Web bengali.cri.cn   
সশস্ত্র ব্যক্তি কিভাবে কারাগার থেকে পালিয়ে যায়
  2014-01-20 19:54:00  cri



আমরা জানি সশস্ত্র ব্যক্তিরা খুব রহস্যময়ী।ভালো কাজের পাশাপাশি তারা অনেক সময় খারাপ কাজ ও করে থাকে। যারা খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের মধ্যে অনেককেই ইতোমধ্যে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

কারাগারে তারা কি খুব শান্তভাবে থাকবে? এর উত্তর অবশ্যই না। তারা অবশ্য কারাগার থেকেও পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে তাই না?

সশস্ত্র ব্যক্তিরা কীভাবে কারাগার থেকে পালিয়ে যান।তাদের পদ্ধতি এবং এ ক্ষেত্রে তারা আসলে কতটা সফল হন এবং আসলেই তারা সফল হন কি না।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ বেশ কিছু অঞ্চলে করাগার থেকে বন্দিদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। পালিয়ে যাওয়া এসব ঘটনার সঙ্গে আল-কায়েদার বন্দিদের পালিয়ে যাওয়া ঘটনার মিল দেখা যায়।

তাদের কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার পদ্ধতি নানা ধরণের এবং তা এক ধরণের পেশাদারীত্বমূলক মনোভাব প্রকাশ করে । সাম্প্রতিক বছরগুলির এমন সব ঘটনা পর্যালোচনা করলে তা থেকে একটি খুব মজার তথ্য পাওয়া যায়, তা হলো- প্রতি বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার মত এমন সব ঘটনা বেশি ঘটে। বিশেষ করে ইরাক ও লেবাননে।

এর কারণ তখন এ অঞ্চলের আবহাওয়া বছরের মধ্যে সবচেয়ে গরম থাকে । আর এমন গরম আবহাওয়ার কারণে কারাগারের পরিবেশ ও পরিস্থিতি এতটা খারাপ এবং অসহনীয় হয়ে ওঠে যে, বন্দিরা সহ্য করতে না পেরে এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে।

এ ছাড়া আরো একটি কারণ আছে, তা ইসলাম ধর্মের রমজান মাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রতি বছর আগস্ট মাসে ঠিক রমজান মাসের সময় বন্দিদের কারাগার থেকে পালানোর জন্য আরেকটি উত্তম সময়। কারণ এ সময়ে কারাগারের প্রহরীরা ততটা কঠোর থাকেন না, ফলে বন্দিদের পালানোর জন্য তা খুব একটা ভালো সুযোগ।

আর এখন আমরা বন্দিদের এসব কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার বেশ কিছু পদ্ধতি নিয়ে কথা বলবো। এসব পদ্ধতির মধ্যে সুড়ঙ্গ খনন করা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এমন পদ্ধতি মধ্যপ্রাচ্যে খুব বেশি প্রচলিত । যেমন হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা শহরে ইসরাইলের অবরোধ ভেঙে দেওয়ার জন্য স্থানীয় লোকেরা হাজার হাজারটি গোপনীয় সুড়ঙ্গ খনন করেছে, যাতে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানো যায়।

এ প্রসঙ্গে আপনাদেরকে দু'টি উদাহারণ দিতে চাই। ২০০৮ ও ২০১১ সালে ইয়েমেনের এডেনে দু'টি কারাগার থেকে বন্দিদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে যা সুড়ঙ্গ খননের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়।

বন্দিদের গবেষণায় জানা যায় যে, স্থানীয় জমি খুব সহজেই খনন করা যায় এবং ডিসেম্বর মাসে বৃষ্টি কম হওয়ায় আবহাওয়া থাকে ঠান্ডা।আর এমন আবহাওয়া কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযোগী। এ থেকে বোঝা যায় যে , তারা কতটা পেশাদার।

এসব ঘটনার ওপর একটু মনোযোগ দিলে আমরা ধারণা করতে পারি যে এসব বন্দি সত্যি অনেক ধূর্ত, চিন্তাশীল । সঠিক সময়, সঠিক স্থান বাছাই করা সহ তারা প্রহরীদের মনোযোগকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে। তারা কারাগারে ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে যাতে ফুটবল ভক্ত বা কারাগারের বন্দিদের চিত্কার,উল্লাসে তাদের সুড়ঙ্গ খনন করার শব্দ অন্যরা শুনতে না পায় । কি বুদ্ধিমান! তাইনা?

অবশ্য সুড়ঙ্গ খনন করা খুব আদিম একটা পদ্ধতি। আরো অনেক চালাক, আধুনিক, স্মার্ট পদ্ধতি আছে এবং তা একদম ক্লান্তিহীন । তা হল ঘুষ দেয়া। কাকে? অবশ্যই কারাগারের প্রহরীকে।

২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি, ইরাকের বসরা নগরীর একটি কারাগারে, এ কারাগার আগে সাদ্দাম হোসেনের প্রেসিডেন্ট ভবন ছিল। এ কারাগারে আল-কায়েদার ১২ জন বন্দি প্রহরীকে ঘুষ দেন এবং এর মাধ্যমে তারা পুলিশের কাপড় বা ইউনিফার্ম পরে কারাগারের প্রধান দরজা দিয়ে বাইরে চলে যান এবং এখনো তাদের গ্রেফতার করা হয় নি।

কারাগারে থাকা বন্দিদের জন্য মানবিক ভাবে খুব খারাপ লাগে তাই না।

স্বাধীন জীবন তাদের চোখে মারাত্মকভাবে আকর্ষণীয়। তাই তো বন্দিরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে তারা কি সবাই সফল হয়? এর উত্তর অবশ্যই না।

মধ্যপ্রাচ্যে জানা মতে, যে ৭টি কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে তার মধ্যে শুধু ৫টি সফল হয়, বাকি দু'টি ব্যর্থ হয়। আর ব্যর্থ হলে প্রাণ হারাবার ঝুঁকিও থাকে। পুলিশ বন্দিদের আবার গ্রেফতার করার সময় সম্ভবত গুলি ছুড়ে। কিছু বন্দি এতে মারা যায়।

তাই উচিত কোনো খারাপ কাজ না করা এবং সুন্দর ভাবে জীবন কাটানো, তাই না?

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক