Web bengali.cri.cn   
এশীয় দেশের স্কুলের বিনামূল্যে খাবারের অবস্থা
  2013-11-18 18:19:21  cri

 


এছাড়া আরো কিছু কিছু দেশ আছে যেখানে বিনামূল্যে খাবার বিতরণকে স্কুলে শিশুদের ভর্তির হার বৃদ্ধি করা এবং সমাজিক বৈষম্য দূর করার একটি প্রকল্প হিসেবে দেখছে। তাহলে বিভিন্ন দেশের স্কুলে শিশু বা শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা বেতনে খাবারের অবস্থা কেমন? তা কতটুকু সন্তোষজনক, নাকি আরো উন্নত করা প্রয়োজন, বিভিন্ন দেশের এ খাবারের মান ও বৈশিষ্টতাও নিশ্চয়ই ভিন্ন ভিন্ন হবে।

প্রথমে আমরা দৃষ্টি ফেরাবো জাপানের দিকে। জাপানে স্কুলে বিনামূল্যে খাবারের প্রদানের ইতিহাস ১৮৮৯ সাল থেকে শুরু হয়। সে সময়ে অতি দরিদ্র শিশু বা যাদের সামর্থ নেই এমন শিশুদের বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করা হতো। তবে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় খাদ্যাভাবের কারণে এ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সাহায্যে জাপান পুনরায় এ ব্যবস্থা চালু করে। তবে তখনও প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৫০ ইয়েন ফি দিতে হতো, কিন্তু যারা কোনোভাবেই ফি দিতে পারতো না এমন শিশুদেরকে বিনামূল্যেই খাবার দেওয়া হতো। মূলত ১৯৫৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে জাপানের সকল স্কুলে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা শুরু করে। এবং সে বছরই জাপানে "স্কুলে খাবার দেয়ার আইন" গৃহিত হয়।

জাপানে স্কুলে সরবরাহকৃত খাবার তিন রকমের। প্রধান খাবার (যার মধ্যে ভাত, শাকসবজি ও দুধ ইত্যাদি খাদ্য), অতিরিক্ত খাবার (যার মধ্যে দুধ এবং বিস্কুট ইত্যাদি) এবং দুধ। জাপানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত অনুযায়ী, ২০১০ সালে জাপানে ৩২০৫১টি স্কুলে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করা হয়, যা জাপানের মোট স্কুলের ৯৪.২ শতাংশ। এরমধ্যে প্রধান খাবার সরবরাহ করা হয় এমন প্রাথমিক স্কুলের হার ৯৮.১ শতাংশ, মাধ্যমিক স্কুলের হার ৭৬.২ শতাংশ। এবার তাহলে স্কুলের বিনামূল্যে প্রদান করা খাবারের মেন্যুর দিকে দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে। প্রধান খাবারের মেন্যুতে সাধারণত : রুটি, ভাত, নুডলস, মাছ, ডিম, মাংস ও শাকসবজি থাকে, এ ছাড়া আরো আছে দুধ, ও জুসসহ পানীয় এবং আছে ফল ও বিস্কুট। খাদ্য তালিকায় দুধের বিষয়টি বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতেই হয়। "শিশুর সুস্বাস্থ্য, মেধা ও শক্তির বিকাশ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের গুণগতমান উন্নয়নের" লক্ষ্যে জাপান প্রতি ৫ বছর পর পর একবার স্কুলে দুধ সরবরাহের মোট পরিমানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে থাকে। সর্বশেষ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০১০ সালে। এতে বলা হয়, কিংডারগার্ডেন ও মাধ্যমিক এবং প্রাথমিক স্কুলের উচিত প্রতি বছর ১৯৫ দিন শিশুদের জন্য দুধ সরবরাহ করা দেয়া। প্রতিদিন প্রায় ২'শ এম এল দুধ দিতে হয়।

শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাপান খাদ্য নিরাপত্তার ওপরও অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বর্তমানে জাপানের খাদ্য নিরাপত্তার মানদন্ড অনেক কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিশেষ করে স্কুলের জন্য সরবরাহকৃত খাদ্য বিশেষ ভাবে পরীক্ষা করে তারপর তা সরবরাহ করা হয়।

এখন আমরা দৃষ্টি ফেরাবো ভারতের দিকে। ভারতের "বিনামূল্যে মধ্যাহ্ন-খাবার" পরিকল্পনাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খাবার পরিকল্পনা হিসেবে বলা যায়। কেননা এই প্রকল্পে দেশের ১২.৬৫ লাখ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের ১২ কোটি শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ভারতে যে সব স্কুলে বিনামূল্যে মধ্যাহ্ন-খাবার দেয়, এসব স্কুল সরাসরি সরকারের আর্থিক সাহায্য পেয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রাইভেট বা ব্যক্তিগত স্কুল অন্তভূক্ত করা হয়নি। এ সব স্কুলে শিক্ষার্থীরা বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসে। ভারতের বিনামূল্যে মধ্যাহ্ন-খাবার বিতরণ পরিকল্পনাটি ১৯৯৫ সালের আগস্ট মাসে গৃহীত "প্রাথমিক শিক্ষা পুষ্টি পরিকল্পনা" প্রকল্পের অধীনে চালু করা হয়। তখন এর লক্ষ্য ছিল স্কুলে শিশু শিক্ষার্থী ভর্তি হার বৃদ্ধি করা এবং শিশুদের পুষ্টির মান উন্নয়ন করা। তখন এ পরিকল্পনার অধীনে কেবল দেশের ২৪০৮টি ব্লক অন্তর্ভূক্ত করে। এরপর ১৯৯৭ সালে সারা দেশকে এর আওতায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, সরকার প্রতিদিন প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিশুদের ১শ কিলোগ্রাম খাবার দেয়। আর প্রতি এক শ কিলোগ্রাম খাবারের জন্য ৫০ রুপির ভর্তুকি প্রদান করে। ২০০৬ সালের জুলাই ও ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে কিছুকিছু এলাকার মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকেও এ সুবিধার আওতায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

ভারতের বিনামূল্যে মধ্যাহ্ন-খাবার প্রকল্প জনপ্রিয় হওয়ার প্রেক্ষাপটে সত্যি দেশের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের পুষ্টিমানের উন্নতি হয়েছে, স্কুলে শিশুদের ভর্তি হওয়ার হারও বেড়েছে আগের থেকে অনেক। সকল শিশু, জাতি ও মর্যাদাগত বৈষম্য ভুলে একসাথে খাবার খায়, তা সামাজিক বিভেদ দূর করতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ছাড়া এই প্রকল্প নারীদের জন্যও আরো বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমরা জানি যে, ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা উন্নত নয়, খাদ্য মজুদের প্রযুক্তিও তত উন্নত মানের নয়। তাই বিনামূল্যে মধ্যাহ্ন-খাবরের সাথে পুষ্টিগত মান, সুস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার সুচকে এখনো কিছুটা সমস্যা রয়েছে। কিন্তু আমরা আশা করি সরকার আরো বেশি শিশুকে সাহায্য করার পাশাপাশারি এ খাবারের মান আরো উন্নয়ন করবে। যাতে শিশুদের পুষ্টি ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা যায়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক