২০০৬ সালের মার্চ মাসের কয়েকদিন ধরে সানতুঙ প্রদেশের ওয়েই ফাং শহরের নাগরিক লি লিনের মন খুব খারাপ ছিল । তার স্ত্রী সিন হোংসিয়া দু বছর বয়সী ছেলেকে ছেড়ে সঞ্চয় করে রাখা কয়েক হাজার ইউয়ান নিয়ে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের হেইলুংচিয়াং প্রদেশে বড় ভাইকে খুঁজতে গেলেন । লি লিন মনে করেন যে , স্ত্রী তাকে সত্যিকথা বলেন নি । কিন্তু স্ত্রীকী কথা গোপন করেছেন তা তিনি জানেন না । সিন হোংসিয়া সানতুং প্রদেশের চিনিং জেলার গ্রামের লোক । ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বড় । বিয়ের ৪ বছর পর হঠাত তিনি জানতে পারেন যে তার একটি বড় ভাই আছে । তাই স্ত্রীর এবারের হেইলুংচিয়াং সফর সম্পর্কে লি লিনের সন্দেহ হল । ব্যাপারটা কী ?
৪ বছর আগে ঘটকের মাধ্যমে সিন হোংসিয়ার সঙ্গে লি লিনের পরিচয় হয় । তার পরিবার সম্পর্কে লি লিন কিছু জানতে চাইলে সিন হোংসিয়া দুবারই উত্তর এড়িয়ে গেলেন । কোনো কারণে স্ত্রী নিজের মনের কথা বলতে চায় না বলে লি লিন মনে করেন এবং আর কখনোজিজ্ঞেস করেননি।
বাড়ি ছেড়ে কয়েক দিন যাতায়াতের পর সিন হোংসিয়া অবশেষে হেইলুংচিয়াং প্রদেশে পৌঁছান । তিনি তাকে প্রাণ দেয়ার পরিবার খুঁজতে চান । এই গোপন কথা ২৭ বছর ধরে তার মনে চেপে রয়েছে । ২৭ বছর আগের গ্রীষ্মকালের এক রাতে সুন চিস্যুয়ে নামে একটি ছোট মেয়ে একা ছবি দেখতে গেলো এবং সিনেমাহলে ঘুমিয়ে পড়ল । যখন তার ঘুম ভাঙলোতখন গভীর রাত । তার বাড়ি যাওয়ার সাহস হল না । ঠিক এসময় একজন অজানা মধ্যবয়সী পুরুষ তার কাছে হাজির হল । বাবামার সমালোচনা বা শাস্তি থেকে রেহাই পাবার জন্য সে এই অজানা পুরুষের সঙ্গে বাইরগামী একটি রেলগাড়িতে উঠে বসে । রেলগাড়ি যত যায় বাড়ি তত দূরে চলে যায় জেনে ছোটোমেয়েটি জোরে কেঁদে উঠে । অন্য লোক টের পাওয়ার ভয়ে এ সময় পুরুষটি পালিয়ে গেলো । দুঃখের বিষয় হল, ছোটো মেয়ে জানে না ,সাত বছর ধরে সে যে শহরে বসবাস করেছে সে শহরের নাম কী । এর পর সুন চিস্যুয়ে নামে মেয়েটি অনাথ মেয়ে হিসেবে চার দিকে ঘুরে বেড়াতে শুরু করল । তিন মাস পরের এক শীতকালের এক দিন সানতুঙ প্রদেশের চিনিং শহরের এক গ্রামীণ দম্পতি তাকে পালিত মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করেন । নিজের কোনো বাচ্চা নেই বলে স্বামী-স্ত্রী দুজনই মেয়েটিকে নাম দিলেন সিন হোংসিয়া । এই গ্রামীণ দম্পতির পালিত মেয়ে হলেও সুন চিস্যুয়ে আপন বাবামাকে খোঁজারইচ্ছা বন্ধ হয়নি । বড় হওয়ার পর সে মজুরী করে যা আয় করে তা জমা রাখে । পালিত বাবামার অগোচরে একদিন সে আপন বাবামাকে খুঁজতে শুরু করল । সেই বছর সে রেলগাড়িতে বেশ কয়েকবার 'হেইলুংচিয়াং' শব্দটা শুনেছিল । তাই সে মনে করে, সে হেইলুংচিয়াং প্রদেশের মানুষ । ১৮ বছর বয়স থেকে ২৮ বছর পর্যন্ত দশ বছরের মধ্যে সিন হোংসিয়া প্রায়ই হেইলুংচিয়াং প্রদেশের প্রতিটি শহরে গিয়েছে , কিন্তু কোনো ফল হয়নি ।
২৮ বছর বয়সে সত ও পরিশ্রমী লি লিনের সঙ্গে সি হোংসিয়ার পরিচয়ের সুত্র ধরে বিয়ে হল । শ্বশুড় ও শ্বাশুড়ীর আদরে সে বাবামার ভালবাসা অনুভব করতে পেরেছে । এই সুখী জীবনের কারণে গত ৪ বছর সিন হোংসিয়া বাবামাকে খোঁজার ইচ্ছা মনের গভীরে চেপে রাখে । ছেলের জন্ম হওয়ার পর আপন বাবামাকে খোঁজার ইচ্ছা আবার সিন হোংসিয়র মনে জাগে । যাতে স্বামীর সন্দেহ না হয় তার জন্য প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কিছু খবর শোনার পর সিন হোংসিয়া স্বামীকে মিথ্যা কথা বলে দেয় যে, তার বড় ভাই সম্ভবত এখনো বেঁচে আছেন, তাই সে তাকে দেখতে যাবে ।
তিনি একা হেইলুংচিয়াং প্রদেশের চিয়ামুসি শহরে গেলেন । সেখানে তিনি ৪দিন ছিলেন । কিন্তু তার স্মৃতিতে যে প্রাথমিক স্কুল , হাসপাতাল ও সিনেমাহল আছে এখানকার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই । সিন হোংসিয়া খুব হত্যাশ হন । বাড়ি ফিরে স্বামীকে তিনি মনখুলে সবকিছু বললেন । ২০০৬ সালের ১০ মে স্বামী-স্ত্রী দুজন লিয়াওনিংগামী রেলগাড়ীতে উঠেন । লি লিন ভাবলেন , টেলিভিশন কেন্দ্রের মাধ্যমে স্ত্রীর বাবামাকে খুঁজে বের করতে পারব ? সঙ্গেসঙ্গে তারা লিয়াওনিং প্রাদেশিক টেলিভিশন কেন্দ্রে ফোন করলেন । সুন চিস্যুয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনের টেলিফোন পেয়ে টেলিভিশন কেন্দ্রের সংবাদদাতা তাদের সঙ্গে একবার দেখা করলেন এবং তাদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিলেন ।
1 2
|