অন্য মো সো লোকের মতো ৩০০ ইউয়ান মূল্যের এক সেট কাপড়চোপড় পাওয়া আ সিউচেনের পক্ষে একটা সৌখীন ব্যাপার । ছোট বেলায় তার এক জোড়া জুতাও ছিল না । ছোট বেলায় গ্রীষ্মকাল হোক বা শীত্কালহোক সারা বছরই ভাইবোন দুজনেই খালি পায়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথে আসা যাওয়া করত । ৯ বছর বয়সে আ সিউচেন প্রথম এক জোড়া জুতা পেলো । জুতা তেমন ভাল না হলেও আ সিউচেন কিছু মনে করত না । কারণ তার মনে দারিদ্র্যতাকোনো ব্যক্তির ভুল নয় । গ্রামের অন্যান্য ছেলেমেয়েদের তুলনায় সে সৌভাগ্যবতি । কারণ তার বাবা মা তাকে স্কুলে লেখাপড়া করতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন । আ সিউচেনের চোখে লেখাপড়া করা একটি ভাগ্যের বিষয় । এছাড়া আর অন্য কোনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ নয় । ভালভাবে লেখাপড়া করলে সে সব রকমের অসুবিধা কাটাতে সক্ষম হতে পারবে । বর্তমানের অসুবিধা সাময়িককালের ।
আঞ্চলিক অবস্থার কারণ ছাড়া আ সিউচেনের পরিবার গরিব হওয়ার আরেকটি বিশেষ কারণ হল , ১০ বছর বয়সে আ সিউচেনের বাবার অনাথ হওয়া । বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে তার কমবয়সী ৪ জন ভাই বোন ছিল । তিনি শপথ নিলেন যে , ভাইবোনদেরকে মানুষ করে তুলবেন এবং নিজের সন্তানদের পাহাড়ী এলাকার বাইরে পাঠাবেন । যাতে তারা ভিন্ন জীবনযাপন করতে পারে। তিনি শুধু নিজের দুই হাত দিয়ে ৪ ভাইবোনকে মানুষ করে তুলেছেন তা নয় , তিনি দুই ভাইবোন এবং নিজের তিন বাচ্চাকে স্কুলে পড়তে পাঠিয়েছেন । এতে কী যে কষ্ট কী যে অসুবিধা , কেউ তা ভাবতে পারত না ।
নিংলাং জেলা একটি অত্যন্ত গরীব জেলা । বিংশশতাব্দীর আশির দশকের প্রথম দিকে নিংলাং জেলার সরকার মনে করত, নিংলাং জেলার গরীব হওয়ার প্রধান কারণ শিক্ষা । অর্থনীতিরউন্নয়ন করতে চাইলে শিক্ষাকে জোরদার করতে হবে । দারিদ্র্যেরকারণে শিক্ষার বুনিয়াদী অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল । তাদের এলাকায় অধিক থেকে অধিকতর ছেলেমেয়ে স্কুলচ্যুত হয়েছে । আ সিউ চেনের ৪০ সহপাঠীর মধ্যে মাত্র ৪জন সহপাঠী উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল পর্যন্ত পড়েছে । তাই আ সিউচেন সন্তুষ্ট । ভাইবোন দুজন এই কষ্টে পাওয়া লেখাপড়ার সুযোগকে সবসময়ই খুব মূল্যবান করে মনে করে ।
দারিদ্রতারকারণে আ সিউচেন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা পাশ করার পর স্কুল ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিল । ঠিক এই সময় সরকার ও সমাজ তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে । নারী ফেডারেশনের আর্থিক সাহায্যে আ সিউচেন পুনরায় স্কুলে প্রবেশ করে ।
নিংলাং ১ নম্বর মাধ্যমিক স্কুল প্রতি বছর সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ব্যক্তি এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চাঁদা পায় । এই চাঁদাগুলো গরীব ছেলেমেয়েদেরকে অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে । নিংলাং জেলার একটি ভাল ঐতিহ্য রয়েছে , শহরে বসবাসকারীরা স্বেচ্ছায় নিজের গ্রামীণ আত্মীয়স্বজনদের লেখাপড়া করতে আর্থিক সাহায্য করে । শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয় এমন একটি সুপরিবেশে নিংলাং একটি পশ্চাদপদ এলাকা থেকে প্রগতিশীল এলাকায় পরিণত হয়েছে । এ বছর নিংলাং জেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল লিচিয়াং শহরে প্রথম স্থান অধিকার করেছে । আ সিউচেন তার গ্রামের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রী । সরকার ও আত্মীয়স্বজনের আর্থিক সাহায্যে আ সিউচেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে ।
1 2
|