Web bengali.cri.cn   
চীনে গ্রীষ্মকালীন শস্যের বাম্পার ফলন; তবে কাটেনি উদ্বেগ
  2015-08-03 19:50:17  cri

চীনে গ্রীষ্মকালীন শস্য হিসেবে মূলত গম ও চাল উত্পন্ন হয়। এসময় উত্পাদিত হয়দেশের মোট শস্যের ২৫ শতাংশ। বাকি ৭৫ শতাংশ উত্পন্ন হয় শরতকালে। তখন ভুট্টা ও চালের পাশাপাশি অন্যান্য শস্যও হয়।

গত ১১ বছর ধরেই চীনে গ্রীষ্মকালীন ফসল উত্পাদন ক্রমাগত বেড়েছে। তবে চলতি বছর উত্পাদন হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। কিন্তু এরপরও বিশ্বের সবচে' জনবহুল এই দেশটিতে শস্য-উৎপাদন নিয়ে উদ্বেগ কাটেনি।

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস)-এর হিসাব অনুসারে, চলতি বছর দেশে গ্রীষ্মকালীন শস্য উত্পাদিত হয়েছে ১৪১.০৭ মিলিয়ন টন, যা ২০১৪ সালের চেয়ে ৩.৩ শতাংশ বেশি। এনবিএসের ঊর্ধ্বতন পরিসংখ্যানবিদ হাউ রুই বললেন, "কেন্দ্রীয় সরকারের অব্যাহত সমর্থন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের ফলেই এ বাম্পার ফলন হয়েছে।"

অন্যদিকে চীনের সমাজবিজ্ঞান একাডেমির গবেষক লি কুয়োসিয়াং মনে করেন, বিশ্বে শস্য উৎপাদন কমে আসা ও চীনের অর্থনীতির পুনর্গঠনের প্রেক্ষাপটে, ১২ বছর ধরে শস্যের বাম্পার ফলন দেশটির খাদ্য-নিরাপত্তা ও কৃষিখাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছে।

কিন্তু তারপরও সমস্যা রয়েই গেছে। মূল সমস্যা হচ্ছে, চীনে খাদ্যশস্য মজুত রাখার ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। আর তাই ফসল তোলার সময়টা কৃষকদের জন্য আনন্দদায়ক ব্যাপার হবার কথা থাকলেও, চীনের অনেক কৃষকের জন্য ব্যাপারটা যেন ঠিক উল্টো। হু পেই প্রদেশের ইচাং শহরের ৫৩ বছর বয়সী কৃষক থুং ছিকুও তাদেরই একজন। তিনি এবার তার ২৭ হেক্টর জমি থেকে ১৬০,০০০ কিলোগ্রাম গম তুলেছেন। কিন্তু বিগত পাঁচ বছরের মত এবারও সেগুলো মজুত করার পর্যাপ্ত স্থান পাননি। তিনি বললেন, "শস্য সংরক্ষণ করা না-গেলে, উৎপাদন করে লাভ নেই।"

বস্তুত চীনে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ মিলিয়ন টন শস্য নষ্ট হয়। এসব ফসল নষ্ট হয় পর্যাপ্ত সংরক্ষণ-ব্যবস্থার অভাবে, পরিবহনের সময় বা প্রক্রিয়াকরণের সময়। অবশ্য দেশটি সরকার শস্য মজুতের জন্য আরও গুদাম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে এবং কৃষকদের শস্য গুদামজাত করার বিদ্যমান ব্যবস্থাকে আরও উন্ন ত করারও প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষিবিষয়ক শীর্ষ কর্মগ্রুপের উপ-প্রধান ছান সিওয়েন জানালেন, অব্যাহত বাম্পার ফলন ও আমদানি বাড়ার কারণে দেশের জাতীয় পর্যায়ে শস্য মজুতের পরিমাণ নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

এদিকে শুল্ক বিভাগের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে সিরিয়াল ও ময়দা আমদানি হয়েছে ১৬.২৯ মিলিয়ন টন, যা আগের বছরের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। লি কুওসিয়াং মনে করেন, বিশ্ববাজারে শস্যের দাম কম থাকায় এবং চীনের বাজারে বৈচিত্র্যময় শস্যের চাহিদা থাকায় এ খাতে সার্বিকভাবে আমদানি বেড়েছে।

উত্পাদিত শস্যের মজুতের জন্য পর্যাপ্ত গুদাম না-থাকাই একমাত্র সমস্যা নয়। সফল উত্পাদনে মিঠা পানিএবং কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারও উদ্বেগের কারণ। বিশ্বের মোট আবাদি জমির মাত্র ৯ শতাংশ এবং বিশ্বের ফ্রেস পানির মজুতের মাত্র ৬.৫ শতাংশ চীনে অবস্থিত। এ দিয়ে দেশটিকে বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ মানুষের জন্য খাদ্যশস্য উত্পাদন করতে হয়। আর তাই এখানে শস্য উত্পাদন বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাষায়নিক সার। এতে জমির উর্বরাশক্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে, জমিতে বাড়ছে ক্ষতিকারক পদার্থের পরিমাণ।

এ অবস্থা মোকাবিলায় চীনে কৃষি-ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে ২০০৫ সাল থেকে সরকার ১৯০ মিলিয়ন কৃষককে বিনামূল্যে জমি পরীক্ষার পর উপযুক্ত সার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে আসছে। হো নান প্রদেশের থাংহে কাউন্টির কৃষক লিউ লিফাং জানালেন, এতে জমিতে সারের ব্যবহার কমেছে, উত্পাদন -খরচ কমেছে এবং শস্য উত্পাদনও বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, কৃষি-ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো এবং উত্পাদন বাড়ানো। হো নান প্রদেশের চোংহে গ্রুপ বিশাল শস্যক্ষেত্রে উন্নত সেচব্যবস্থা চালু করেছে। এ ব্যবস্থায় ৭০ শতাংশ বিদ্যুত, ৫০ শতাংশ পানি ও ৯০ শতাংশ শ্রম কম খরচ হয়। কোম্পানির কর্মী ওয়াং ওয়েনমিং বললেন, ¡°নতুন ব্যবস্থায় এক হাজার মু আয়তনের একটি গমের খেতে তিনজন শ্রমিক মাত্র এক ঘন্টায় সেচ দেওয়ার কাজ শেষ করতে পারে। আধুনিক কৃষির এ এক বিষ্ময়কর ক্ষমতা।¡±

চায়না সেন্টার ফর ইকনোমিক এক্সচেঞ্জ-এর উপ-পরিচালক চাং সিনলি জানালেন, চীনের একজন কৃষক যেখানে গড়ে সাত মু পর্যন্ত জমিতে ফসল বুনতে পারেন, সেখানে ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের একজন কৃষক আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতির সাহায্যে কয়েক শত থেকে কয়েক হাজার মু পর্যন্ত খেতে ফসল বুনতে পারে। আর এ কারণেই চীনের কেন্দ্রীয় সরকার দেশের কৃষিখাতের আধুনিকায়নে এবং কৃষকদের কল্যাণে সম্ভাব্য সবকিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। (আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040