Web bengali.cri.cn   
বিভিন্ন দেশের ছুটির ব্যবস্থা
  2014-02-03 19:00:17  cri



এখন পুরো চীন তাদের বৃহত্তম ঐতিহ্যবাহী 'বসন্ত উত্সব' উদযাপন করছে। আপনারা হয়তো ইতোমধ্যেই আমাদের অন্যান্য বাংলা অনুষ্ঠানে থেকে এ উত্সব সম্বন্ধে জানতে পেরেছেন। হ্যাঁ, নানা ভাবে এবং নানা পদ্ধতিতে চীনারা এ উত্সব উদযাপন করে এবং এ জন্য বিশেষ করে এ উত্সব উপলক্ষে সরকার সাত দিনের ছুটিও ঘোষণা করেছে। এ সময়টিতে সবাই তাদের পরিবার তথা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে একসাথে সময় কাটানোর জন্য বিভিন্ন প্রদেশ বা স্থান থেকে অনেক কষ্ট করে বিমানে বা ট্রেনের টিকিট কিনে বাসায় ফিরে আসে। কেউ কেউ আবার পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিদেশে বা দর্শনীয় কোনো স্থানে গিয়ে বসন্ত উত্সব কাটায়। কর্মজীবি মানুষের কাছে ছুটি একটি মিষ্টি বিষয় তাই না?

সত্যি, কে আছে যে ছুটি পছন্দ করে না? কর্মব্যস্ত দিন পার করে কয়েকদিন ছুটি নিয়ে দেশ বিদেশে ভ্রমণ করা অথবা কোথাও না গিয়ে শুধু বাসায় থাকাও অত্যন্ত আনন্দের এবং আরামের ব্যাপার,তাই না?

ইউরোপে ঋতুর উপর নির্ভর করে ছুটি দেয়ার রীতি প্রচলিত আছে। সাধারণত বার্ষিক ছুটির জন্য জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এ তিনটি মাসকে নির্ধারিত করা হয়। এ ঋতগুলোতে পর্যটন সেবা বিভাগ ও জরুরী অবস্থা মোকাবিলা সংস্থা ছাড়া শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগ প্রায় অচল হয়ে পড়ে।

মজার ব্যাপার হলো কেউ কেউ ঠাট্টা করে বলে যে, ইউরোপে যদি বিরোধী দল সরকারকে উত্খাত করতে চায় তাহলে তারা বছরের এই তিন মাসে কিছু করতে পারবে না, কারণ সবাই ছুটিতে আছে, কেউ তাদের বিরোধী তত্পরতায় অংশ নিতে পারবে না।

যদি আমরা জানতে চাই কোন দেশে ছুটি সবচেয়ে বেশি তাহলে এর উত্তর নিশ্চয়ই ফ্রান্স। ফরাসীরা শুধু যে খুব রোমান্টিক তাই নয়, বরং তারা কিভাবে আরো আরামদায়ক জীবন কাটানো যায় তা খুব ভালো জানে। একজন ফরাসী প্রতি বছরে সবচেয়ে বেশি হলে ১৫০দিন ছুটি পেতে পারে, তা এক বছরের ৩০ শতাংশেরও বেশি। বর্তমানে তাদের প্রতি সপ্তাহে কাজের সময় শুধুমাত্র ৩৫ ঘন্টা। যদি আপনি এর চেয়ে বেশি সময় কাজ করেন, তাহলে সে অতিরিক্ত সময়কে ছুটি হিসেবে পরিবর্তন করতে পারেন।

আর এখানে শ্রোতাকে আরেকটি তথ্য জানাতে চাই , প্রিয় শ্রোতা, আপনি কি জানেন সবেতনে ছুটির নিয়ম চালু করে প্রথম কোন দেশ? শ্রোতা, উত্তরটি হচ্ছে-ফ্রান্স। ১৯৩৬ সালে ফ্রান্স সরকার নিয়ম করে যে, সব ফরাসিদের প্রতি বছর সবেতন ছুটির সুযোগ দেয়া হবে। বর্তমানে ফ্রান্সের সবেতন ছূটির সময় প্রতি বছর ৫ সপ্তাহ অর্থাত্ এক মাসেরও বেশি। কি মনে হয় শ্রোতাবন্ধু, এটি আনন্দের খবর না?

আসলে ই-ইউর সদস্য দেশের ছুটির নিয়মও খুব আনন্দের। ইইউ তার সব সদস্য দেশকে প্রতি বছর অন্তত ৪ সপ্তাহ মানে একমাস সবেতনে ছুটি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। লক্ষ্য করুন স্থায়ী কর্মী অথবা অ-স্থায়ী কর্মী সবাই এর আওতাভূক্ত হবে। এভাবেই ইউরোপে সবার ছুটির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই না? আপনি হয়তো মনে করছেন ই-ইউর সদস্য দেশের ছুটি ব্যবস্থাটাই সবচেয় ভালো এবং তা সত্যিই কর্মীদের ছুটির চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে করা হয়েছে। আসলে আরো ভালো কিছু বিষয় এখনো জানার বাকি আছে। ই-ইউ আরো নিয়ম করেছে যে, প্রত্যেকেই কাজের প্রথম বছর থেকেই সবেতন ছুটির অধিকার পাবে। তবে সামান্য একটি পূর্ব শর্ত হল কর্মের মাত্র ৩ মাস পর থেকেই এমন অধিকার ভোগ করতে পারবে। যেমন, কাজের সময়কাল ৩ মাস হলে এক সপ্তাহ ছুটি পাবে, ৬ মাস হলে ২ সপ্তাহের ছুটি পাবে।

খুব আনন্দের তাই না? এ সব নিয়মের কারনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার জনগণের ছুটির অধিকার পূরণে নিজেদেরকে তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি কার্যকর এবং উচ্চ স্থানে রয়েছে বলে মনে করে এবং আরো ভালোভাবে জনগণের ছুটির-অধিকার নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা করে থাকে। অন্যান্য অধিকারের কথা বলবো না, কিন্তু এই ক্ষেত্রে তারা সত্যি খুব ভালো কাজ করেছে, তাই না? ই-ইউ যদিও ৪ সপ্তাহ ছুটির ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু আদতে ই-ইউ'র অধিকাংশ সদস্য দেশ তাদের নিজেদের দেশের নিয়মানুযায়ী ৪ সপ্তাহেরও বেশি সময়ের জন্য ছুটি দিয়ে থাকে।

এ বিষয়ে আরো অনেক দেশ আছে তারাও খুব ভালো করেছে। এক্ষেত্রে আমরা জার্মানির দিকে একটু দৃষ্টি ফেরাবো। বলা যায়, ছুটি কাটানো হল জার্মানির জনগণের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। জার্মানির শ্রম নিয়মে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, যে কর্মী, পদ উচ্চ হোক, নিম্ন হোক, সবারই প্রতি বছর ৩০ কর্ম দিনের ছুটি আছে। সপ্তাহের ছুটি, নববর্ষের ছুটি, শ্রম দিবস, জাতীয় দিবস এবং অন্যান্য ধর্মীয় ছুটিসহ জার্মানির মানুষ বছরের অর্ধেক সময় ছুটি কাটায়।

সুইডেনে যারা স্বেচ্ছায় ১২ মাসের লম্বা ছুটি কাটাতে চায়, তাদের কোনো প্রকার আর্থিক সুবিধা বঞ্চিত হওয়া বা দণ্ড ভোগ করতে হয় না। বরং ৮৫ শতাংশের মত বেকারত্ব বীমা পেয়ে থাকেন।টুটুল, এটা শুনে তোমার কেমন লাগছে?

আর এ ছাড়া অনেক দেশ নিজ দেশের রীতিনীতি অনুযায়ী বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী উত্সবের সময়ও সরকারি ছুটি পেয়ে থাকে।এটাও খুব ভালো ব্যবস্থা। নিজ দেশের সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে শ্রদ্ধা জানাতে হয়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক