মো সো জাতির মেয়ে আ সিউচেন এ বছর বিশ্ববিদল্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে । বাড়িতে তিন সন্তানের মধ্যে সে মেজো । তার একটি বড় বোন এবং একটি ছোট ভাই আছে ।পরিবারের দারিদ্রতার কারণে সে লেখাপড়া এবং স্কুলচ্যুত হওয়ায় দ্বিধাগ্রস্ত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা তার দীর্ঘকালের স্বপ্ন । অবশেষে আ সিউচেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছে কি ?
মো সো জাতি দক্ষিণ পশ্চিম চীনে বসবাসকারী একটি বিশেষ সংখ্যালঘুজাতি । মাতৃশাসিত সমাজের সংস্কৃতি এক রহস্যপূর্ণ ঘোমটার মতো তাদের ওপর ঢেকে রেকেছে । এখন মো সো জাতির লোকসংখ্যা মাত্র ৪০ হাজার । তারা প্রধানতঃউত্তর-পশ্চম ইউন্নান মাল ভূমির ইউন্নান প্রদেশ ও সিছুয়ান প্রদেশ সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করে । তাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোক ইউন্নান প্রদেশের লিচিয়াং শহরের নিংলাং ই জাতির স্বায়ত্তশাসিত জেলায় বসবাস করে । নিংলাং সিয়াও লিয়াং শান পাহাড় নামে পরিচিত । সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা হল ২৩০০ মিটার । নিংলাং আর খুনমিং শহরের মধ্যে মাত্র ৬০০ কিলোমিটারের ব্যবধান হলেও উচুনিচু ও আকাঁবাঁকা পাহাড়ী পথের কারণে সেখান থেকে বাইর যাওয়া অত্যন্ত কঠিন । দূর প্রান্ত এবং নির্জন পাহাড়ী এলাকায় ই জাতি , হান জাতি, পুমি জাতি , লি সু জাতি সহ নিংলাং জেলার মোট ১২টি জাতির ২ লাখ ৪০ হাজার লোক বসবাস করে ।
যখন আমাদের সংবাদদাতা নিংলাং জেলায় পৌঁছায় তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল মাত্র প্রকাশিত হয়েছিল । মাত্র এক কিলোমিটার দীর্ঘ এবং নিংলাং জেলার এক মাত্র বড় রাস্তার সর্বত্রই বড় অক্ষরের বিজ্ঞপ্তি লাগানো আছে । বিজ্ঞপ্তিতে এ বছর নিংলাং জেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে । আ সিউচেন নিংলাং জেলার ১ নম্বর উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের স্নাতক ছাত্রী । সে সিন ইংফান থানার তুংফং গ্রামে থাকে । তুংফং গ্রাম প্রধানত মো সো জাতির লোক অধ্যুষিত একটি গ্রাম । বাড়িগুলো পাহাড়ের গায়ে ছড়িয়ে আছে। আধা ঘন্টা পর সংবাদদাতারা আ সিউচেনের বাড়ি খুঁজে বের করেছেন । আ সিউচেনের বাড়ি আরও দূরের পাহাড়ে ছিল । ১৯৯৮ সাল নিংলাং ভূমিকম্পে সেখানকার সব বাড়িগুলো ধ্বংস হয়েছে । সরকারের সাহায্যে তাদের নতুন বাড়ি নির্মিত হয়েছে । নিংলাংয়ের ৯৮ শতাংশ ভাগ পাহাড়ী এলাকা । আ সিউচেনের পরিবার শুধু ০.০৫ হেক্টর জমি আবাদ করেছে । তারা এই অল্প জমিতে কিছু খাদ্যশস্য ও সব্জি চাষ করত । এক বছর তারা যে চাল উত্পাদন করে তা শুধু পরিবারের আধা বছরের চাহিদাপূরণ করতো। বাকি সময় তারা ভূট্টা ও আলু খেতো।
সংবাদদাতা এসেছেন শুনে আ সিউচেন পাহাড়ে ঘাস কাটা ছেড়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরল । সংবাদদাতা পুরানো বাড়ির ছবি দেখতে চাইলে আ সিউচেন মাথা নেড়ে নেড়ে নিজের প্রথমটি ছবি দেখাল । সেটা প্রাথমিক স্কুলের ৬ শ্রেণীতে পড়ার সময় তোলা ছবি । ছবিটা পুরোনো হলে বোঝা যায় যে , সে সময় আ সিউচেন খুব খুশী ছিল । কারণ এটা শুধু তার জীবনে প্রথমবার ছবি তোলা নয়, তার প্রথমবার নতুন কাপড় পরাও ।
1 2
|