কুইচৌ প্রদেশের বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির রীতিনীতি যাদুঘর হল সংখ্যালঘু জাতির অধিবাসীদের বসবাসের একটি গ্রাম । সেখানে বিশেষ প্রদর্শনী কেন্দ্র ও প্রদর্শনী পণ্যদ্রব্য নেই । পর্যটকরা সরাসরি গ্রামে প্রবেশ করে স্থানীয় অঞ্চলের সংখ্যালঘু জাতির রীতিনীতি, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যগুলো পরিদর্শন করেন । কুইচৌ প্রদেশের এসব জাতীয় জাদুঘর সম্পর্কে গাইড ওয়াং চুন বলেছেন, এখানে মোট ৪টি জাদুঘর রয়েছে । প্রথমটি কুইচৌর পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত লম্বাশিং মিয়াও জাতির এলাকায় । সেখানে চীন ও নরওয়ে'র যৌথ উদ্যোগে নির্মিত প্রথম জাদুঘর রয়েছে । দ্বিতীয়টি দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে একটি তোং জাতির প্রাকৃতিক সংরক্ষণ অঞ্চলে। দক্ষিণাঞ্চলে বুই জাতির গ্রাম নির্মিত হয় । আরেকটি দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে একটি লোংলি নামের প্রাচীনকালের জেলায় নির্মিত হয় ।
লম্বাশিং মিয়াও জাতির অধিবাসীদের গ্রামে নির্মিত সুওকা রীতিনীতি জাদুঘর ১৯৯৮ সালে কুইচৌ প্রদেশ ও নরওয়েই'র সংশ্লিষ্ট সংস্থার সহযোগিতায় নির্মিত হয় । গ্রামের আয়তন ১২০ বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ৪ হাজারেরও বেশি । এখানে প্রাচীনকালের পুরনো ও বিশেষ লম্বাশিং মিয়াও জাতির সংস্কৃতির উত্তরাধিকার রয়েছে । লম্বাশিং মিয়াও জাতির লোকজন মাথার চুল দু'টি লম্বা গরুর শিং-এর আকারে রাখার কারণে লম্বাশিং মিয়াও জাতি বলে ডাকা হয় । স্থানীয় একটি রূপকথায় বলা হয়েছে, মিয়াও জাতির লোকজন দীর্ঘকাল ধরে সুওগার ১০০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলের মধ্যে বসবাস করেন । বনের পুশুপাখির অনুকরণে তাঁদের মাথায় নানা ধরনের বিশেষ অলঙ্কার রয়েছে । এ ধরনের অলঙ্কার চুলের মধ্যে গরুর শিং আকারের কাঠ রেখে নানা রঙয়ের লাইন দিয়ে চুলের সঙ্গে বেধে রাখা হয় । অলঙ্কারের ওজন প্রায় ২ কেজি, ৩ মিটার চুল লম্বা । তা লম্বাশিং মিয়াও জাতির একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছে । সংখ্যালঘু জাতির রীতিনীতি যাদুঘরের প্রধান স্যু মেলিন বলেছেন, এ জাদুঘর হচ্ছে এশিয়া ও চীনের প্রথম সংখ্যালঘু জাতির চলমান রীতিনীতি যাদুঘর । এখানে ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির কোনো পরিবর্তন হয় নি । সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যিক জীবনযাপনের পদ্ধতি, চমত্কার মোম প্রিন্টিং কুটির শিল্প এবং ঐতিহ্যিক সংগীত ও নৃত্য রয়েছে । বিশেষ করে তাঁদের কাপড় ও মাথার অলঙ্কার খুবই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ।
পাথরের পথ ধরে সুওকা মিয়াও জাতির গ্রামে প্রবেশ করে রাস্তার পাশে ছাদের নিচে এক ধরনের বুনী কোষপঞ্জ নামক উদ্ভিদ রয়েছে । তা হচ্ছে বুনী কাপড় তৈরীর প্রধান কাঁচামাল, বুনী কাপড় হল লম্বাশিং মিয়াও জাতির লোকজনের পোশাক তৈরী করার প্রধান উপাদান । পর্যটকরা সুওকায় তাঁদের জাতীয় পোশাক তৈরীর প্রক্রিয়া পরিদর্শন করতে পারেন , বুনী কাপড় তৈরী থেকে মোম প্রিন্টিং ও পোশাক তৈরী সহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া দেখতে পারেন । তাঁদের কাপড় সম্পূর্ণভাবে হাত দিয়ে তৈরী করা হয় । এক সেট পোশাক তৈরী করতে ২ বা ৩ বছর লাগে । পোশাকের নকশার পরিমাণ ১০ টিরও বেশি । সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এক ধরনের নকশার পদ্ধতি হলো : চুলের মত একটি সুতা ১০ ভাগেরও বেশি বিভক্ত করে আরো ছোট সুতা তৈরী করা এবং সেসব সুতা ব্যবহার করে নকশি করা হয় । চমত্কার নকশার পদ্ধতি লোকজনের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে ।
1 2
|