তিব্বতী কৌতুকপূর্ণ সংলাপ এমন এক ধরনের অপেরা , যার মাধ্যমে হান জাতির কৌতুকপূর্ণ সংলাপ ও তিব্বতের প্রাচীন কলাকৌশলের সমন্বয় ঘটেছে । এই তিব্বতী কৌতুকপূর্ণ সংলাপের লেখক সুনাম সেরিং । তিনি হচ্ছেন তিব্বতী জাতির এমন একজন প্রথম শিল্পী , যিনি তিব্বতী ভাষায় অপেরা ও নাটক রচনা করেন । তা ছাড়া তিনি তিব্বতী শিল্পকলার গবেষণা কাজেও খুব পারদর্শী । তিনি তিব্বতের অপেরা সম্পর্কিত পরিচিতি নামে একটি বইও রচনা করেছেন । এতে তিব্বতের সমৃদ্ধ অপেরা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সারসংকলন করা হয়েছে ।
লাসায় একটি তিব্বতী পরিবারে ৬২ বছর বয়স্ক সুনাম সেরিং-এর জন্ম । নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল থেকে পাস করার পর তিনি তিব্বত নাটক শিল্পী দলে যোগ দেন। কিছু দিন পর তিনি নাটক রচনা কাজ শুরু করেন । গত শতাব্দির সত্তরের দশকের শেষ নাগাদ ৩০ বছরেরও বেশি বয়সী তিনি অভিনয়ের কাজ না করে , আনুষ্ঠানিকভাবে নাটক রচনা শুরু করেন ।
তখন তিনি খুব খুশি হলেন । কিন্তু শিল্পকলা রচনার কাজ চালানো খুব কষ্টসাধ্য । এই কাজ চর্চা করতে হলে অনেক চেষ্টা করতে হয় । এতে যেমন জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা , তেমনি প্রচুর জ্ঞানের সঞ্চয় করার প্রয়োজন। প্রথম দিকে তিনি নাটক রচনা চর্চাকে একটি অত্যন্ত কঠিন কাজ বলে মনে করতেন । ফলে নাটক শিল্পী দলের পরিবেশনের জন্য তিনি কয়েকটি সংক্ষিপ্ত নাটক ও সংগীত্ রচনা করতেন । যখন তিনি দেখলেন তার রচিত নাটক মঞ্চস্থ করা হয় , তখন তিনি খুব খুশি হতেন । এতে তিনি খুব অনুপ্রাণিত ও উত্সাহিত হতেন । ফলে তার রচনার আগ্রহ বৃদ্ধি পায় ।
আরো বেশি উত্কৃষ্ট নাটক রচনা করার জন্য সুনাম সেরিং তিব্বতের বিপুল সংখ্যক ঐতিহ্যিক নাটক পড়েছেন এবং তিব্বতের লোক সংগীত সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়েছেন । কয়েক বছরে প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে তিনি তিব্বতের ঐতিহ্যিক লোক কাহিনী ভিত্তিক সার্জিক ডাং পেল স্কীড নামে একটি বড় বিয়োগান্ত নাটক রচনা করেন । এটা একটা প্রেমের বিয়োগান্ত নাটক । এতে আধুনিক সমাজের নানা রকম আকর্ষণে তিব্বতের দুই প্রেমিক প্রেমিকার আলাদা সম্পর্কিত একটি কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে । সুনাম সেরিং এই নাটক রচনার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন । কিন্তু বহু নাট্যকার তা সমালোচনা করেছেন । এতে সুনাম সেরিং খুব মর্মাহত হন । তিনি বলেছেন ,
এটা তার প্রথম নাটক চর্চা । এই ক্ষেত্রে তিনি আত্মনিয়োগ করেছেন । কিন্তু নাটক মহলের বহু প্রবীণ বিশেষজ্ঞ নানা দিক থেকে এই নাটকের ভুলত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করেছেন । ফলে নাটক রচনার ব্যাপারে তার প্রত্যয় ও উত্সাহ অনেক কমে গেছে । তিনি নিজের রচনার দক্ষতা নিয়ে সন্দেহ করতে লাগলেন ।
কিন্তু সুনাম সেরিং তার রচনার প্রচেষ্টা বাদ দেন নি । তিনি নাটকটি ন'বার সংশোধন করেছেন । ফলে নাটকটি সাফল্যের সঙ্গে মঞ্চস্থ করা হয়েছে । সার্জিক ডাং পেল স্কীড নামে বিয়োগান্ত নাটকে সংগীত , নাটক ও অপেরার সমন্বয় ফুটে উঠেছে । নাটকটি বিপুল সংখ্যক দর্শকদের কদর পেয়েছে এবং চীনের প্রথম সংখ্যালঘু জাতির সাহিত্য পুরস্কার জয় করেছে ।
1 2
|