বার্খোর রাস্তা লাসার পুরনো শহরাঞ্চলে অবস্থিত।এর দৈর্ঘ্য ১০০০ মিটারেরও বেশি । আকার গোল। এ পর্যন্ত ১৩০০ বছরেরও বেশি ইতিহাস রয়েছে । সুন্দর সুন্দর পাথর দিয়ে নির্মিত হয় এই রাস্তা । রাস্তাটি যদিও খুবই চওড়া নয় ,তবুও প্রতিদিন অনেক পর্যটক এখানে বেড়াতে আসায় তা সবচেয়ে ব্যস্ত একটি সড়কে পরিণত হয়েছে ।
বার্খোর রাস্তাজুড়ে অনেক দোকান এবং তাতে প্রচুর ক্রেতার ভীড় । বার্খোর রাস্তায় অস্থায়ী দোকানের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি । দোকানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের তিব্বতী কাপড়, ছাঁদ, ধর্মীয় পাত্র এবং ভারত ও নেপাল থেকে আমদানী করা বিভিন্ন ধরনের পণ্যদ্রব্য বিক্রি হয় ।
বার্খোর রাস্তার দোকানের মধ্যে কয়েকটি দোকানের মালিক হলেন বহু বছর ধরে লাসায় বাস করা মুসলমান এবং নেপালের প্রবাসী । যেমন সয়ামু কাপু নামক একটি টুপির দোকান । তা বার্খোর রাস্তার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত । দোকানের বাইরে তিনটি ভিন্ন সময়কালের সাইনবোর্ড ঝুলানো রয়েছে । তা থেকে বোঝা যায় যে , এ দোকানের ইতিহাস সুদীর্ঘকালের । দোকানে প্রবেশ করার পর একটি সাদা-কালো ছবি দেখা যায় । ছবিতে পুরুষটির পশ্চিম এশিয়ার জাতীয় পোশাক পরা এবং মাথায় একটি সাদা টুপি রয়েছে । দোকানের মালিক রত্না আন্তরিকভাবে আমাদেরকে ছবির কাহিনী বর্ণনা করেন । ছবিটির পুরুষটি হলেন তাঁর দাদা । গত শতাব্দীর শুরুতে তিনি নেপাল থেকে তিব্বতে এসে ব্যবসা শুরু করেন । রত্না বলেছেন, উনি হলেন সয়ামু কাপু । আমার দাদা । তিনি লাসায় থাকার সময় তিব্বতীরা তার নামের উচ্চারণ স্পষ্টভাবে করতে পারতো না । পরে তাঁর মাথায় নেপালের একটি সাদা টুপি এবং সাদা পোশাক পরার কারণে স্থানীয় লোকজন তাকে সয়ামু কাপু বলে ডাকে । এর অর্থ হচ্ছে সাদা টুপি । পরে এ দোকানের নামও হয়ে যায় সয়ামু কাপু ।
সয়ামু কাপু দোকান হল প্রবাসী নেপালীর দোকান। এর ইতিহাস ৭০ বছরেরও বেশি । তা বার্খোর দোকানের পুরনো দোকানের অন্যতম । দোকানে বিভিন্ন যুগের ধাতব বৌদ্ধ ধর্মীয় মুর্তি ও হস্তশিল্পজাত পণ্যদ্রব্য পাওয়া যায় । দোকানের পণ্যদ্রব্য প্রায় সবই নেপালে তৈরী । জানা গেছে, দোকানটির স্বর্ণযুগে অনেক জিনিস বিক্রি করা হত । তিব্বতের প্রথম মটরসাইকেল সয়ামু কাপু চীন -নেপাল সীমান্ত অঞ্চল থেকে তিব্বতে নিয়ে এসেছিলেন ।
আপনারা যদি বার্খোর রাস্তায় যান, তাহলে অবশ্যই বিখ্যাত মাকেয়ে আমে নামক মদের দোকানে যাবেন । তা রাস্তার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি দুই তলার হলুদ ভবন । তিব্বতী ভাষায় মাকেয়ে আমের অর্থ হল পবিত্র মা বা বিমলা মেয়ে । মদের দোকানের মালিক সেরিং ওয়াংছিং বলেছেন, মদের দোকানটি একটি গল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত । জানা গেছে, ৩০০ বছরের আগে তিব্বতের বৌদ্ধপণ্ডিত ষষ্ঠ দালাই লামা সাংইয়াং গয়াসো দেবী খুঁজে বের করার জন্য বহু বার লাসার অলিগলি বা মদের দোকানে যেতেন । সেরিং ওয়াংছিং বলেছেন, সাংইয়াং গয়াসো দোকানে প্রবেশ করার সময় একটি সন্দরী মেয়েও আসল । দরজার পর্দা তোলার সময় তিনি মেয়েকে দেখলেন । তিনি ু তাঁর জীবনে কখনো এতো সুন্দরী মেয়ে দেখেন নি । পরে মেয়েটি আকস্মিকভাবে চলে গেল । তিনি মনে করলেন, এ মেয়ে হলেন দেবী । এ কারণে তিনি বারবার এখানে আসলেন, কিন্তু মেয়ে আর আসে নি।
1 2
|