Web bengali.cri.cn   
বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত মজুরি পাচ্ছেন না পোশাক শ্রমিকেরা
  2013-11-29 14:43:02  cri

বাংলাদেশে পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে কয়েকজন পোশাক শ্রমিকের সাথে কথা বলতে গেলে সবার প্রথমে তাদের যে অভিযোগের কথা শোনা যায় তা হলো বেশি শ্রম দিয়েও কাঙ্ক্ষিত মজুরি তাঁরা পাচ্ছেন না।

একজন শ্রমিক বলেন, 'বেতন বাড়ায়না। যেই কাজ করি ওই কাজের বেতন পাইতেছিনা। ওভারটাইমও পাইতেছিনা।'

আরেকজন বলেন, 'বেতন পাই মাত্র পাঁচ-ছয় হাজার টাকা। ওইডাতে কি হয়? ঘরভাড়া তিন হাজার টাকা। আমাদের খাওনের খরচইতো হয়না'।

পোশাক শ্রমিকরা আরো জানান, কারখানায় তাঁরা একধরনের ভয় নিয়েই কাজ করেন। কর্মপরিবেশ নিয়ে যদি কোনো অভিযোগ তাঁদের থাকেও চাকরি হারানোর ভয়ে তাঁরা বলেন না। একজন শ্রমিক যেমন বলছিলে, 'কি আর কমু। কাজ না পারলেতো বকাবকি করেই, মাইরধোরও করে। আচার-ব্যবহার অনেক খারাপ করে'।

বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হলেও দেশটির কারখানায় মজুরি কাঠামো ঠিকমতো অনুসরণ করা হয়না বলে অভিযোগ রয়েছে - এমন তথ্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকরা প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম মজুরি পান। এবং দেশটিতে গত ৩০ বছরে মাত্র ৩ বার গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, পোশাক খাতের মাধ্যমে বাংলাদেশ গত দুই দশকে 'তুলনামূলকভাবে উচ্চ হারে' অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে, কিন্তু এই খাত অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকায় কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নয়ন ঘটেনি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতানউদ্দিন আহমেদ বলেন, শিল্প পরিচালনার জন্য যে ধরনের আইন প্রয়োজন তা বাড়েনি বিধায় পোশাক খাতে একধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, 'ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত একটি শিল্প, এবং খুব দ্রুত বর্ধনশীল একটি শিল্পকে ঠিকমত পরিচালনা করার জন্য যে আইনী কাঠামো দরকার ছিল, যে কর্তৃপক্ষগুলো তৈরি করার দরকার ছিল সেটি হয়নি। প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিকের একটি শিল্পকে বিভিন্নভাবে, যেমন শ্রমিকদের কল্যাণ, পরিচালনা, শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থাগুলো গড়ে উঠা উচিত ছিল সেগুলোও হয়নি।'

এমন এক সময় আইএলও এই প্রতিবেদন প্রকাশ করল যখন ন্যূনতম মজুরি নিয়ে পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করছে। কয়েকদিন ধরেই আশুলিয়া ও গাজীপুরে সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটছে। একইসাথে কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখে রয়েছে বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে সৈয়দ সুলতানউদ্দিন আহমেদ বলেন, তাজরিন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজার ঘটনার পর পোশাক শিল্পে স্থিতিশীলতা আনতে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল তা হয়নি।

আহমেদ বলেন, 'একটি ভবনে দশ হাজার শ্রমিক প্রতিদিন বারো ঘন্টা অবস্থান করলে সেখানে যে ব্যবস্থাগুলো থাকা দরকার সেটিও হয়নি। এখনও শ্রমিকদের খাবারসহ ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরির জন্যে সংগ্রাম করতে হচ্ছে।'

আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ছয় মাসে সরকার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলেও পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ এখনো একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবেই রয়ে গেছে।

পাশাপাশি শ্রমিকদের মজুরি নীতিমালা শক্তিশালী করে তা যথাযথভাবে অনুসরণ এবং নূন্যতম মজুরি ও মজুরি বোর্ডের সুপারিশ ঠিকমতো বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না - তা পর্যাবেক্ষণও জরুরি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক