গ্রামের শিল্পী দলের নেতা লিউ ইং ছুন থু জাতির একজন বৃদ্ধ । তিনি গ্রামের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ওপর খুব গুরুত্ব দেন । তিনি বিশেষ করে ছিংহাই প্রদেশের স্থানীয় অপেরাকে পছন্দ করেন । ইয়্যু ইয়্যু নামে অপেরা ছিংহাই প্রদেশের অন্যতম স্থানীয় অপেরা । এই অপেরা পরিবেশনার জন্য এক জনের বেশ কয়েকটি ভূমিকায় অভিনয় করা প্রয়োজন । বৃদ্ধ লিউ ইং ছুন যে অপেরা পরিবেশন করেন , তা সাধারণতঃ নিজের রচিত । তার পরিচালনায় গ্রামবাসীরা মাঝে মাঝে বিচিত্র আমোদ প্রমোদের আয়োজন করেন । বৃদ্ধ বলেছেন ,
ছেলেমেয়েরা তাকে সযত্নে দেখাশুনা করে । সুতরাং তিনি প্রফুল্লচিত্তে বিবিধ আমোদ প্রমোদে অংশ নিন । তার পরিচালনায় গ্রামের বৃদ্ধ বৃদ্ধারা অপেরা পরিবেশন করে থাকেন ।
বৃদ্ধ লিউ ইং ছুনের বাসা গ্রামের প্রধানের কার্যালয় থেকে খুব বেশী দূর নয় । তার বাড়িতে একটি বড় প্রাঙ্গণও আছে । তা প্রশস্ত ও পরিপাটি । তিনটি কক্ষের দরজা ও জানালার উপরে নানা রকমের ফুলের ডিজাইন খোদাই করা । সংবাদদাতা কক্ষে প্রবেশ করলে তাঁরা তাঁকে দুধ চা ও তেলে ভাজা পিঠা খেতে দিলেন । থু জাতি আন্তরিক ও অতিথিপরায়ণ বলে সুপরিচিত । তাদের বাসায় অতিথিদের আনন্দের সঙ্গে অতিথিপরায়ণতা গ্রহণ করা উচিত ।
বৃদ্ধ লিউ ইং ছুনের বাসায় মোট ন'জন সদস্য আছেন । বড় ছেলে লিউ সিং ফু সি নিন্ শহরের নির্মিয়মান একটি আবাসিক এলাকায় চাকরি করছেন । তিনি মাসে দু'বার বাড়িতে ফিরে আসেন । মেজে ছেলে লিউ সিং কুই গ্রামের একজন দক্ষ মিষ্ত্রী বলে সুবিদিত । তিনি বাড়িঘর নির্মাণকাজে খুব পারদর্শী । শীতকালে যখন কৃষি কর্ম কম , তখন বাড়িঘর নির্মাণস্থলে চাকরি করার জন্য তিনি গ্রামবাসীদের শহরে নিয়ে যান । শহরে চাকরি করার জন্য তার বছরে আয় হয় ১০ হাজার ইউয়ান । মেজো ছেলে লিউ সিং কুই বলেন , গ্রামাঞ্চল বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি গ্রামবাসীরা অধিক থেকে অধিকতরভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠছেন ।
গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার মান এখন অনেক উন্নত হয়েছে । তাদের নিত্যকার জীবনধারণের মান নববর্ষ উদযাপনে সক্ষম । গ্রামে নিত্যদিনের খাবার ও ব্যবহার্য দ্রব্য পাওয়া খুব সহজ । অতিথিদের খাওয়ানোর জন্য তেলে ভাজা পিঠা , মদ ও সিগারেট যে কোন সময়েই পাওয়া যায় ।
বৃদ্ধ লিউ ইং ছুন বলেন , থু জাতির লোকরা সাধারণতঃ বসন্ত উত্সব আগের ২০ দিন থেকে উত্সবে প্রয়োজনীয় খাবার তৈরী করতে শুরু করেন এবং ঘরদোর পরিষ্কার করেন । নববর্ষের আগের দিন রাতে পরিবার পরিজন সবাই মিলে এক সাথে হন এবং দরজা ও জানালায় ড্রাগণ , ফিনিক্স , ঘোড়া ও সোনার মুদ্রা খচিত চার ধরনের নববর্ষ সংক্রান্ত ছবি লাগিয়ে দেন এবং প্রাঙ্গণে আড়ম্বরপূর্ণভাবে শুভ নববর্ষ কামনা করার একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন । এতে নববর্ষের সুখ এবং অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে কামনা করা হয় । নববর্ষের প্রথম দিনের ভোরবেলায় সপরিবারে উত্সবের পোষাক পরতে হয় এবং শরীর চর্চা করতে হয় । দ্বিতীয় দিন গ্রামে অল্পবয়সীদের বয়স্কদের মদ খাওয়াতে হয় । তারা হাতে মদের কেটলি নেন এবং বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রবীণদের প্রতি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান । গ্রামে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বেশির ভাগ প্রাচীন আচার ব্যবহার এখনো প্রচলিত রয়েছে । কিন্তু এই সব রীতি-নীতিও ধীরে ধীরে আধুনিক হয়ে উঠছে । এখন নববর্ষের প্রথম দিন ভোরবেলায় সকল গ্রামবাসী একটি জনসমাবেশে অংশগ্রহণ করেন এবং পরস্পরকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান ।
1 2
|