৃদয় স্পর্শী পরিবেশনা দিয়ে তিনি হাজার হাজার দর্শক ও শ্রোতার মন জয় করেছেন এবং চীনের মূলভূভাগের পপ সংগীত ক্ষেত্রে তাঁর সর্বোচ্চ মর্যাদাকে সমুন্বত রেখেছেন।
বন্ধুরা, আমরা প্রায় অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আর হান হোংয়ের গাওয়া "আকাশের পথ" গানটি দিয়েই অনুষ্ঠানের ইতি টানতে চাই। এখানে আকাশের পথ এ গানের কথায় বলা হয়েছে, পৃথিবীতে সর্বোচ্চ ও দীর্ঘত্তম রেলপথ হচ্ছে ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ। এই রেলপথ ছিংহাই প্রদেশের সিনিং থেকে তিব্বতের লাসা পর্যন্ত চলে গেছে। এর দৈর্ঘ্য ১৯৫৬ কিলোমিটার। পাঁচ বছরের চেষ্টায় নির্মাণ শেষে ২০০৬ সালের ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে এ রেলপথ চালু হয়েছে। হান হোং এই গানের মধ্য দিয়ে ছিংহাই-তিব্বত রেলপথের নির্মাতাদের শ্রম ও নিষ্ঠার প্রশংসা করেছেন। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) 1 2
|