Web bengali.cri.cn   
"ভাগ্যবান দেশ" অস্ট্রেলিয়া
  2013-12-09 18:19:05  cri



আমরা সবসময় চাই যে, নিজের দেশটি হোক শান্তি আর সমৃদ্ধির লীলাভূমি, চাই অর্থ আর বিত্তেও হোক বিশ্বের সেরা, শক্তিশালী। আর সেই দেশে আমারও হবে সুখী আর সমৃদ্ধির এক সফল জীবন। আপনি জানেন কি, বিশ্বে এমন একটি দেশ আছে, এ দেশকে "ভাগ্যবান দেশ" হিসেবে বর্ণনা করা যায়। কারণ সে দেশের বেকারত্বের হার ৫.৫ শতাংশ, যা অর্থ সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার সদস্য দেশের মধ্যে সবচেয়ে' কম। সে দেশে প্রতি ঘন্টার জন্য নিম্নতম মজুরী স্থানীয় মুদ্রায় ১৬ ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুণ। বিশ্বের তিনটি সর্ব বৃহত ঋণমান নির্ধারণ সংস্থা এই দেশটিকে পরপর তিনটি AAA পর্যায়ে অভিহীত করেছে। বিশ্বের কেবল ৮টি দেশকে এই মানের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের ভয়াবহ আর্থিক মন্দাকালেও যে দেশের সব ব্যাংক ছিল নিরাপদ ও স্বাভাবিক। সেই দেশটির নাম হল অস্ট্রেলিয়া।

অর্থ সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা অর্থাত্ ওইসিডি একটানা তিন বছর ধরে অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে নির্বাচন করে আসছে। বাড়িঘর, আয়, কর্মসংস্থান, কমিউনিটি, শিক্ষা, পরিবেশ, সরকার পরিচালনা, স্বাস্থ্য, জীবন, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের শীর্ষ স্থানে রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী আর্থনৈতিক ভিত্তি আছে এবং আরও অবাক করা তথ্য হচ্ছে এই যে, দেশটি একটানা ২১ বছর ধরে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই সাফল্য বিশ্বের সকল উন্নত দেশের মধ্যে একমাত্র। পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ার এত বড় সাফল্য অর্জনের পিছনে অবশ্যই কিছু ভাগ্যপ্রসূত উপাদান আছে। যেমন, দেশটির ভূখন্ড অনেক বড়, প্রাকৃতিক সম্পদও তাই অনেক বেশি। পাশাপাশি বড় গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে এ দেশের সমাজিক ব্যবস্থা অত্যন্ত স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক, তাই অনেকেই মনে করে অস্ট্রেলিয়া একটি ভাগ্যবান দেশ।

অস্ট্রিলিয়ার এই অর্জনের পিছনে অর্থনীতি খুব গুরত্বপূর্ণ একটি বিষয় তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আর অর্থনীতির উন্নয়নের মূলে রয়েছে বিভিন্ন মেয়াদের সরকারের নেয়া সফল আর্থিক সংস্কার। এসব সংস্কার বিশ্ব অর্থনীতি ও বাইরের চাপ মোকাবিলায় দেশের সামর্থ্যকে ক্রমাগত শক্তিশালী একটি ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ফলে সফল অর্থনৈতিক সংস্কার অস্ট্রেলিয়াকে একটি সমৃদ্ধ ও সুখের ভিত্তি রচনা করে দিয়েছে। প্রথম দিকে অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব বাজারে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার সক্ষমতা বাড়াতে শুল্ক হ্রাস বা মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নেয়। যা পরবর্তিতে অত্যন্ত কার্যকর একটি সিদ্ধান্ত প্রমাণিত হয়। বলা হয়ে থাকে গত ৭০ দশকের আগ পর্যন্ত, শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে অস্ট্রেলিয়া অর্থনীতির প্রধান নির্ভরতা ছিল খনি এবং খনিজ জাতীয় শিল্প। এই সময় পর্যন্ত যার শুল্ক হার ছিল অত্যধিক বেশি। ২০ শতাব্দীর ৮০ দশকে এসে শুল্ক হ্রাস করার উদ্দ্যোগ নেয়া হয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে শুল্ক মওকুফ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতি ও অর্থনীতির জন্য একটি ব্যপক ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় পরিণত হয়। এরপর থেকে মূলত ১৯৯৫ ও ২০০৬ সালের দিকে এসে অস্ট্রেলিয়ার শুল্কনীতি অধিক সুসংহত হয়ে ওঠে। বর্তমানে এ দেশের শুল্ক খুব কম। এ হার ০ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে।

এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় মুদ্রার ভাসমান বিনিময় নীতি মেনে চলে। যাতে বর্হিবিশ্বের যে কোনো আকস্মিক অর্থনৈতিক চাপ বা এর প্রভাব মোকাবেলা করা যায় এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা যায়। মূলত এ নীতি ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বরে কার্যকর হয়। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মুদ্রা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারের পূঁজি বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আরেকটি তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অবসর ভাতা বা বার্ধক্যবিমা। অস্ট্রেলিয়ায় সুপার পেনশন পরিকল্পনা রয়েছে। এতে আমানতের হার বাড়াতে পারে। এ সুপার পেশন পরিকল্পনা সরকারের উদ্যোগে চালু হয়, বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান তা পরিচালনা করে, এর উদ্দেশ্য হল অবসর ব্যক্তিদের জন্য অবসরভাতা দেয়া। শিল্প প্রতিষ্ঠানের অর্জিত মুনাফার একটি অংশ সকল কর্মীদের জন্য এই অবসর ভাতার ফি হিসেবে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। বর্তমানে এ ফি দেয়ার হার হল ৯ শতাংশ। ২০১৩ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ হার ক্রমাগতভাবে ১২ শতাংশে উন্নীত হবে। এই ভাতা শুধুমাত্র কর্মীর অবসর, মৃত্যু বা শারিরিক অসচ্ছলতার সময় তুলতে পারবে। এটি সত্যিকার অর্থেই একটি মহত্ এবং একাধারে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা যা ভাগ্যবান খেতাব অর্জনের খুব বড় ভূমিকা পালন করেছে। গেল বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে এই ব্যবস্থা শিল্প প্রতিষ্ঠান, সরকার ও ব্যাংকের জন্য জরুরী অর্থ প্রদান করেছে।

এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় এক ধরনের কর আছে, এ করের নাম পণ্য ও শ্রম কর। এই কর কার্যকর হওয়ার পর শিল্প প্রতিষ্ঠানের চাপ অনেক কমেছে। এ কর অন্যান্য দেশের মূল্য সংযোজন করের মত ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে ফেডারেল সরকার উদ্বৃত্ত বজায় রাখতে এবং বাস্তাবয়ন করতে পেরেছে। এটাও সমৃদ্ধ ও কল্যাণকর সমাজের ভিত্তি স্থাপনে সহায়তা করেছে। ২০১২ থেকে ২০১৩ সালে সরকারের উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ১.৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়া অস্ট্রেলীয় ডলার। যদিও তা নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে কম, তবে তা গত আর্থিক বর্ষে ৪৪.৪ বিলিয়ন বাস্তবায়ন অস্ট্রেলিয়ার মুদ্রা ঘাটতির তুলনায় বিরাট অগ্রগতি হিসেবে বলা হয়ে থাকে। আর এটা হল গত অর্ধ শতাব্দীতে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সরকারের সবচেয়ে বেশি উদ্বৃত্ত আর এটা লেবার পার্টি ক্ষমতাসীন হওয়ার ২৩ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত এই উদ্বৃত্ত বাস্তবায়নে সক্ষম হয়।

উদ্বৃত্ত বাস্তাবায়নের জন্য সরকার সত্যি অনেক কার্যকর উদ্দ্যোগ নিয়েছে। সরকারী বিভাগে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কর্মীদের সংখ্যা ছাঁটাই করেছে, তাতে সরকারের ব্যয় কমেছে, প্রতিরক্ষা বাজেটও কমেছে। তাছাড়া উদ্বৃত্ত সামাজিক কল্যাণ উন্নয়নের জন্য বড় ভূমিকা পালন করে। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা পরিপ্রেক্ষিতে তা নিজ দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্যও অনেক সহায়তা করছে।

আরেকটি ব্যবস্থা হচ্ছে যোগ্য অভিবাসীদের আকর্ষণ করা, যাতে দেশের শ্রমশক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়। অন্যদিকে আর্থিক ক্ষেত্রেও বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে, যাতে অর্থনীতির উন্নয়ন আরো দ্রুত হতে পারে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার বেকারত্বের হার প্রায় ৫.৫ শতাংশ। তা অর্থনীতি সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার সদস্য দেশের মধ্যে সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ের। আর এ দেশে প্রতি ঘন্টার নিম্নতম বেতন অস্ট্রেলিয়া ১৬ ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুণ। বিশ্বের তিনটি বৃহত্তম ঋণমান নির্ধারণ সংস্থা অস্ট্রেলিয়াকে AAA পর্যায়ের দেশ হিসেবে নির্ধারণ করেছে। বিশ্বে কেবল ৮টি দেশ এ মান পেয়েছে। বিশ্ব আর্থিক সংকটের সময় অস্ট্রেলিয়ার সব বড় ব্যাংক নিরাপদ এবং এতে কোনোভাবে প্রভাবিত হয়নি। এ দেশে প্রচুর খনি সম্পদ আছে। উন্নয়নশীল দেশ, বিশেষ করে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের জ্বালানী ক্ষেত্রের বড় চাহিদা অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির সমৃদ্ধ ও উন্নয়নের জন্যও খুব সহায়ক হবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক