Web bengali.cri.cn   
অফিস থেকে অনুপস্থিত থাকার সবচেয়ে আশ্চর্য অজুহাত
  2014-01-13 18:55:48  cri



সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য মাধ্যমের খবরে প্রকাশ পায় যে , সে দেশের পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরোর বিশেষজ্ঞ জন বিল ২০ বছর ধরে প্রতি সপ্তাহে শুধু চার দিন তার অফিসে যান এবং বাকি দিন তিনি ছুটি নেন একটি ভয়ঙ্কর রকম আশ্চর্য অজুহাতে। কিন্তু তার বস তার এই অজুহাত বিশ্বাস করেন এবংএর জন্য তার বেতনের কোনো পরিবর্তন হয় না।

তিনি তার বসকে বলেন যে, তিনি সিআইএ অর্থাত্ যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার গোপনীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন এবং তিনি উল্লেখ করেন, তিনি পাকিস্তানে তালিবানদের ওপর আঘাত হানার জন্য বিশেষ এক ধরনের কাজ করবেন। কী সাহসী তাই না? এত বড় মিথ্যা বলতে পারেন।

আরো হাস্যকর ও অদ্ভূত বিষয় হল তার বস তার কথা বিশ্বাস করেছেন। তাই ২০ বছর ধরে বিল প্রতি সপ্তাহের একদিন অফিসে যান না "গোপন এজেন্ট হিসেবে" কাজ করেন বলে ।

তার বয়স এখন ৬৪ বছর। তিনি অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরোতে কাজ করতে শুরু করেন। তার চমত্কার কাজের কারণে তিনি একবার প্রেসিডেন্ট পদকও পেয়েছিলেন। এতে বোঝা যায়, তিনি সত্যি খুব ভালোভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন।

পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরোয় তিনি একজন উচ্চ পদস্থ নীতি নির্ধারক হিসেবে কাজ করেন এখন।

বিল হলেন পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরোয় সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া কর্মকর্তাদের অন্যতম। তার বার্ষিক বেতন প্রায় ১.৬৪ লাখ মার্কিন ডলার। অনেক সাধারণ মানুষের মতে বিলের জীবন খুব সুখী, তাই না? কিন্তু, তিনি তাতে ততোটা সুখী এবং সন্তুষ্ট নন। তিনি আরো আরাম এবং আরো চমকপ্রদ জীবন চান। তাই ১৯৯৪ সালে তিনি তার বসকে উপরোক্ত মিথ্যা কথা গুলো বলেন, এবং তার পরিকল্পনা সফল করেন।

শুরু থেকেই তখন কেউ তার কথার সন্দেহ করেন নি এবং এমন অবস্থা দেখে বিল আরো সাহস পেতে থাকেন ।

২০০০ সাল থেকে তিনি প্রতি সপ্তাহে পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরোয় মাত্র চার দিন কাজ করেন, বাকি এক দিন কেউ জানে না বিল কোথায় গেছেন বা তিনি কি করেন। অবশ্য বিল তার অফিসের ইলিকট্রনিক ক্যালেন্ডার-এ লিখে রাখেন যে, তিনি সিআইএ'র গোপন দায়িত্ব পালন করতে গেছেন। তাই তিনি অফিসে আসেন নি।

পরে পুলিশের তদন্ত থেকে জানা যায়, এসব গোপনীয় দায়িত্ব সবই মিথ্যা।

বিলের মোবাইল ফোনের যোগাযোগের রেকর্ড তদন্ত করার পর জানা যায়, যখন তিনি অন্যকে বলেন তিনি পাকিস্তানে গোপনীয় কাজ করতেন, তখন আসলে তিনি মাসাচুসেটস রাজ্যে আনন্দ সময় কাটতেন।

বিলের এই প্রতারণামূলক আচরণ ২০০৮ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে। এসময় পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরো তার বেতন কমিয়ে দেয় নি, বরং তাকে সময় মত বেতন পরিশোধ করতো।

তদন্ত থেকে জানা যায়, অফিসে তিনি মোট অনুপস্থিত ছিলেন ২.৫ বছর। এসব অনুপস্থিত সময়ের জন্য তিনি ৩.৫ লাখ মার্কিন ডলার বেতন পেয়েছেন। অবশ্য এসব টাকা টাকা তাকে দেয়া উচিত হয়নি । কারণ তিনি উপস্থিত ছিলেন না।

এ ছাড়া তিনি তার বস কে বলেন যে, তাকে সিআইএ'র গোপনীয় কর্তব্য পালনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গা এবং বিদেশে যেতে হয়, তাই পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরোকে তার বাইরে যাওয়ার সব ফি দিতে হবে।এ ব্যাপারে তার বসও রাজি হন।

এ সুবিধা পাওয়ার পর তিনি অনেক বার বিমানে করে বিভিন্ন জায়গায় যান, বিমানে তিনি ফার্স্ট ক্লাস টিকিট কিনেন, বাইরে তিনি খুব নামকরা হোটেলে থাকেন। পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরো তার এসব ফি বহন করে। আর পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরো মনে করতেন তিনি গোপনীয়এজেন্ট, তাই তার সব আচরণে একবারও হস্তক্ষেপ করে নি। জানা যায় , তিনি যে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন, এসব ভ্রমণের জন্য তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ লাখ মার্কিন ডলার।

খ: যদিও ২০১০ সালের জুলাই মাসে পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরো কে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয় যে, ব্যুরোতে কেউ কেউ সিআইএ'র গোপনীয় এজেন্ট হিসেবে প্রতারণা করছে ।

অবশ্য তখন পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরো এ ঘটনার ওপর গুরুত্ব দেয় নি এবং তদন্তও করে নি। ২০১১ সালে জন বিল আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নেন এবং তখন থেকে তদন্ত শুরু হয়।

আইন অনুযায়ী, দেশের সম্পদ চুরি করায় তাকে ১০ বছর কারাদ্বণ্ড দেয়া হয় । বিল তার সব অপরাধ স্বীকার করেন এবং অবাক করার বিষয় হল তিনি প্রতারণা করে যে টাকা নিয়েছিলেন তা ফেরত দেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক