

চীনের গ্রামাঞ্চলে অনেক কৃষক বাইরে গিয়ে কাজ করতে চায়, কিন্তু জমিতে কাজ করতে চায় না। দক্ষিণ চীনের কিছু খেতে কৃষকরা বছরে আগে যেখানে দু'বার চাষ করতো, সেখানে এখন একবার চাষ করছে।
গত শতাব্দীর ৮০'র দশকের প্রথম দিকে কৃষিক্ষেত্রে কৃষকদের সক্রিয়তা বাড়াতে চীন গ্রামাঞ্চলে পরিবারভিত্তিক যৌথ-উত্পাদন ব্যবস্থা সংস্কার করে।
সংস্কারের পর কৃষিজমিতে কৃষকদের সক্রিয়তা অভূতপূর্বভাবে বেড়েছে। খাদ্যশস্য উত্পাদনের পরিমাণও অনেক বেড়েছে। তবে ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে শহরে গিয়ে কাজ করা কৃষকদের জন্য একটি বিকল্পে পরিণত হয়। কৃষকরা শহরে যাওয়া শুরু করায় গ্রামাঞ্চলের কিছু আবাদি জমি অনাবাদি হয়ে যায়। তখন অন্য আগ্রহী কৃষক বা কৃষি সংস্থা এসব জমি ভাড়া করে চাষ করা শুরু করে।
প্রশ্ন হচ্ছে: ভবিষ্যতে কে জমি চাষ করবে? কৃষিব্যবস্থার ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে হেইলোংচিয়াং প্রদেশের সুইহুয়া শহরের মেয়র ওয়াং চিন হুই বলেন, "ভবিষ্যত কৃষিতে অবশ্যই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে এবং নতুন ধরণের বিশেষভাবে দক্ষ ও পেশাদার কৃষক তা চাষ করবে। তখন কৃষিশিল্পর কর্মী ও উত্পাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিক্রয়ের দায়িত্ব থাকবে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের হাতে। অল্পসংখ্যক লোক অধিকাংশ জমি চাষ করবে। অধিকাংশ লোক মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।"
উত্তর-পূর্ব চীনে অবস্থিত হেইলোংচিয়াং হচ্ছে চীনের সবচে বেশি খাদ্যশস্য উত্পাদক প্রদেশ। এ প্রদেশে চীনের মোট খাদ্যশস্যের ১০ শতাংশ উত্পাদিত হয়। ২০১৩ সালে হেইলোংচিয়াংয়ে উত্পাদিত খাদ্যশস্যের মোট পরিমাণ ছিল ৬০০০ কোটি কেজি। ২০০৭ সালের তুলনায় উত্পাদন বেড়েছে ৭৩ শতাংশ। ওয়াং চিন হুই বলেন, "ভবিষ্যতে বড় চাষী পরিবার ও পারিবারিক খামার উন্নত হবে; কৃষকদের নতুন নতুন সমবায় গঠিত হবে; নতুন ধরনের কৃষিপ্রধান সংস্থা প্রতিষ্ঠায় উত্সাহ দেওয়া হবে; প্রযুক্তিবিদরা চাষের দৃষ্টান্ত দেবেন। যেমন, ২০১৩ সালে সুইহুয়াতে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৪৩৯৫টি কৃষক সমবায়। জমি হস্তান্তরের হার ৫৫ শতাংশ। এখন পর্যন্ত এক-তৃতীয়াংশ কৃষক মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং এক-তৃতীয়াংশ কৃষকের নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে।"
ওয়াং চিন হুইয়ের কথিত 'কৃষক সমবায়' হচ্ছে, গ্রামাঞ্চলে পরিবারভিত্তিক ঠিকা ব্যবস্থার ভিত্তিতে একই ধরণের কৃষিপণ্যের উত্পাদনকারী অথবা সংশ্লিষ্ট সেবার সরবরাহকারীদের দ্বারা গঠিত আর্থিক সংস্থা। 'কৃষক সমবায়' ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে, জমির মালিকানা কৃষকের হাত থেকে সমবায়ের অধীনে চলে যায়। এতে কৃষি উত্পাদন বাড়ে এবং কৃষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।
এদিকে, চীন কঠোরভাবে আবাদি জমি রক্ষাব্যবস্থা কার্যকর করেছে। ২০০৯ সালে সরকার দেশে আবাদি জমির সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারণ করেছে ১২ কোটি হেক্টর। উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১২ সালের শেষ নাগাদ, চীনে মোট আবাদি জমি ছিল ১২ কোটি ৫০ লাখ হেক্টরেরও বেশি।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আবাদি জমির মোট আয়তন এই নির্ধারিত সীমার নিচে না-নামলেই, ১২০ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে। তবে এ সীমা রক্ষা করা সহজ নয়। কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ক্রমবর্ধমান হারে জমি চাই। ফলে, আবাদি জমি রক্ষায় চীন সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং অবকাঠামো নির্মাণসহ নানা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়েছে।

| ||||



