Web bengali.cri.cn   
চীনের বসন্ত উত্সব
  2014-01-30 19:08:30  cri


বসন্ত উত্সব ঐতিহ্যিবাহী চীনা পঞ্জিকা অনুসারে চীনাদের কাছে নববর্ষও বটে। চীনা জনগণ প্রাচীনকালের চীনের আবহাওয়া, জ্যোতির্বিদ্যা এবং কৃষি মৌসুমের বৈশিষ্ট্য অনুসারে চীনা পঞ্জিকা উদ্ভাবন করেছিলেন। বসন্ত উত্সব সাধারণত জানুয়ারি মাসের শেষ দিন থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি, এই সময়ের মধ্যে উদযাপিত হয়। এই উত্সব কে নিয়ে প্রায় চার হাজারের মত ইতিহাস প্রচলিত আছে।

অতীতে চীনা পঞ্জিকায় নববর্ষকে বসন্ত উত্সব না বলে, নববর্ষ বলা হত। ১৯১১ সালে চীন ইউরোপীয় পঞ্জিকা অনুসারে পয়লা জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে। আর এভাবেই ঐতিহ্যিক চীনা পঞ্জিকার নববর্ষের পরিবর্তিত নাম হয় বসন্ত উত্সব।

বসন্ত উত্সবের কর্মসূচি সাধারণত তিন সপ্তাহের হয়। এই উত্সব উপলক্ষে জনগণ তিন দিন সরকারি ছুটি পেয়ে থাকে। এই ছুঁটির দিনে বড় বড় অক্ষরে লেখা কবিতার ছত্র এঁটে দেওয়া, দেয়ালে ছবি টাঙানোসহ পটকাবাজি, ড্রাগণ লণ্ঠন জ্বালানো, সিংহ-নাচ নাচা, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতে গিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো ছাড়াও নতুন বছরে গোটা পরিবারের সুখশান্তি কামনা করা হয়।

একটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে,বসন্ত উত্সব উপলক্ষে উত্তর চীন আর দক্ষিণ চীনের রীতিনীতি কিন্ত্ত এক নয়। তবে উত্সবের প্রাক্কালে অর্থাত্ উত্সবের আগের দিন সন্ধ্যায় পরিবারের সবার সঙ্গে একসাথে বছরের শেষ খাওয়া সম্পন্ন করার রীতি পুরো চীনেই প্রচলিত।

পরিবারের যারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকে অথবা একই শহরে আলাদাভাবে থাকে, তাদের সবাইকে এদিনটিতে অন্য সবার সঙ্গে মিলিত হতে হয়।

উত্তর চীনের লোকেরা বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে পুনর্মিলনের জন্য সাধারণত চিয়াওজি অর্থাত্ বাংলাদেশের মত একধরনের পুলি পিঠা তৈরি করে সবাই একই সঙ্গে খেয়ে থাকে আর দক্ষিণ চীনের লোকেরা ইউয়ান সিয়াও অর্থাত্ আঠালো চালের গুড়ো দিয়ে গোলকৃতির বিভিন্ন খাদ্যবস্তু তৈরি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে খেয়ে থাকে । 'চিয়াওজি' ও 'ইউয়ান সিয়াও' দুটো খাবারই পরিবারের পুনর্মিলন ও সুখশান্তির প্রতীক।

 এদিন রাত্রে চীনা জনগণের কাছে মধ্য-রাত পর্যন্ত জেগে থাকার একটি রেওয়াজ প্রচলিত আছে। খাওয়ার পর পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে গল্প করে টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপভোগ করে এবং পটকা ফোটায়। পরদিন সকালে অর্থাত্ বসন্ত উত্সবের প্রথম দিন সকালে সবাই সুন্দর জামা-কাপড় পরে অতিথিদের স্বাগত জানায় অথবা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে উত্সবের শুভেচ্ছা জানায়।

প্রিয় শ্রোতা, এ বছরটি হলো চীনের ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া বর্ষ। এবারের এ বসন্ত উত্সবের মাধ্যমে মূলত এই ঘোড়া বর্ষের সূচনা হয়। চীনের পঞ্জিকায় প্রত্যেক বারো বছর বারোটি প্রাণীর নামে চিহ্নিত। এই বারোটি প্রাণী হল: ইদুর, গরু, বাঘ, খরগোস, ড্রাগণ, সাপ, ঘোড়া, ছাগল, বানর, মোরগ, কুকুর এবং শুয়োর। এই বারোটি প্রাণীর নামে নামকরণ করা বারোটি বছর চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে আসে।

ড্রাগণ চীনের একটি কাল্পনিক পৌরাণিক প্রাণী যা কালক্রমে চীনা জাতির প্রতীক হয়ে ওঠে। প্রাচীনকালের বই পত্রের কাল্পনিক বিবরণ অনুযায়ী, ড্রাগণের আকার সাপের মত, গায়ের আঁশ মাছের নাকের মত আর কান গরুর কানের মত। ইতিহাসে রাজবংশের রাজারা নিজেদেরকে ড্রাগণের মূর্ত প্রতীক বলে মনে করতেন। তাঁরা তাদের শরীরকে ড্রাগণের শরীর, পরা পোশাককে ড্রাগণপোশাক আর তাদের বসার আসনকে ড্রাগণ আসন বলতেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক